ফিজ তাণ্ডব: টাইগারদের ১৮২ রানের টার্গেট দিয়েছে আইরিশরা

 

ঢাকা : ফিজ তাণ্ডবে ১৮১ রানেই গুটিয়ে গেল অইরিশদের ইনিংস। ফলে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়িয়েছে ১৮২ রান। ৯ ওভার বল করে মাত্র ২৩ রানের বিনিময়ে একাই গুরুত্বপূর্ণ ৪টি উইকেট পকেটে পুরেছেন কাটার মাষ্টার।

এমন ম্যাচে অভিষেক ওয়ানডেতেই চমক দেখিয়েছেন সানজামুল। প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে এড জয়েসকে হাফসেঞ্চুরি বঞ্চিত করেছেন। ব্যক্তিগত ৪৬ রানে লং অনে তামিম ইকবালকে ক্যাচ দেন আয়ারল্যান্ডের এ ব্যাটসম্যান। এরপর ৪৪তম ওভারেও ভেলকি দেখান তিনি। ব্যারি ম্যাকার্থিকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে ১২ রানে তাকে সাজঘরের পথ ধরান সানজামুল। বিপর্যস্ত সেই আইরিশদের শেষ দিকে একাই টেনে নিচ্ছিলেন জর্জ ডকরেল।। কিন্তু ৪৭তম ওভারে তাকেও বিদায় করেন অধিনায়ক মাশরাফি। মুশফিকের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২৫ রান করেন তিনি। একইওভারের চতুর্থ বলে সেই মুশফিকের হাতেই শেষ ব্যাটসম্যান পিটার চেজকে তালুবন্দী করান মাশরাফি। আয়ারল্যান্ড শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে যায় ১৮১ রানে।

উল্লেখ্য, ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে বৃষ্টির কারণে আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি। দ্বিতীয় ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হার। এই হতাশা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে শুক্রবার মাঠে নামে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ছন্দে ফেরার ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।

ফিল্ডিংয়ে নেমে শুরুতেই সফলতা পায় বাংলাদেশ। ওপেনার পল স্টারলিংয়ে হারিয়ে শুরুতেই হোঁচট খায় আয়ারল্যান্ড। দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড ও এড জয়সে মিলে দারুণ জুটি গড়ে স্বাগতিকদের বিপদমুক্ত করেন। তবে মোসাদ্দেক হোসেন বোলিংয়ে এসেই পোর্টারফিল্ডকে আউট করে বাংলাদেশকে শিবিরকে ফের আনন্দে ভাসান। এরপর বিপজ্জনক হয়ে ওঠার আগেই অ্যান্ড্র ব্যালব্রিনকে আউট করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে এনে দেন সাকিব। তবে ভড়কে যায়নি আয়ারল্যান্ডও। জয়সে ও নেইল ও’ব্রায়েনের মধ্যকার দারুণ জুটিতে বিপদ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে স্বাগতিকরা। তবে মোস্তাফিজ আক্রমণে এসে এই বিপজ্জনক জুটি ভাঙলে স্বস্তি ফেরে টাইগার শিবিরে। পরের ওভারে অভিষিক্ত সানজামুলের আঘাতে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় টাইগাররা।

বাংলাদেশের তৃতীয় ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমান তুলে নেন স্টারলিংয়ের উইকেট।

দ্বিতীয় স্পেলেও তিনি ফেরান আয়ারল্যান্ডের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান নিল ও’ব্রায়েনকে (৩০)।

থার্ড ম্যানে তামিম ইকবালের সহজ ক্যাচ হন আইরিশ ব্যাটসম্যান। পরের বলে কেভিন ও’ব্রায়েনের উইকেটটি পেতে পারতেন মোস্তাফিজ। কয়েক ইঞ্চির জন্যে সাব্বির রহমান ক্যাচটি লুফে নিতে পারেননি। বাংলাদেশ আউটের আবেদন করলে টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বল মাটিতে লেগে সাব্বিরের হাতে গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত ৩১.৪ ওভারে আর ব্যর্থ হননি। কেভিনকে তালুবন্দি করেন মোসাদ্দেক হোসেন। কেভিন বিদায় নেন ১০ রানে। এক ওভার বিরতি দিয়ে ফের উইকেট নেন মোস্তাফিজুর। বিতর্কিত ভাবে দেওয়া এই আউটে ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহিম। ৪১ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৬৩ রান আয়ারল্যান্ডের।

এই সিরিজে বাকিরা সাফল্য পেলেও নিষ্প্রভ ছিলেন সাকিব। কিন্ত এই ম্যাচ দিয়ে ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথম উইকেট পান সাকিব আল হাসান। নিজের দ্বিতীয় ওভারে অ্যান্ডি ব্যালবার্নিকে (১২) বোল্ড করেন তিনি। মোসাদ্দেক হোসেন তার আগে নেন আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় উইকেট। আগের ওভারেই উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডকে শর্ট এক্সট্রা কভারে জীবন দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। সহজ ক্যাচ ছেড়ে দিয়ে মাশরাফি মুর্তজাকে উইকেটবঞ্চিত করার পর নিজেই সেই আক্ষেপ কাটান তিনি। ক্রিজে শক্তিশালী হয়ে ওঠা আয়ারল্যান্ড অধিনায়ককে ফিরতি ক্যাচ বানিয়েছেন মোসাদ্দেক। ২৫ বলে ৩ চার ও ১ ছয়ে ২২ রানে আউট হন পোর্টারফিল্ড।

এ ম্যাচে একাদশ থেকে বাদ পড়লেন অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। তার জায়গায় অভিষেক হয়েছে আরেক অলরাউন্ডার সানজামুল ইসলামের। ১৭ বছর বয়সী সানজামুল বাঁহাতি স্পিনার। পাশাপাশি ভালো ব্যাটও করেন। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে সানজামুলের ব্যাটিং গড় ২৩.৩৬। আর ২৮.৫৪ গড়ে উইকেট নেন ২১২টি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ব্যাটিং গড় ১৬.৮৬। আর ২৭.৪৬ গড়ে ৬৪ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৮০টি।

অন্যদিকে ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা এড জয়সেকে জায়গা দিতে বাদ পড়েছেন আইরিশ তারকা সিমি সিং।

বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), মোসাদ্দেক হোসেন, মুশফিকুর রহিম (উইকেটকিপার), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সানজামুল ইসলাম, মাশরাফি বিন মর্তুজা, রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।

আয়ারল্যান্ড একাদশ: উইলিয়াম পোর্টারফিল্ড (অধিনায়ক), পল স্টারলিং, নিল ও’ব্রায়েন (উইকেট রক্ষক), অ্যান্ড্রি বালবির্নি, কেভিন ও’ব্রায়েন, গ্যারি উইলসন, এড জয়েস, জর্জ ডকরেল, ব্যারি ম্যাকার্থি, টিম মুরতাঘ ও পিটার চেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *