সাফাত ও সাদমানের স্বীকারোক্তি : বিদেশি মদ পান করিয়ে দুই তরুণীকে ধর্ষণ

 

বাংলার দর্পন :

বনানীর ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে বিদেশি মদ পান করিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেন সাফাত ও তার বন্ধু নাঈম।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ধর্ষণ মামলার দুই আসামি সাফাত ও সাদমান এ তথ্য দেন।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ওই দিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, হোটেলটির ৭০২ নম্বর স্যুটের (বিলাসবহুল কক্ষ) বেডরুমে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত এক তরুণীকে এবং ড্রয়িংরুমে নাঈম আশরাফ (প্রকৃত নাম আবদুল হালিম) অপর তরুণীকে ধর্ষণ করেন।

ঘটনার সময় ওই স্যুটেই অবস্থান করছিলেন তাদের অপর বন্ধু ও মামলার আসামি সাদমান শফিক। তবে তিনি ধর্ষণ করেননি। ধর্ষণের পর সাফাতের নির্দেশে তিনি (সাদমান শফিক) ওই দুই তরুণীকে জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলায় রিমান্ড শেষে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সাফাত ও সাদমান।

ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আহসান হাবীবের আদালতে আসামি সাফাত এবং ঢাকা মহানগর হাকিম সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরীর আদালতে আসামি সাদমান স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এদিকে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার অপর আসামি ধর্ষক নাঈমের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকা মহানগর হাকিম এসএম মাসুদ জামান।

জবানবন্দিতে সাফাত ও সাদমান একই ধরনের তথ্য দিয়ে জবানবন্দিতে বলেন, ২৮ মার্চ জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কথা বলে ওই দুই তরুণীকে ‘দ্য রেইনট্রি’ হোটেলে নিয়ে আসা হয়।

উপর্যুপরি মদ খাওয়ানোর পর ওই দুই তরুণীকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন তারা। তবে ওই তরুণীদের আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ধর্ষণ করা হয়নি এবং ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়নি বলেও জানান তারা।

জবানবন্দিতে সাফাত জানান, ধর্ষণের ঘটনার প্রায় দু’সপ্তাহ আগে বন্ধু সাদমানের মাধ্যমে রাজধানীর একটি হোটেলে ওই দুই তরুণীর সঙ্গে আসামিদের পরিচয় হয়। সেই সুবাদে মাঝেমধ্যে মোবাইলে কথোপকথন হতো তাদের।

ঘটনার দিন অনুষ্ঠানে ওই দুই তরুণীকে আসতে আমন্ত্রণও জানান সাদমান। অনুষ্ঠানে আসার পর সুইমিংপুলে গোসল করেন তারা (দুই তরুণী)। এরপর দ্য রেইনট্রি হোটেলের সেই বিলাসবহুল রুমে তিনি (সাফাত) ও নাঈম ওই দুই তরুণীকে নিয়ে যান।

কিছুক্ষণ পর একসঙ্গে পাঁচজন (দুই তরুণী, সাফাত, নাঈম ও সাদমান) মদ পান করেন। তরুণীদের জোর করে মদ খাওয়ানো হয়। এতে তরুণীরা বেসামাল হয়ে পড়লে তাদের একজনকে বেডরুমে ও অপরজনকে ড্রয়িংরুমে ধর্ষণ করেন তিনি (সাফাত) ও নাঈম। সেখানে উপস্থিত ধর্ষণ মামলার অপর আসামি সাদমান তা উপভোগ করেন।

এর আগে ১২ মে সাফাতের ৬ দিনের ও সাদমানের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সাফাতের রিমান্ডের আরও একদিন বাকি থাকলেও তিনি রাজি হওয়ায় একই দিন তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে আদালতে হাজির করা হয়। ১১ মে সিলেট থেকে তাদের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।

আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রথমে থানা পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করে। এমনকি ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন আসামি ও আসামির পরিবার।

ঘটনার ৪০ দিন পর ওই দুই ছাত্রী গত ৬ মে সন্ধ্যায় বনানী থানায় ধর্ষণের অভিযোগে পাঁচজনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সাফাত, নাঈম ও সাদমান ছাড়াও সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদকে আসামি করা হয়।

সাফাতের গাড়িচালক ও দেহরক্ষী বর্তমানে পুলিশের রিমান্ডে আছেন। সাফাত ও সাদমানের গ্রেফতারের ৪ দিন পর ১৫ মে রাজধানীর নবাবপুর ও গুলশান-১ থেকে র্যাব ও পুলিশের পৃথক অভিযানে গ্রেফতার করা হয় তাদের।

এদিকে বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকা থেকে নাঈমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিএমপির ওমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পুলিশ পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। আদালত শুনানি শেষে আসামির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালত সূত্র জানায়, এরও আগে ধর্ষণের শিকার দুই ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা আদালতে বর্ণনা দিয়েছেন। তবে সেখানে তারা অস্ত্রের মুখে ধর্ষণের কথা বলেছেন। এছাড়া ধর্ষণের সময় ভিডিও চিত্র ধারণের কথাও জানিয়েছিলেন তারা।

ওই ঘটনা কাউকে জানালে আসামিরা ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেন বলেও জানিয়েছিলেন ওই দুই তরুণী। আসামিদের কথা মতো না চললে ওই দুই তরুণীকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদনের পর আদালত থানা পুলিশকে ধর্ষণের শিকার ওই দুই ছাত্রীকে নিরাপত্তা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *