প্রিয় সোনাগাজীবাসী,
সালাম নিবেন, অতিতের স্মৃতি মনে পড়ায় অাপনাদের অবগতির জন্য কিছু কথা বলতে চাই। অামি গোলাম কিবরিয়া, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল অাফছার এর ছোট ভাই, ইতালী প্রবাসী। সেই ১৯৭১ এর ১১ডিসেম্বর সোনাগাজী থানার ভেতরে প্রকাশ্য দিবালোকে কতিপয় নরপশু অামার ভাই নুরুল অাফছার কে গুলিকরে হত্যা করেছিল। তারপর লাশ গুম করেছিল। সোনাগাজী বাসীর কাছে অামার প্রশ্ন, কি অপরাধ ছিল অামার ভাইয়ের? কেন এভাবে হত্যা করা হল? কেন একটি সদ্য স্বাধীন দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোদ্ধারা হত্যা করলো?
যদি পাক হানাদার বাহিনী অামার ভাইকে হত্যা করতো তাহলে এত কষ্ট পেতাম না। যারা প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করেছে তারা অামার ভাইয়ের পরম বন্ধু ছিল। আমার ভাইকে হত্যা করার তিনদিন পুৃৃর্বে তারা সকলে অামাদের বাড়ীতে আমার মায়ের হাতের রান্না খেয়েছিল। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছিলাম কখন এমন একটি সুযোগ পাবো, খুনিদেরকে আইনের কাঠগড়ায় দাড় করাবো। সাংবাদিক সৈয়দ মনির অাহমদ সম্পাদিত বাংলার দর্পন ডটকম এ প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে অবশেষে একটি সুযোগ সৃষ্টি হল। ২২ মার্চ ২০১৭ তারিখে মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর স্বরনাপন্ন হলে তারই পরামর্শে ফেনীর বিজ্ঞ অাদালতে ১৩এপ্রিল ১৭ তারিখে মামলা রুজু করি (পিটিশন নং৫৩/১৭)। এই দিনটি অামার জীবনে স্মরনীয় দিন হয়ে থাকবে।
প্রিয় ভাইয়েরা, গতরাতে পুর্বের দুটি ঘটনা অামার মনে পড়ায় অাপনাদেরকে জানাতে এই খোলাচিঠি লেখার উদ্যোগ নিয়েছি। ৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক মধ্যরাতে আমার মা-বাবা চিৎকার করে কান্নাকাটি করেছিলেন, সকালে অামার বাবা অামার ভগ্নিপতি কে সাথে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোশারফ হোসেনের কাছে ছুটে গেলাম। মোশারফ ভাই তখন গনুমিয়ার বাড়ীতে থাকতেন। সকাল বেলা ওই বাড়ীর অনেক লোকজন ছিল। অামার বাবা সবার সম্মুখে মোশারফ ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন” মোশারফ অামি তোদের কাছে কিছু চাইনা, অামার ছেলের লাশটা ফেরত দে ” সেই দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকে এখনো জীবিত অাছেন। আমি ১১ বছরের কিশোর নিঃস্ব হয়ে শুধু দৃশ্যটা দেখেছি। দেখেছি পুত্রহারা পিতার অাত্মনাদ।
এর অনেক দিন পর,
অামার বড় ভাই নুরুল অালম সেলিম একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে সোনাগাজী বাসস্ট্যান্ডে গাড়ী থেকে নামলেন, এমন সময় মুক্তিযোদ্ধা অাবুল কাশেম কাজি হটাৎ আমার ভাইকে ধমক দিয়ে বললো, “এই তুই অাফছার এর ভাই? তোর ভাইকে মেরে ফেলেছি, কিছুই করতে পারিস নাই, যদি তোর ভাইয়ের ব্যাপারে কিছু করার চেষ্টা করছ তোকেও মেরে ফেলবো” ৭২ পরবর্তি সময়ে এভাবে প্রতিনিয়ত অামার পরিবার হুমকি ধমকির শিকার হয়েছে। এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি। আজকে যখন অামরা অাইনের অাশ্রয় নিয়েছি, ঠিক তখনি নানাভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেই দিন অামার ভাইকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনা যারা দেখেছেন, দয়াকরে সত্য প্রকাশ করুন, সত্য সাক্ষ্য দিন, অন্যথায় মনে রাখবেন অাল্লাহর অাদালতে আপনাদেরকে জবাব দিতে হবে। সোনাগাজী অঞ্চলের মানুষ জানে, কারা রাজাকার ছিল, কারা রাজাকারদের রক্ষা করেছে, কারা রাজাকারদের রক্ষা করতে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে। আমরা অাদালতের অাশ্রয় নিয়েছি অাশাকরি অাদালতে প্রশানিত হবে খুনি কারা। পরিশেষে অাপনাদের সকলের সহযোগীতা কামনা করছি –
ধন্যবাদান্তে
গোলাম কিবরিয়া বাবুল।
10 may 2017.