মোঃ জহিরুল ইসলাম রাজু : ফেনী জেলার ফুলগাজীতে প্রশাসনের অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই একের পর এক গড়ে উঠছে ইটভাটা। এতে ফসলি জমি ও জীব বৈচিত্র ধ্বংসের পাশাপাশি পরিবেশ দূষিত আর স্বাস্থ্যহানীর আশংকা রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, ফুলগাজী উপজেলায় প্রায় ২২টি ইটভাটা রয়েছে । ফেনী ও পরশুরামে ৫ কিলোমিটার দূরত্বে ১০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি নির্মানাধীন রয়েছে হাসানপুর থেকে আনন্দপুর পর্যন্ত। নতুন মুন্সীর হাটে ২টি, ফুলগাজী-বক্সমাহমুদ সড়কে ৪টি, গজারিয়া থেকে আমজাদ হাট পর্যন্ত ৩টি, ফুলগাজীর শেষ সীমানায় সমিতি রোডে ১টি ও জিএমহাটে ১টি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ৯৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের একটি উপজেলায় ২২টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার আশপাশেই রয়েছে ঘর-বাড়ি, স্কুল-মাদরাসা। বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় নষ্ট হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। ইটভাটাগুলো বেশিরভাগ গ্রামে হওয়ায় কয়লা বোঝাই ১৫-২০টন ওজনের ট্রাক সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এতে করে কাঁচা-পাকা সড়কগুলো ভেঙ্গে-দেবে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। হাসানপুর-কাতালিয়া সড়ক, আনন্দপুর-নুরপুর সড়ক, নোয়াপুর-বদরপুর শেখ নুরুল্লা চৌধুরী সড়ক, জামমুড়া সড়ক যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।
এছাড়া গাছ-পালা, উঠতি ফসল ও জমির উর্বরা শক্তির ব্যাপক ক্ষতিও হচ্ছে। ইট তৈরির কাজে ব্যবহারের জন্য চাষযোগ্য জমির টপ সয়েল কেটে নিচ্ছে। এতে করে অর্থকারী ফসল, খাদ্য শস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা যেমন হ্রাস, পাচ্ছে তেমনি পরিবেশ ধ্বংস করে স্বাস্থ্য খাতের ক্ষতি করছে।
স্থানীয়রা জানান, কয়লা ব্যবহার করার কথা থাকলেও, দীর্ঘদিন ধরে ইট ভাটাগুলোতে অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এই সবকিছুই হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়। ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস, ধোঁয়া ও ধুলো বালি পরিবেশ দূষণ করে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে। কিভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইটভাটার অনুমোদন দেন এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইটভাটার মালিক জানান, বর্তমানে ইটভাটা ব্যবসায় কোটি টাকা মুনাফা হয় সহজে পুজি উঠে আসে। সহজ ও স্বল্প মূল্যে কয়লা, মাটি ও শ্রমিক পাওয়া যায়। অধিক মূল্যে ইট বিক্রয় করা হয়। তাই প্রতিনিয়ত এ ব্যবসায় গড়ে উঠেছে।
ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা সামছুদ্দিন ইলিয়াছ জানান, ইট ভাটার ধূলি কণা, বিষাক্ত গ্যাস, জনসাধারণের বঙ্কাইটিস, হাপানী, হার্টের রোগ, চর্ম রোগ হয়। শিশুদের নিমোনিয়া, বঙ্কাইটিস, এলার্জি নানা ধরনের মারাত্মক রোগ হয়। ইটভাটা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকী।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম জানান, ইটভাটা কৃষির জন্য হুমকি। প্রথমত, শতশত একর জমির নষ্ট করে ফেলছে। ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ধানের ফুলে লাগলে তাতে আর ফলন হয় না। ফলগাছে এই ধূলি কণাও বিষাক্ত গ্যাসের কারনে ফুল ও ফলের উৎপাদন ব্যহত হয়।