সোনাগাজীতে তরমুজের বাম্পার ফলন

প্রায় চারশ হেক্টর জমিতে তরমুজের আবাদ


সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী :

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরাঞ্চলে এবারো বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ হয়েছে। গত তিন বছর তরমুজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় এবার বেড়েছে তরমুজের আবাদ। এখানকার উৎপাদিত মিষ্টি তরমুজ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলার ভোক্তাদের কাছে।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে নোয়াখালীর সুবর্ণচর থেকে আগত কৃষক সিরাজুল হক পরীক্ষামূলকভাবে উপজেলার চর ছান্দিয়া ও চরদরবেশ ইউনিয়নে তরমুজ চাষ করেন। ওই বছরে তার সফলতা দেখে ২০১৯ সালে ৮ থেকে ১০ জন কৃষক তাদের জমিতে রবি মৌসুমে তরমুজ চাষ করেন । তারা সকলে আর্থিকভাবে লাভবান হন।
বেশি ফলন ও ভালো দাম পেয়ে তরমুজ চাষিরা ২০২০ সালে উপকূলীয় এলাকায় ১০৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেন। তাদের দেখে ২০২১ সালে ৩১৭ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়।২০২২ সালে ৩৪৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়।

চলতি মৌসুমে সোনাগাজীর বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চলে ভিক্টর সুগার, ওশেন সুগার ব্লাক বেরি ও দেশীয় জাতের চারশত হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়। অনাবাদি জমি আবাদ হওয়ায় কৃষকের ন্যায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন ভুমি মালিকগণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনাগাজীতে অনাবাদি থাকা বিস্তৃর্ণ ভূমি এখন তরমুজ চাষের ফলে সবুজ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। উপজেলার চরদরবেশ, চরছান্দিয়া, আমিরাবাদ ও সোনাগাজী সদর ইউনিয়নে যতদূর চোখ যাবে ততটুকুতেই দেখা মিলবে তরমুজের আবাদ। নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও কোম্পানীগঞ্জ থেকে তরমুজ চাষ করতে আসা কৃষকরা ক্ষেতের মাঝেই ‘টংঘর’ স্থাপন করে থাকা-খাওয়া আর বিশ্রাম করছেন। রৌদ্রের উত্তাপ এড়িয়ে কৃষকরা এখন তরমুজ ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছে। পরিবেশ ভালো হওয়ায় এরই মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেতে তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। ।
আইয়ুব আলী নামে এক কৃষক জানান, নোয়াখালীর চাষীদের দেখে স্থানীয়রাও গত কয়েকবছর তরমুজ চাষাবাদ করেছেন । অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ায় কৃষকরা তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন। তিনি আরো সরকারের সার্বিক সুবিধার পাশাপাশি আর্থিক প্রেণোদনা বা লোন সুবিধা পেলে কৃষকের আগ্রহ আরো বাড়বে।
তরমুজ চাষি সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি স্থানীয়দের থেকে ৫ মাসের জন্য প্রায় ১০০ একর জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করেছেন। প্রতি একরে উৎপাদন ও পরিচর্যা ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
প্রতি একরে ফলন থেকে তিনি দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা তার। তিনি জানান, তরমুজ চাষে ক্ষতির আশংকা নেই। কম সময়ে লাভসহ চালান ফেরত আসে। তাই তিনি প্রতিবছর স্থানীয়দের থেকে জমি লিজ নিয়ে তরমুজ চাষ করে আসছেন। তরমুজ বিক্রি শেষে তিনি আবার নিজ এলাকায় চলে যাবেন।
তরমুজ চাষী সাঈদ আনোয়ার জানান, ১৫ একর জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন । এখানে উৎপাদিত তরমুজের আকার, স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় কম সময়ে পাইকারদের আকৃষ্ট করা গেছে। তাছাড়া গত বছর সোনাগাজী-কোম্পানীগঞ্জ সড়কে সাহেবের হাট সেতু উদ্বোধনের পর নোয়াখালী ও ফেনীতে যাতায়াত সুবিধা সৃষ্টি হয়। এর ফলে সোনাগাজীর চরাঞ্চলে উৎপাদিত ফসলের বাজারজাত সহজ হয়ে ওঠায় পাইকারি ক্রেতাদের কাছে এখানকার তরমুজের চাহিদা বেড়ে গেছে। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে সোনাগাজী হতে সংগৃহীত তরমুজ সহজেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়া যায়।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান, চরাঞ্চলে তরমুজের ফলন ভালো হওয়ায় দিনদিন আবাদ বাড়ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় চারশ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এরই মধ্যে উৎপাদিত তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় আগামীতে আরো বেশি তরমুজ আবাদের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তিনি জানান, বাজারজাতকরণে সুবিধা ও কম সময়ে ভালো লাভ হওয়ায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে অনেক কৃষক ফেনীর সোনাগাজীতে তরমুজ চাষ করতে এসেছেন। চরদরবেশ ইউনিয়নের স্থানীয় কৃষকদের থেকে লিজ নেওয়া অন্তত দেড়শ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ করা হয়েছে। এরই মধ্যে গত সপ্তাহ থেকে আগাম জাতের তরমুজ বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য পাইকাররা তরমুজের ক্ষেত পরিদর্শন করে দরদাম করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, এবার সোনাগাজীতে ব্লাক জায়ান্ট, গেলারি, সুগার বেবি, ট্রপিক্যাল ড্রাগন, বঙ্গলিংক ও ভিক্টর সুগার জাতের তরমুজ বেশি চাষ হয়েছে। নিয়মিত তরমুজ ক্ষেত পরিদর্শন করে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, সোনাগাজীতে তরমুজের আবাদ ও ফলন বাড়াতে কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন ও পরামর্শদানসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চালিয়ে আসছেন। এছাড়াও স্থানীয় কৃষকদেরকে আবাদে উৎসাহিত করতে তরমুজ চাষের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। সোনাগাজীতে প্রকল্পের আওতায় ২০ জন কৃষককে তরমুজ চাষের প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে। আশা করি প্রদর্শনীর উৎপাদন ও লাভ দেখে কৃষকরা তরমুজ চাষে আরো বেশি উদ্বুদ্ধ হবেন।

সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জহির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এখানকার আবহাওয়া তরমুজ সহ সকল প্রকার রবিশষ্য আবাদের জন্য উপযোগী । উপজেলা পরিষদ ও কৃষি দপ্তর থেকে রবিশষ্য ও তরমুজ চাষীদের সব ধরনের সহেযাগীতা এবং পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। চাষীদের সুবিধার্থে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। তাই সোনাগাজীতে তরমুজসহ সব ধরনের রবিশষ্যের আবাদ বেড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী সকল জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে চেষ্টা করছি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *