সৈয়দ মনির আহমদ:
ফেনী ২৫০ শয্যা আধুনিক জেনারেল হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলোতে ইনসিনেটর না থাকায় যত্রতত্র ফেলে রাখা হচ্ছে ক্লিনিকেল বর্জ্য।
ফেনীর সরকারি হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকের ক্লিনিকেল বর্জ্য নিয়মানুযায়ী অপসারণ ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশ দুষন ও মারাত্মক রোগজীবানু সৃষ্টি করছে।
জেলার সরকারি হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, বিভিন্ন পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, বেসরকারি হাসপাতাল ও ৪৫টি ক্লিনিক রয়েছে। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০ থেকে ৬০ কেজি ক্লিনিকেল বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এ সব বর্জ্যরে মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অপারেশনে ব্যবহৃত শরীরের পরিত্যক্ত অংশ, ইঞ্জেকশন, গজ, ব্যান্ডেজ, সিরিঞ্জ, সুই, ক্লিনিকেল সুতা, ওষুধের খালি খোসা, দুষিত রক্ত, মল, মুত্র ইত্যাদি।
ব্যবস্থাপনার অভাবে মারাত্মক রোগ ও পরিবেশ দুষন ঘটাচ্ছে। ক্লিনিক থেকে এ সব বর্জ্য ক্লিনিক সংলগ্ন রাস্তার পাশে, নালা নর্দমা, খাল , ডোবাসহ রাস্তার উপর ফেলে রাখা হয়। ক্লিনিক ও হাসপাতালের বিষাক্ত বর্জ্যের কারণে জনসাধারণ হেপাটাইটিস বি, টাইফয়েড, বিভিন্ন চর্মরোগ, রিমেটিক ফেভার, ডায়রিয়াসহ নানা ধরণের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশ বিষয়ক ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবুও অধিকাংশ ক্লিনিক পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই ক্লিনিক পরিচালনা করছেন। পরিবেশ দপ্তরও এ ব্যপারে জোরালো কোন পদক্ষেপ নেয়না। বিষাক্ত এসব ক্লিনিকেল বর্জ্য জনসাধারণের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসাবে দেখা দিতে পারে। জনসাধারণের বিভিন্ন ধরনের সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা রয়েছে বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটা বেশি ক্ষতিকারক হতে পারে।
সরেজমিনে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল, ফেনী মা ও শিশু হাসপাতাল, ফেনী ডায়াবেটিক হাসপাতালসহ কয়েকটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের পাশের খোলা জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা রক্তের ব্যাগ, ব্যবহার করা সিরিঞ্জ, ওষুধের খালি কৌটা, পলিথিন, রক্ত-পুঁজ, তুলা, গজ-ব্যান্ডেজ ও অস্ত্রোপচারে কাটা ছেড়া মানবদেহের অংশসহ নানা ক্লিনিকেল বর্জ্য। হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর তরল বর্জ্যগুলো সরাসরি পৌরসভার ড্রেন ও পাশ্ববর্তি খালে ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নাছির উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে শ্বাসকষ্ট হয়।
ডাঃ গোলাম মাওলা বলেন, জীবাণুযুক্ত এসব বর্জ্য শ্বাসকষ্টের রোগী ও শিশুদের জন্য ক্ষতিকর।
বাংলাদেশ মানবাধিকার সম্মিলন-বামাসের চেয়ারম্যান এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিবেশ আইন লঙ্ঘণ করে পরিবেশ দুষণ করায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তাদের কারনে ফেনী পৌরবাসি হুমকির মুখে। বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাচ্ছে শহর এলাকা।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ববধায়ক ডাঃ আবুল খায়ের জানান, হাসপাতালে প্রতিদিন যে বর্জ্য জমা হয়, তা হাসপাতালের ডাস্টবিনে রাখা হয়। সেখান থেকে পৌরসভা ময়লার গাড়িতে করে তা সরিয়ে নেয়।
ইনসিনেটর এখনো স্থাপন করা হয়নি। তিনি বলেন হাসপাতালের মানবদেহের কাটা-ছেড়া অংশসহ হাসপাতালের সকল বর্জ্য মানুষের শরীরের জন্যক্ষতিকর। এসব বর্জ্য থেকে বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ে।
ফেনী সিভিল সার্জন ডা. রফিকুস সালেহীন বলেন, হাসপাতালে বর্জ্য ধ্বংস করে ফেলার আধুনিক ব্যবস্থা ইনসিনেটর। কোন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এটা নেই। যত দিন হাসপাতালের বর্জ্য-ব্যবস্থাপনার জন্য ইনসিনেটর পদ্ধতি চালু করা যাবে না, তত দিন পৌরসভাকে বর্জ্য সরিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। হাসপাতালের বর্জ্য নিয়মিত না সরালে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনীর পরিদর্শক ফয়েজ কবির বলেন, ফেনীর অধিকাংশ ক্লিনিকের ছাড়পত্র রয়েছে। পরিবেশ দুষণ নিয়মিত অভিযান ও পরিদর্শন অব্যহত আছে ।
এ বিষয়ে ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি বলেন, সকল হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য নিয়মিত অপসারণ করা হয়। কোথাও বর্জ্য জমা হওয়ার কথা নয়। ড্রেনে ময়লা ফেলার বিষয়ে বার বার সতর্ক করা হয়েছে।