সোনাগাজীতে ইউপি নির্বাচনে আ’লীগের দলীয় প্রার্থীদের পরিবর্তন চায় তৃণমূল

সৈয়দ মনির আহমদ, ফেনী :
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে, হাট বাজারে, চায়ের আড্ডায় সর্বত্রই চলছে আলাপ-আলোচনা। পছন্দের প্রার্থী নিয়ে কথা বলছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাঠকর্মী ও তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী তৃনমূলে গনসংযোগ করেছেন।

তফসিল ঘোষনার পর ফেনী জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির নির্দেশে জেলা আ’লীগের স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনোনয়ন বোর্ড তৃনমূল যাছাইয়ের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী বাছাই করার ঘোষনা দেয়। এর পর থেকে ফেনীর প্রতিটি ইউনিয়নের তৃনমুল র্পযায়ে আরো ব্যপক আলোচনা শুরু হয় । সোনাগাজী উপজেলায় ৯টি ইউনিয়ন ।

 

সকল ইউনিয়নে আ’লীগ থেকে নির্বাচিত চেয়ারম্যানগণ দায়ীত্ব পালন করছেন। তৃনমূলের অভিযোগ, চেয়ারম্যানগণ আ’লীগ ও জনগনের সাথে বিগত পাঁচ বছর বিচ্ছিন্ন ছিল। এলাকার কোন উন্নয়ন না করে নিজেদের আখের ঘোচাতে ব্যস্ত ছিলেন চেয়ারম্যানগণ। তাই এবার নির্বাচনের আগেই দলীয় প্রার্থী পরিবর্তন চান তৃনমূল আ’লীগের নেতাকর্মীরা।

 

জানা যায়, উপজেলার সকল ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীগণ ইতিমধ্যে গনসংযোগ করেছেন। সকল ইউনিয়নে ৪-৫জন দলীয় মনোণয়ন প্রত্যাশি আছে। ১নং চর মজলিশপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি আনোয়ার খায়ের বলেন, চেয়ারম্যান এমএ হোসেন এলাকার কোন উন্নয়ন করেননি। তৃণমূল যাচাইয়ের নিজের জনপ্রিয়তা প্রমাণ হবে বলে জানান, চেয়ারম্যান এমএ হোসেন।

 

২নং বগাদানা ইউনিয়নে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশি ও ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন বাবুল জানান, গত ৫বছর শুধু আ’লীগের মধ্যে দলাদলীতে ব্যস্ত ছিলেন চেয়ারম্যান ইসহাক খোকন। এলাকার কোন উন্নয়ন না হলেও তার ব্যক্তিগত উন্নয়ন হয়েছে অনেক। খোকন বলেন, বাবুল নিজেই মনোনয়ন প্রত্যাশি তাই এমন অভিযোগ করতেই পারেন।

 

৪নং মতিগঞ্জ ইউনিয়ণ আ’লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল জানান, জীবনের ৫০টি বছর আ’লীগের পিছনে ব্যায় করেছি। কোন কিছু পাওয়ার আশা করিনি। হাউব্রিডদের গুরুত্বপূর্ণ পদে মনোনীত করে আমাদের দীর্ঘ সংগ্রামের রাজনীতিকে কৌশলে অস্বীকার করা হচ্ছে। উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সাবেক) সলিম উল্যাহ সেলিম জানান, চরম দুঃসময়ে দলের বিভিন্ন পদে দায়ীত্ব পালন করেছি। কিন্তু জামায়াত পরিবারের একজনকে নৌকা প্রতিকে চেয়ারম্যান বানিয়ে দলের যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ হবেনা। আমরা ত্যাগি ও নির্যাতিত নেতাকে দলীয় প্রতিকে চর ছান্দিয়ার চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই।

 

৫নং চরদরবেশ ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মাস্টার সাহাব উদ্দিন জানান, দলীয় প্রতিকে নির্বাচিত হয়ে অনিয়ম, দুর্নীত, ও দলীয় কর্মী নির্যাতন সহ সব অপকর্মে ব্যস্ত ছিলেন চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম। তৃনমূল যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ায় তিনি জেলা আ’লীগ নেতাদের ধন্যবাদ জানান।

 

আমিরাবাদ ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান ভুঞা জানান, ছাত্রজীবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে রাজনীতি করার চেষ্টা করেছি। নিজের ব্যাক্তিগত অর্থ ব্যায় করে দলের নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে ছিলাম । জোট সরকার আমলে মামলা হামলাসহ বহুবার স্বপরিবারে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। প্রতিপক্ষের সাথে বিন্দুমাত্র আপোষ না করায় স্বপরিবারে গ্রামছাড়া হয়েছি। কিন্তু দলের দায়ীত্ব নেতাদের কারনে বারবার অবমুল্যায়িত হচ্ছি।

 

জেলা আ’লীগের প্রচার সম্পাদক ও আমিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল আলম বলেন, পর পর দুবার দলের মনোনয়ন নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। দলের তৃণমুল শক্তিশালী করার পাশাপাশি এলাকায় ব্যপক উন্নয়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ফেনীর উন্নয়নের রুপকার নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির উন্নয়ন, শান্তি এবং সহাবস্থানের রাজনীতি সম্পর্কে প্রচার প্রচারনায় সব সময় তৃণমূলের সাথে ছিলাম।

 

সদর ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এবি ছিদ্দিক দুলাল বলেন, দলের সমর্থনে চেয়ারম্যান হয়ে বার বার দলের কর্মীদের উপর স্ট্রিম রোলার চালিয়েছে চেয়ারম্যান শামসুল আরেফিন। দীর্ঘদিনের অবহেলিত সদর ইউনিয়নবাসি ও নির্যাতিত নিপীড়িত আ’লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের তৃনমূল নেতাকর্মীদের সেবা করার লক্ষে চেয়ারম্যান পদে তিনি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশি।

 

উপজেলা আ’লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সৈয়দ দীন মোহাম্মদ বলেন, দলের মনোয়নে নির্বাচিত হয়ে উপজেলার সকল চেয়ারম্যানগণ আ’লীগের প্রান তৃণমূলকে ধ্বংস করেছেন। তৃণমুল যাচাইয়ের মাধ্যমে আশাকরি দলের প্রকৃত নেতারাই চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতিক পাবেন।

 

উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অধ্যাপক মফিজুল হক বলেন, গত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে আ’লীগের প্রার্থীগণ চেয়ারম্যান হয়েছেন। কিন্তু তাদের কয়েক জনের কর্মকান্ডে আমরা বিব্রত। এবার তৃণমুল যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা আ’লীগ । আশাকরি দলের প্রকৃত নেতারাই দলীয় প্রতিক পাবেন। এবং যারা প্রতিক পাবেন আশাকরি তারাই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। এজন্য যোগ্য ও ত্যাগি নেতারাই দলের মনোয়ন পাক এটাই আমরা চাই।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *