মাদকের ভয়ংকর ছোবল

 

মেহেদী হাসান:

রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টা। একটি কক্ষে বসে মডেলিং জিঞ্চ প্যান্ট-গেঞ্জি, বাম হাতে আংটি ডান হাতে চিকন লম্বা একটি পাইপ। একহাত উচ্চতার চুল মাথায় কেপ, মাঝে মধ্যেই দুচোখ বন্ধ আবার খোলা। কপালে বড় একটি লাল রঙের টিপ। রুমের ভিতর বাহারী রঙের আবছা আলো ও ধোয়া। নিঃশব্দ রুমের ভিতর বসে আছে আরও কয়েকজন যুবক-যুবতী। এরা প্রত্যেকেই নিয়মিত সেখানে যাতায়াত করে। কি হয় সেখানে আর কেনইবা তারা সেখানে যান। আমাদের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে আসে ভয়ংকর কিছু বাস্তব অপ্রিয় সত্য ঘটনা। মিলি আক্তার (ছদ্মনাম) বয়স আনুমানিক ১৬-১৮ বছর। পড়াশুনা করেন নামীদামী কলেজে। বাবা ব্যবসায়িক কাজে সকালে বাসা থেকে বের হন, ফিরে আসেন রাত ১০টার পর। মা পেশায় গৃহিণী। সংসারের কাজে সারাদিনই ব্যাস্ত থাকতে হয় তাকে। বড় এক ভাই আছে, সারাদিন বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর গল্পেই সময় কাটে তার। ছোট বেলা থেকেই মিলি সাচ্ছন্দেই জীবন কাটিয়ে আসছেন। যখন যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন মিলি। শুধু পাইনি পরিবারের সাথে একটু সুখ-দুঃখ ভাগাভাগির সময়। নিঃসঙ্গতার এক মুহূর্তে মিলি বন্ধুত্তের বাধনে আটকা পরে পরিচিত-অপরিচিত কয়েকজন সমবয়সী যুবক-যুবতীর সাথে। তাদের অনেকেই অসচ্ছল পরিবারের। মিলি মনের সকল কথাই ভাগাভাগি করে তাদের সাথে। খুব সহজেই অনেক জটিল বিষয়ে সমাধানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন তারা। সেটা হোক ভালো কিংবা মন্দ। বন্ধুত্তের সম্পর্কটা গভীর হওয়ার সাথে সাথেই মিলির সখ জাগে মুক্ত আকাশে পাখির মত কিছু সময় ডানা মেলে ওড়ার। কিছু সময় বাইরের জগতটাকে অনুভব করার। কলেজ শেষ করেই বাসা থেকে বন্ধুদের সাথে মিলি বের হয়ে যায় বিভিন্ন যায়গায় ঘুরতে। বন্ধুদের অনেকেই ধুমúান করতো যা মিলির মোটেও পছন্দ ছিলোনা। এভাবে কিছুদিন চলার পর খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মিলির সাথে ঝগড়া হয় বাবা ও মায়ের সাথে। এক পর্যায়ে মিলির বাবা মিলিকে শাসন করে(গালে চর মারে)। অভিমানি মিলি রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হয়। এবং কান্নারত অবস্থায় বাসায় ঘটে জাওয়া বিষয়টি বন্ধুদের সাথে খুলে বলেন। সন্ধার পর বন্ধুরা মিলিকে নিয়ে যায় অন্যরকম এক সুখের জগত দেখাতে এক সিসা বার নামীয় রেস্টুরেন্টে। ভিতরে প্রবেশ করতেই পাওয়া যায় মিষ্টি গন্ধ মিলির শরীর শিহরে উঠছিল তখন। মিউজিক প্লেয়ারে হালকা ভলিউমে বাজছে ইংরেজি গান।  নিঃশব্দ নিছিদ্র আবছা আলোয় এক রেস্টুরেন্ট। একটি কক্ষে তারা বসার পর তাদের জন্য আসলো প্রাচীনকালের রাজকীয় হুঁকার নগর সংস্করণ সিসা। বন্ধুদের একেকজনে হুঁকার নলে টান দিয়ে অন্যের হাতে তুলে দেয়। একপর্যায়ে আসে মিলির পালা। সকলের অনুরোধে মিলিও কয়েকটা টান দেয় সিসায়। এভাবেই চলে তাদের হুঁকার নল টানাটানি। অনেক রাত হওয়ায় মিলি বাসায় চলে যায়। পরদিন মিলির সখ জাগে আবারো সেই হুঁকা বারে (সিসা বার) যাওয়ার। বাসা থেকে করুনা করে অনেক টাকা নিয়ে বের হয়েছে মিলি। বন্ধুদের নিয়ে অনেক মজা করবে সেখানে। তবে আজ সেখানে হুঁকা নয়। সিসা বারে রয়েছে স্বর্গে যাবার নতুন মেডিসিন। তার নাম দেয়া হয়েছে বাবা (ইয়াবা)। সিসা বারে বাবা বিক্রি হয় গোপনে তাই দামটা একটু বেশি। দাম যতই বেশি হোক মিলির স্বর্গে জাওয়া চাই। তাই সকলের কথা মত হুঁকার সাথে গোপনে তাদের কক্ষে চলে আসে বাবা (ইয়াবা)। এছাড়াও আরও আসে বাবা সেবনের উপকরণ দিয়াসলাইট, চিকণ ছিদ্রযুক্ত সুচ ও ফুয়েল পেপার। সিসা সেবনের পর ফুয়েল পেপারের উপর বাবা রেখে ফুয়েল পেপারের নিচে দিয়াসলাইটে ছিদ্রযুক্ত সুচ লাগিয়ে হালকা আগুন জালিয়ে দেয়া হয় তাপ। আগুনের তাপে উত্যক্ত হয়ে ফুয়েল পেপারে রাখা বাবার দানাগুলো গলতে থাকে এবং সেখান থেকে ধোয়া বের হয়। ধোয়াগুলো একটি চিকণ পাইপের মাধ্যমে মিলিসহ অন্যান্য বন্ধুরা সেবন করতে থাকে ধাপেধাপে। সেবন শেষে সেখান থেকে বের হয়ে যায় সকলে কিন্তু মিলির প্রশ্ন কই স্বর্গের দেখাতো পেলামনা। বন্ধুরা বলে বাসায় যেতে যেতেই স্বর্গের দেখা পেয়ে যাবে। রাত অনেক হয়ে গেছে তাই মিলি বাসায় গিয়ে ঘুমানোর জন্য রুমে গিয়ে শুয়ে পরেছে। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছেনা তার। পুরো শরীরে অস্থির ভাব। মাথাটা একটু ঝিম ঝিম করছে তার। সারা রাত এভাবেই কাটে মিলির। ভোরে এক দেড় ঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠে সে। তখন নিজেকে খুব সতেজ অনুভব করে মিলি। এভাবেই আস্তে আস্তে মাদকের ভয়ংকর ছোবলে আসক্ত হয়ে পরে মিলি। এখন মিলি নিয়মিতই সিসা ও বাবা সেবন করে। একদিন বাবা সেবন করতে না পারলে অস্থিরতায় ভুগতে হয় তাকে। নেসার টাকা  যোগার করতে না পারলে মাঝে মধ্যে ঘরের আলমারি কিংবা বাবার (পিতা) পকেট থেকে টাকা চুরি করে মিলি। বর্তমানে মিলিকে নিয়ে সংসারে নানা অশান্তি থাকলেও নেশাগ্রস্থ অবস্থায় ভালই সময় কাটে মিলির। মিলির বন্ধুরা পূর্ব থেকেই ছিল নেশা গ্রস্থ। নেশার টাকা যোগার করতে না পারায় তারা টার্গেট করেছিলো বড়লোক পরিবারের মেয়ে মিলিকে। আর রীতিমত সে বিষয়ে তারা সফলও হয়েছে। এখন আর তাদের নেশার টাকা যোগার করতে হয়না। টাকার ব্যবস্থা মিলি একাই করেন। পরিবারের অসাবধানতা আর সঙ্গহিনতাই একমাত্র দায়ী মিলির নেশাগ্রস্থ জীবন। যদি পরিবার একটু সময় দিত, তার সুখ দুঃখের খবর নিত, যদি বাবা-মা মিলির ভালো বন্ধু হতো তাহলে হয়তো মিলির মত হাজার তরুন-তরুণী হারিয়ে যেতনা মাদকের স্বর্গরাজ্যে। মানবাধিকার সংস্থার একাধিক কর্মীরা বলেন, প্রতিটি সন্তান যদি তার পরিবার থেকে সকল প্রকার অধিকার ভোগ করে তাহলে সেই সকল সন্তানরা খারাপ পথে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থেকে। প্রতিটি পরিবারেরই উচিত তার আদরের সন্তানের ভালো বন্ধু হওয়া।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইনামুল হক বলেন, শিশুমন স্পর্শকাতর। তাদের মনে অন্যরকম একটা আবেগ কাজ করে। একটি সন্তানের মাদকের পথে পা বাড়ানোর পেছনে শতভাগ দায় বাবা-মার বলে আমি মনে করি। বাবা-মার পর্যাপ্ত দেখভালের অভাবেই তারা এ পথে ধাবিত হচ্ছে। বাবা-মার উচিত তাদের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখা।

মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের উপপরিচালক মুকুল জ্যোতি চাকমা বলেন, রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী ও ধানমন্ডিতে গড়ে ওঠা অর্ধশতাধিক সিসা বার গড়ে উঠেছে। আমরা বেশ কয়েকটি সিসা বারে গিয়েছি। সেখানে সিসা খাচ্ছে এমন অবস্থায় বেশ কিছু নমুনা সংগ্রহ করি। এগুলোর কেমিক্যাল টেস্ট করিয়েছি। টেস্টে তিনটি ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া গেছে। যা মানুষের দেহের জন্য মাদকের চেয়েও বেশি ক্ষতিকারক। ক্ষতিকর জেনেও কেন ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিসা বার নিয়ে হাইকোর্টে রিট আছে। সেখানে বলা আছে, সিসার ওপর অভিযান চলতে পারে যদি এতে মাদকদ্রব্য জাতীয় কিছু মিশ্রিত থাকে। সে ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করা যাবে। আর যদি কোনো মাদকের অস্তিত্ব না থাকে সে ক্ষেত্রে আমরা আইন প্রয়োগ করতে পারি না। তিনি বলেন, সমস্যাটা ওখানেই। কারণ মাদক দ্রব্যের তালিকায় (মাদক আইনে) সিসা অন্তর্ভুক্ত নেই। এটাই আমাদের জন্য টেকনিক্যাল সমস্যা। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কিন্তু গত পাঁচ বছরে সিসাসেবীদের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। শুধু রাজধানীতে এ সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। সদরঘাটে সারাদিন ঘুরে বেড়ায় সজিব। বয়স ১৪-১৬। জন্মের পর থেকেই বাবার চেহারা কেমন তা জানেনা সজিব। মা অন্যের বাড়িতে ঝি’য়ের (গৃহপরিচারিকা)  কাজ করেন। সংসারে সজিবের ৫ ভাই-বোন। সজিব  মেঝো। বড় ভাই রিক্সা চালায়। সজিব সদরঘাট টার্মিনালের লঞ্চ থেকে বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে বিক্রি করে। বোতল বিক্রিতে সারাদিনের আয় হয় ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা। সেখান থেকে একটি সিন্ডিকেটকে চাঁদা দিতে হয় দৈনিক ১শ টাকা। সজিব এখন বোতল বিক্রির পাশাপাশি ইয়াবা ও গাঁজা বহনকারী হিসেবে কাজ করে আসছে। এতে সে প্রতিদিন ৪-৫শ টাকা পায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সজিব জানায়, তার ছোট বোনের কিডনিতে সমস্যা। তাকে সুস্থ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। অনেকের দারেদারে ঘুরলেও কেউ তাদের সহায়তা করেনি। তাই সজিব এই পথ বেছে নিয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে সজিব টাকার জন্য সদরঘাটের এক বড়ভাইর (মাদক ও নারী পাচারকারী পাপন) কাছে বোনকে সুস্থ করার জন্য আর্থিক সহায়তা চাইতে গেলে পাপন তাকে মাদক সরবরাহ করার পেশায় নিয়োজিত করে। প্রতি রাতে গাঁজা, দিনে দু-এক ঘণ্টা পর পর সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস হয়ে গেছে সজিবের। সজিব বলেন, ‘যখন থেকে বুঝতে শিখছি তখন থেইক্কাই ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হমু, বিমান চালামু। এখন তো ইচ্ছা হয় খারাপ হমু, খারাপ কাজ করমু।’ কেন সজিব নেশা করছে এবিষয়ে তার একটাই উত্তর ‘সিগারেট খাই চিন্তা কমানোর লাইগা। গাঁজা খাই কষ্ট ভুলার লাইগা, বইনের মৃত্যু যন্ত্রণা না দেখার কষ্ট।’ সজিবের সরলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে শুধু পাপনই নয় দেশে এরকম শতাধিক মাদক ব্যবসার গডফাদার রয়েছে যারা অন্ধকারে থেকে নিয়ন্ত্রণ করে মাদকে স্বর্গরাজ্যের। মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে অনেকে গ্রেপ্তার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় মূলহোতারা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গবেষণা অনুযায়ী সারা দেশে বর্তমানে ১৫ বছরের নিচে মোট ৩ দশমিক ৬০ শতাংশ শিশু মাদকের ভয়াল ছোবলের শিকার। এসকল শিশুর অধিকাংশেরই অক্ষরজ্ঞান থাকলেও বর্তমানে নানা কারণে তারা স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। ই লাইটারে মাদকের বাজার গরমঃ প্রতিনিয়তই দেশজুড়ে মাকড়শার জালের মতই বিস্তার লাভ করছে বাহারি নামীয় মাদক দ্রব্য। মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল ও ইয়াবার পর এবার দেশে একেবারে নতুন খোলসে এসেছে ‘ই-লাইটার’। সূত্রে জানা যায়, ই-লাইটার ব্যবহার করে যারা মাদক নিচ্ছে তাদের বেশিরভাগই সপ্তম শ্রেণি থেকে এসএসসি-এইচএসসির শিক্ষার্থী। ই-লাইটারের সাধারণ ব্যবহার কেবল সিগারেট জ¦ালানো। তবে কিছু অসাধু বিক্রেতা এর ভেতর সিসার উপাদান, নিকোটিন ঢুকিয়ে বিক্রি করছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। সাধারণত এ লাইটারের দাম সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা হলেও বাংলাদেশে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর ভেতর ইয়াবা ঢুকিয়ে তা সেবন করছে কিশোররা। এর ভেতর বিভিন্ন ধরনের মাদক ঢুকিয়ে সেবন করা হলেও বাংলাদেশের বাজারে যেই লাইটারটি পাওয়া যায়, তার ভেতর আগে থেকেই নিকোটিন দেয়া থাকে। এ লাইটারের ধোঁয়া ৫-৭ মিনিটের মধ্যে চলে যায়। আর খুব অল্প সময়ে এ মাদক নেয়া যায়। সেজন্যই দ্রুত বিস্তার লাভ করছে সর্বনাশা এ মাদক সেবন পদ্ধতি। সম্প্রতি রাজধানীর মালিবাগের উদ্ভাস কোচিং সেন্টারে ‘ক্যাংগারটেক’ ব্র্যান্ডের এই ইলেক্ট্রিক লাইটারের ব্যবহার দেখে এক শিক্ষার্থী তার বাবাকে জানায়। পরে তার বাবা ওই লাইটারটি দেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন। ই-লাইটারের নামে নতুন এ মাদকের আখড়ার সন্ধানে মাঠে নামেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ১২ জন করে তিনটি টিমে ৩৬ জন কর্মকর্তা ভাগ হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে যান এবং রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। শ্যামলীর ‘নিরাময়’ নামে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে ইলেক্ট্রিক লাইটারের মাধ্যমে মাদক নেয়া দুই রোগীকে খুঁজে পান তারা। কোচিং সেন্টার থেকে উদ্ধারকৃত আলামত ও মাদকাসক্তদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দারা সেই লাইটারের খোঁজ শুরু করেন রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে। খোঁজে নেমে রাজধানীর বৃহৎ দুটি শপিংমলে এটি বিক্রির প্রমাণ পান গোয়েন্দারা। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ল্যাবে পরীক্ষিত এক রিপোর্টে লেখা ছিল, ইলেক্ট্রিক লাইটারটি ধোঁয়া সৃষ্টিতে সহায়ক। এর ভেতরের ক্যামিকেলের নমুনায় উচ্চমাত্রায় নিকোটিন পাওয়া গেছে। এই নিকোটিনের পরিমাণ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে; যা একটি সাধারণ সিগারেটের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। বেশিরভাগ কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীরা এ মাদকের ব্যবহার করছে বলে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে নিশ্চিত করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম শিকদার। কাঁচা বাজারের মত ঢুকছে মাদকঃ শার্শা উপজেলার বেনাপোল ইউনিয়নের সিমান্তের চিহ্নিত(সিমান্ত ঘাট)  ৪ টি পয়েন্ট দিয়ে প্রচুর পরিমান মাদকদ্রব্যের চালান ঢুকছে। সিমান্ত পাহারায় নিয়োজিত বর্ডারগার্ড (বিজিবির) সদস্যরা ছোট খাট ২/১ টি চালান ধরলেও অধিকাংশ চালান সিন্ডিকেট প্রকিয়ায় বিপুল অংকের টাকা দিয়ে দেশের অভ্যান্তরে ঢুকিয়ে নিচ্ছে সর্বনাশা জীবন বিদ্ধংসী এই নেশাদ্রব্য। উত্তরাঞ্চল রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, বুড়িমারি সীমান্ত হয়ে প্রথমে বগুড়া এবং গাড়ি পাল্টিয়ে হাটিকুমরুল এলাকায় মাদক পাচারের ট্রানজিট পয়েন্টে পরিনত হয়েছে বলেও তথ্য রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই পয়েন্টের সলঙ্গা, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ সদর, শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলায় প্রবাহিত হচ্ছে। হাটিকুমরুর গোল চোত্বর এলাকা বাইপাস হওয়ায় হাটিকুমরুল হয়ে ৬টি উপজেলা মাদককে প্রবেশ করানোর জন্য হাটিকুমরুল সড়ককে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে জেলা এবং উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে মাদকের ছড়াছড়ি। এলাকায় এখন হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, ফেনসিডিল,গাজা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরণের নেশাজাত দ্রব্য।

মাদকের চাষ (গাঁজা), আমদানী, বিক্রয় ও সেবনের অভয়ারন্যে পরিণত হয়েছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল। হাত বাড়ালেই মেলে গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা, ফেন্সিডিল। গোয়েন্দা বিভাগ ও সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল-খুলনা থেকে যশোর হয়ে গোপালগঞ্জের মধ্য দিয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট মহাসড়ক ধরে গৌরনদী হয়ে মাদকের চালান পৌছে যায় বরিশাল বিভাগীয় শহরসহ বিভিন্ন এলাকায়। এই রুটের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে মাদক ব্যবসায়িরা ব্যবহার করে পয়সারহাট ও এর আশপাশ এলাকাকে। কক্সবাজার থেকে ঢাকার রামপুরা হয়ে বগুড়ায় চোরাচালান হয়ে আসছে লাখ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। আর তা ছড়িয়ে পড়ছে দুপচাঁচিয়াসহ ১২টি থানা এলাকায়। রাজশাহীর বাঘা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, নওগাঁর ধামরইহাট, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি ও দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে অবাধে আসা ফেনসিডিল ও ইয়াবা চোরাচালানিদের মাধ্যমে দুপচাঁচিয়া উপজেলা সদর হয়ে বগুড়া জেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

 

সুত্র :দৈনিক অামাদের কন্ঠ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *