তদন্তের নামে সময় ক্ষেপনের চেষ্ঠা ।। পার্বতীপুরের দু’শিক্ষকের বিভাগীয় মামলার তদন্তকারী ৩ কর্মকর্তা নিয়োগ

মোঃ আফজাল হোসেন, দিনাজপুর প্রতিনিধি:
দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলাধীন মৌলভীর ডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দু’সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা তদন্তের নিমিত্তে ০৩ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

বিরামপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানকে আহব্বায়ক করে এবং মোঃ হারুন-অর-রশিদ, সহকারী শিক্ষা অফিসার হাকিমপুর দিনাজপুর ও জনাব প্রফুল্ল কুমার বর্মন, সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার দিনাজপুর সদরকে বিভাগীয় মামলা তদন্ত কমিটিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস হতে ইস্যুকৃত চিঠি যাহার স্মারক নং- জেপ্রাশিঅ/দিনাজ/বিঃমাঃ/৩৫৬৩-এ আগামী ৩১/১২/২০১৬ইং তারিখের মধ্যে সুস্পষ্ট মতামত সহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এদিকে বিভিন্ন অজুহাতে দফায় দফায় তদন্তের নামে সময় ক্ষেপনের চেষ্ঠা করছেন এবং অপরাধিদের বাঁচাতে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সমেশ চন্দ্র মজুমদার বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ৫ ডিসেম্বর/১৬ইং উক্ত দু’শিক্ষকের আতœপক্ষ সমর্থন করে আপিল শুনানির দিন ধার্য্য ছিল, আপিল শুনানিতে তাদের বক্তব্য খারিজ হয়ে যায়। অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মোঃ হাফিজুর রহমান ও সহ শিক্ষিকা রেবেকা খাতুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার রজু সহ চাকুরী হতে বরখাস্ত করণ কারণ দর্শানোর নোটিশ ৩ অক্টোবর/১৬ প্রদানের পর এই তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ কমিটি গঠিত হলো।

উল্লেখ্য গত ৩০ আগষ্ট/১৬ ইং পার্বতীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আখতারুল ইসলাম এর নেতৃত্বে সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আল-সিরাজ এবং অপর সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুজ্জামান দিন ব্যাপি বিদ্যালয়টিতে উপস্থিত থেকে ওই দু’শিক্ষকের অভিযোগ সমূহ তদন্ত করেন। অপরদিকে মাত্র ১ সপ্তাহের ব্যাবধানে ৭ সেপ্টেম্বর/১৬ইং জনাব মোস্তাফিজুর রহমান সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পার্বতীপুর বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের যথার্থতা তদন্তে এসে দালিলিক প্রমানাদি সহ অভিযোগ সমূহ প্রমানে সক্ষম হন। পার্বতীপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সামগ্রীক যৌথ তদন্ত প্রতিবেদন স্মারক নং- ৯৯৭ তাং- ২২/০৯/১৬ইং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস দাখিল করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার দিনাজপুর স্মারক নং- জেপ্রাশিঅ/দিনাজ/বিঃমাঃ/৩০৭৯/৪ এবং জেপ্রাশিঅ/দিনাজ/বিঃমাঃ/৩০৮০/৪ তারিখ ০৩/১০/১৬ইং তে বলা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিয়মান হয়, উক্ত দু’শিক্ষক সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫এর বিধি ৩ (বি) মতে অসদাচারণের সামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করিয়াছেন। মর্মে একই ধারার ৪ (৩) (ডি) মোতাবেক চাকুরী হতে বরখাস্ত/ বিভাগীয় মামলা রজু করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয় সহ, শিক্ষিকা রেবেকা খাতুন আপনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের (প্রধান শিক্ষক) বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন উদ্দেশ্য প্রনিত, স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে সাময়িক তদন্তে প্রমানিত হইয়াছেন।

প্রসঙ্গত- সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষক ওই দু’শিক্ষকের স্বেচ্ছাচারিতা, দায়িত্বহীনতা, পূর্বানুমতি ছাড়া ছুটি ভোগ, বিলম্বে আগমন, আগাম প্রস্থান, জাতীয় সঙ্গিত পরিবেশন কালে/এসেম্বেলী চলাকালীন সময়ে অফিসে বসে খোস গল্পে সময় কাটানো সংক্রান্ত প্রতিবেদন শিক্ষা অফিসে দাখিলের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুর রহমানের সহায়তায় শিক্ষিকা রেবেকা খানম ২১ আগষ্ট/১৬ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি হয়রানি মূলক উত্তোক্ত করণ অভিযোগ দাখিল করেন। অবশ্য তদন্ত কালে অভিযোগ প্রদানে ব্যার্থ হয়ে ওই শিক্ষিকা মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়েছিল। একাধিক তদন্তে বারংবার দোষি প্রমাণিত হওয়ার পরেও অভিযুক্ত দু’শিক্ষককে চিহ্নিত করা হলেও কেন কয়েক মাসে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না সকলের নিকট একটাই প্রশ্ন।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তার লুকোচুরির কারণে অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ কে করবেন তা নিয়ে রহস্য জট খুলছে না। জানতে চাইলে ডিপিইও দিনাজপুর বলেন আমি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ সহ রংপুর বিভাগীয় দপ্তরে প্রেরণ করতে পারি। ব্যবস্থা নিবেন সংশ্লিষ্ট ডিডি মহোদয়। পক্ষান্তরে ডিডি রংপুর খোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন সংশ্লিষ্ট ডিপিইও, আমি শুধু অনুলিপি পাব। অথচ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক জারিকৃত পরিপত্র যাহার স্মার নং- ১৬৮/৭১(৪) তাং- ২৮আগষ্ট/১৬ এ স্পষ্ট বলা হয়েছে সরকারি প্রাথকি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক গণের নিয়োগ কর্তা হিসেবে জেলা শিক্ষা অফিসার সহকারী শিক্ষক গণের বিভাগীয় মামলা রজু ও নিষ্পত্তি করবেন। সচেতন মহলে প্রশ্ন জেলা প্রাথমিক অফিস- এবং বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তার রশ্মি টানা টানির কারণে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষাক্রম কবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *