ফেনী রেলওয়ে এলাকা ছিনতাই, মাদক  বিক্রি ও দখলবাজিসহ সকল অপরাধের আখড়া

জয়নুল আবেদীন চৌধুরী রনি >

চোর, ছিনতাইকারী, মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ীদের অভয়াশ্রম হয়ে হয়ে উঠেছে ফেনী রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফর্মের উভয় পাশের রেলওয়ে কলোনীর বাসা সমূহ। এ বিষয় নিয়ে একাধিকবার স্থানীয় গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ- হওয়ার পরও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না।  জানা যায়, এসব চোর, ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীরা রেলওয়ে স্টাফদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস করে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। 

 

ফেনী রেলস্টেশনসংলগ্ন কলোনী গুলোই হচ্ছে চুরি, ছিনতাই, মাদক সেবন, মাদক বিক্রির আশ্রয়স্থল। এমনকি সেখানে রেললাইনে ও কলোনির গুলোতেই ডালা সাজিয়ে মাদকদ্রব্য কেনা বেচা হতো বলে অভিযোগ ছিলো। হাট-বাজারে অন্যান্য দ্রব্য বিক্রির মতোই চলতো মাদকের কেনাবেচা। এখন প্রকাশ্যে বন্ধ হয়ে গোপনে বিক্রি হয় বলে জানা যায়। চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের ফলে মাদক বিক্রির সিষ্টেম পরিবর্তন করে অতি গোপন ভাবে চলছে মাদক বিক্রি কিন্তু মাদক বিক্রি বন্ধ হয়নি বলে জানা যায়। বিশেষ করে এই স্টেশনের আশপাশে রেলওয়ের একটি বড় অংশই কলোনি গুলো দুষ্কৃতিকারীদের দখলে থাকায় পুরো এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ করছে তারা। মাদক বিক্রিসহ  চুরি, ছিনতাইসহ সকল অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের সঙ্গে কলোনির নারীদের সম্পৃক্ত করেই খুব সহজেই অপরাধমূলক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকক্ষেত্রে শিশু-কিশোরদেরও টাকার লোভে মাদক ব্যবসাসহ চুরি, ছিনতাইয়ে লাগানো হচ্ছে। স্থায়ী বাসিন্দাদের সম্পৃক্ততা না থাকলেও প্রায় বহিরাগত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিয়ন্ত্রণ করছেন সকল অপরাধ মূলক কর্মকান্ড। ছদ্মবেশী কিছু ক্ষমতাসীনদের সমর্থনও রয়েছে বলে অনেকের ধরণা করেন।

 

রেলস্টেশনে গেলে মূল প্লাটফর্মগুলোতে গেলে দেখা যায়, ময়লা আবর্জনায় ভরে আছে পুরো প্লাটফর্ম। অস্বাস্থ্যকর বাথরুম থেকে শুরুকরে রেললাইনের উপর মলমূত্র ত্যাগের কারণে দুর্গন্ধে প্লাটফর্ম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি রয়েছে। আশপাশ  এলাকার লোকজনের অবাধ বিচরণে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে স্টেশন। স্টেশনের মাষ্টার মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে কথিত অনেক অভিযোগ উঠে আসে স্টেশন ঝাড়ুদারদের বেতনের টাকা আত্মসাৎ ও পেনশনের টাকার মধ্যে সরকারি নিয়মবহির্ভূত আলাদা চার্জ নেওয়া নিয়ে। আরোও জানা যায়, স্টেশন মাস্টার মাহবুবুর রহমানের সরকারি বাসার ভাড়াটিয়া প্রকাশ নাম শুক্কুর কুখ্যাত ছিনতাইকারী ও সাগর ফেনী আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য। তাদের এই অপরাধের কারনে একাধিক বার রেলওয়ে পুলিশের সহায়তায় ফেনী মডেল থানায় পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। বিভিন্ন সময়ে একাধিক মামলায় কোর্টে চালান দিয়েছেন। এদের বিরুদ্ধে প্রায় ৭/৮ টি চুরি, ছিনতাই, ও ডাকাতির মামলা চলমান রয়েছে বলে ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের সূত্রে জানা যায়।

 

অন্যদিকে মাদক ব্যবসায়ীরাও রেলওয়ে স্টাফদের ভাড়া বাসায় থেকে সকল অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের পরিচালনা করেন। মাদক ব্যবসায়ীর প্রকাশ নাম জুপ্টি, পাখি, সোহেল প্রকাশ কালু, পারুল আক্তার প্রকাশ বেরাজ্নিসহ আরো অনেকেই এই রেলওয়ে স্টাফদের ভাড়া দেওয়া কলোনিতে থেকেই মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, ছিনতাইকারী মাদক ব্যবসায়ী কালুর ভাই প্রকাশ নাম বোবা তার আরেকটা ভাই মাদকাসক্ত প্রকাশ নাম মাসুম ও রাসেল প্রকাশ উজাইয়া তাহার মা জুলেখা এর সাথে রেলওয়ে কলোনীতে থেকেই চুরি ছিনতাই করে একাধিক বার  মডেল থানার হাতে ধরা পড়ে জেল হাজতে গেছেন। চলমান বৎসর কথিত মাদক-সম্রাজ্ঞী পারুল আক্তার ওরফে বেরাজনী ও তার স্বামী সোহেল ওরফে কালু ‘১ এপ্রিল  রবিবার দুপুরে ফেনী রেল স্টেশনে মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে ফেনী জেলা প্রশাসনের অভিযানের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সোহেল রানার নেতৃত্বে রেলওয়ে স্টাফদের ভাড়াটিয়ার ভাড়া বাসার থেকে কালু ও মাদক সম্রাজ্ঞী পারুল ওরফে বেরাজনীর কাছ থেকে পাওয়া ৬ কেজি গাঁজা ও ৪ বোতল ভারতীয় হুইস্কি উদ্ধার করায় আদালত সোহেল ওরফে কালুকে (২৮) দুইবছর ও পারুল আক্তার ওরফে বেরাজনীকে (৩৫) দুইবছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই জামিনে মুক্ত হয়ে এসে ফের আবারো একই কাজে লিপ্ত হয়ে জান বলে অভিযোগ উঠেছে। এদের মত আরো একাদিক মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীদের সাজা প্রদান করছেন আদালত। কিন্তু ফের জামিনে এসে আবারো মাদক ব্যবসাসহ অন্যান্য অপরাধ মূলক কর্মকান্ডে  জড়িত হয়ে পড়েন একই চক্রের সদস্যগুলোর লোকজনেরা। বিভিন্ন সূত্রে আরো জানা যায়, সরকারি এপার্টমেন্ট ছাড়াই পরিত্যক্ত দেখিয়ে অন্যত্র প্রায় পঞ্চাশ/একশোটি রেলওয়ে স্টাফ বাসার ভাড়ার টাকার লুটিয়ে নিচ্ছেন দূস্কৃতিকারীরা।

 

স্থানীয়দের অভিযোগ, কে নিচ্ছেন রেলওয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের হিসেব। এই রেলওয়ে কলোনী গুলোই যে মাদক, চুরি ও ছিনতাইয়ের আখড়া। এই অভিযোগ গুলো নতুন নয় পুরোনো। এছাড়া রেলওয়ে স্টাফদের বিরুদ্ধেও ঢালাও অভিযোগ আছে। স্থানীয়রাসহ অনেকেই এদের বিরুদ্ধে অবস্থান করলে কিছুদিন বন্ধ থেকে ফের আবারো আগের অবস্থানে চলে যায়। তাই অনেকেরই ধারণা যে, অবৈধ কলোনী ও স্থাপনা গুলো উচ্ছেদ করে বৈধ কলোনি ও স্থাপনা গুলো রেলওয়ে স্টাফদের বাসার ভাড়াটিয়াদের সঠিতর তথ্য নিশ্চিত করে সর্বোচ্চ সতর্কতার সহিত যদি ভাড়াটিয়া না দেন তাহলে, সকল অপরাধ কর্মকান্ড চলমান থাকবে হয়তোবা আগামীতে আরো ভয়ংকর রুপ নিতে পরে বলে অনেকেই ধারণা করছেন।

 রেলওয়ে পুলিশের  অফিসার ইনচার্জ ওসমান পাঠান টেলিফোনে জাণান, চুরি ছিনতাই ও মাদক ব্যবসায়ী বিষয়ক আমরা অবগত আছি। ইতিমধ্যে অনেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজাসহ অন্যান্য অনেক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয়েছেন। এই চুরি ডাকাতি ও মাদকের বিরুদ্ধে কথাবলাতে আমাদের পুলিশ অফিসার গুলোর বিরুদ্ধেও অনেক মিথ্যা অভিযোগ উঠে এসেছে। আমরা সঠিক তদন্ত করে সঠিক তথ্য নিয়ে ব্যবস্থা নিবো। কলোনি উচ্ছেদের বিষয়টি আমাদের  দায়িত্বের বাহিরে পড়েন।

ফেনী পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লুৎফুর রহমান খোকন হাজারী  বলেন, অতীত থেকেই রেলওয়ে কলোনি গুলোতে মাদকসহ চুরি ছিনতাইকারীদের আকঁড়ে বলে আমরা জানে এসেছি। এসব কিছু বহিরাগত অসাধু ব্যক্তিদের  দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। বর্তমানে নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি আমাকে দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই আমি সে অনুযায়ী মাদক, চুরি ও ছিনতাই সহ সকল অপরাধ মূলক কর্মকান্ডের অভিযোগের ব্যাপারে সচেতন থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে অতীতের তুলনায় অনেক কমে গেছে। আগামীতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো, তথ্য সূত্র যাচাই বাচাই করে ভাড়াটিয়াদের দেওয়ার জন্য এবং সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেই রেলওয়ে কলোনির গুলোর সুন্দর ও শৃঙ্খলা পরিবেশ ফিরে নিয়ে আসতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বাত্তক সহোযোগীতার আশ্বস্ত করেন।

 

ফেনী রেলওয়ে স্টেশনের আই ডব্লিউ আতিকুর রহমান আকন ফোনে জানান, প্রথমত, চুরি ছিনতাই সহ অন্যান্য বিষয় পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব। মাদক ব্যবসায়ীদের থাকার বিষয়ে তিনি দুইজন কালু ও তার স্ত্রী বেরজনীর বিষয়ে তিনি অবগত আছেন বাকীদের বিষয় তিনি শুনেছেন। অবৈধ স্থাপনার উচ্ছেদের বিষয় জানতে চাইলে তিনি  বলেন, এই বিষয়কও অন্য ডিপার্টমেন্টের আওতায় পড়ে। তিনি আরো বলেন, চুরি চিনতাই ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিষয়ক তিনি ফেনী- ২ আসনের সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর নজরে নিয়ে আসার উচিৎ বলে তিনি জানান।

 

এই বিষয়ে ফেনী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার মাহমুদুর রহমানের (০১৮২৯৫৭৪৪৭৭ নাম্বারে) ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায় এবং একাধিক বার তাহার অফিসে গেলে তার উপস্থিতি পাওয়া যায় নাই ।

 

ফেনী রেলওয়ে স্টেশনের পুলিশ ফাঁডির ইনচার্জ এসআই/মোঃ আরব আলী বলেন, ফেনী রেলওয়ে স্টেশনে রেলওয়ে স্টাফদের ভাড়া বাসায় থেকে চুরি, ছিনতাই, মাদক সেবন ও মাদক বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এসব চোর, ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ীদেরকে বিভিন্ন সময়ে ধরে ফেনী মডেল থানা ও বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে কিন্তু তারা আবার জামিনে মুক্ত হয়ে এসে একই কাজে লিপ্ত হচ্ছে। আমরা তৎপর আছি। ফেনী রেলওয়ে প্লাটফর্ম এলাকায় চুরি, ছিনতাই যাহাতে না হয় সে বিষয়ে সর্বাত্তক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *