জয়নুল আবেদীন চৌধুরী রনি>>>
আমরা ছোট বেলায় জানতাম শুধু কোট গায়ে দিতে গ্রেজুয়েট হতে হয়। আর ডেস্ট্রেনি নামক এক প্রতারক দল এসে কোটে মান ইজ্জ্বত রাস্তাঘাটে করেছেন। দুঃখজনক।
মুজিব কোট কি এবং কেন বঙ্গবন্ধু এটা পরিধান করতেন? — এই প্রশ্নের উত্তর অনেক মুজিব কোট পরিধানকারী নেতারা ও সঠিক ভাবে জানেন কি না সন্দেহ। যদি সত্যিকার অর্থেই জানতেন তা’হলে মুজিব এটার মূল বৈশিষ্ট কে বিকৃত করে অমর্যাদা করতেন না।
হাতাবিহীন, হাইনেক, নিচে দুটি পকেট, কালো রঙের কোট – সংক্ষপে এটাই মুজিব কোট। এই কোট পরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে সাক্ষাত করেছেন এবং করতেন। সর্বোপরি নিজেকে বাঙালির ফ্যাশন আইকন হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছেন।
মুজিব কোট শুধু ববঙ্গবন্ধুর পছন্দের পোষাক ছিল না; এর নির্মাণ শৈলিতায় প্রতিফলিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চেতনা ও আদর্শের প্রতিক। এককথায় সুতায় বোনা আবির্ভাব ঘটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশি চেতনা, দেশ মাতৃকার প্রতি ভালোবাসা সোজা কথায় বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতি আদর্শ মোড়ানো মুজিব কোট।
ইতিহাস বলে, বঙ্গবন্ধু মজিব কোট কিন্তু রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে পরতেন না। প্রথম দিকে সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা পরতেন। ১৯৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই নিয়মিত মুজিব কোট পরতেন বঙ্গবন্ধু। পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী নেতারা উনার আদর্শের প্রতি গভীর অনুগত্যের প্রকাশ হিসবে ব্যাপক ভাবে মুজিব কোট পরিধান করতে শুরু করেন।সময় ও পরিস্থিতিতে এই কোট মুজিব কোট নামে খ্যাতি লাভ করে। ফলশ্রুতিতে অনেকে মনে করেন মুজিব কোট আওয়ামী নেতাদের দলীয় পোশাক…?
যেহেতুঃ এই কোট বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শ ও দেশপ্রেমের প্রতিকি ছিল। তাই এটা বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ছিল।
মুজিব কোটের রং ছিল কালো। বঙ্গবন্ধু কালো ব্যতীত অন্য রঙের মুজিব কোট পড়েন নাই। জনসাধারনের সুখ-দু:খের প্রতি সহমর্মিতা, সহানুভুতি ও একাত্মবোধ প্রকাশ করতেই এই কালো রঙের কোট পরতেন। এই কোটের বোতাম ছিল ৬ টি, যা ছিল ৬ দফা আন্দোলনের প্রতিকি প্রকাশ।
বিশ্ব বরেণ্য নেতাদের অনুসারীরা অনুগত্যের প্রতিকি স্বরুপ, নেতার পরিধেয় ডিজাইনের পোশাক পরিধানের প্রত্যেক দেশেই কম বেশী প্রচলিত আছে। এটা দোষের কিছু নয়। যদিও পোশাক পরিধানই আনুগত্যের নিশ্চয়তা নয়। প্রকৃত আনুগত্য মন থেকেই আসে, যেখানে পোশাকের স্থান নেই এবং প্রয়োজন হয় না।
আনুগত্য ও শ্রদ্ধা প্রকাশের জন্য যদি কোন নেতা মজিব কোট পড়তে হয় তাহলে নেতার পোশাকের সকল বৈশিষ্ট্য ও উদ্দেশ্য শতভাগ বাজায় রেখেই পড়তে হবে। অন্যতায় এটা হবে লোক দেখানো এবং প্রাকারান্তরে বিকৃতি করণ। তাই কেউ যদি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে মুজিব কোট পরে, তাহলে মুজিব কোটের বৈশিষ্ট্য বাজায় রেখেই পরতে হবে – কালো রং, ৬ বোতাম, দেশের তৈরী কাপড় দ্বারা তৈরী।
দু:খজনক হলেও সত্যি যে, দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের অানুকুল্য লাভের উদ্দেশ্যে আওয়ামীলীগ এর অনেককেই মুজিব কোট পরতে দেখা যায়। এরা লাল, নীল, হলুদ ও সোনালি ইত্যাদি ইত্যদি রঙের এবং বিদেশী দামী কাপড় দিয়ে তৈরী মুজিব কোট পরিধান করে সভা মঞ্চে ভাষণ দেন, মিছিলে অংশ গ্রহণ করেন। এর থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার। আর সেটা হচ্ছে – মুজিব কোটের মহাত্ব সম্পর্কে এরা জানে না; জানে না কেন বঙ্গবন্ধু এটা পরতেন? লোক দেখানোর জন্য পরে থাকে অথবা জানে বুঝেই বাস্তব অর্থে বিকৃত করে ফেলছে মুজিব কোটের আসল বৈশিষ্ট্য ও পরিধানের উদ্দেশ্য।
দিনে দিনে নানান রঙের মুজিব কোট পরিধানকারী নেতাকর্মীদের সংখ্যা বাড়ছে। এই বাহারী রঙের প্রভাবে একদিন হয়তো হারিয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মোড়ানো কালো রঙের মুজিব কোট। প্রচলিত হবে বৈশিষ্ট্য বিকৃত মুজিব কোট। একমাত্র আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দরাই পারেন মুজিব কোট কে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করতে। দলের গঠনতন্ত্রে মুজিব কোট এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে এবং ব্যবহার করার জন্য নেতৃত্বের স্তর নির্ধারণ ইত্যাদি সংক্রান্ত বিধি নিষেধ সংযুক্ত করে অতি-তাড়াতাড়ি মুজিব কোট কে বিকৃতি থেকে রক্ষা করতে হবে, করতে চাই।
জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক -সাহিত্য সম্পাদক, ফেনী জেলা ছাত্রলীগ।