নাইম তালুকদার :
সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার শান্তিগঞ্জে বাজারে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এফআইভিডিবি কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রবিবার দিনব্যাপী ‘হাওর সম্মেলন-২০১৮’ অনুষ্ঠিত
হয়েছে। পিকেএসএফের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ’র সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনের এমপি-অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখে, সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শামছুন নাহার বেগম , সুনামগঞ্জ-১ (জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-তাহিরপুর) আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা, সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর-বিশ^ম্ভরপুর) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিছবাহ, সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার) আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন সুনামগঞ্জ জেলা প্রসাশক জনাব মোঃ সাবিরুল ইসলাম।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, হাওর অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা, জনগোষ্ঠীর প্রকৃতি, চ্যালেঞ্জসমূহ উন্নয়ন কর্মকান্ডের ক্ষেত্রসমূহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, অবকাঠামো, ইত্যাদি বিবেচনা করে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে মতামত প্রদান করেন। বৈষম্য না কমিয়ে কখনই টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব হবে না। উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। জনবান্ধব নীতি উন্নয়নের জন্য আবশ্যক। বাস্তবতা অভিজ্ঞতা, মানুষের চাহিদা, রূপকল্প ২০২১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, সরকারি নীতিমালা সকল কিছু নিয়ে পিকেএসএফ তার কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে এবং মানুষকে কেন্দ্র করে সমন্বিত ভাবে তা বাস্তবায়ন করে। পিকেএসএফ হাওর এলাকায় তার কাজের পরিধি স¤প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে এবং মানব কেন্দ্রিক কাজ নিয়ে পিকেএসএফ হাওরবাসীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মানুষ এগিয়ে যাবে, দেশ এগিয়ে যাবে তবে কাউকে বাদ দিয়ে নয়।
টেকসই উন্নয়ন কেবল তখনই অর্জিত হবে যখন সকল মানুষ উন্নয়নের বলয়ের মধ্যে আসবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য অর্থ আছে তবে অভাব আছে শুধু যথাযথ ব্যবস্থাপনা, সমন্বয় এবং সময় অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছু অপচয় হয় উল্লেখ করে বলেন, তা সত্তে¡ও সরকারি উদ্যোগের সুফল জনগণ পাচ্ছে। টেকসই ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে তা আরও বেগবান করা সম্ভব। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের নানা উদ্যোগ বেশ প্রশংসনীয় তবে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে দাতা সংস্থার অর্থায়নে গৃহীত এসকল প্রকল্প মাঝ পথে থমকে যায়। দীঘর্ মেয়াদী হয়না যা টেকসই উন্নয়ন অর্জনে বড় বাধা এবং এই বাধা দূর করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একসাথে কাজ করার আহŸান জানান। বক্তারা আরো বলেন, হাওর অঞ্চলে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়ার বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছায় সরকারি বেসরকারি সকল উদ্যোগ সমন্বিতভাবে সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। হাওর মাছ চাষের জায়গা নয়, মাছের জায়গা। তাই জীববৈচিত্র সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। দেশের মোট জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশ হাওর এলাকায় বসাবাসরত যার অধিকাংশই হাওরবাসী এখনও দারিদ্র্য পীড়িত।
বাংলাদেশ যে গতিতে অর্থনৈতিক উন্নতি সাধন করছে, সেই তুলনায় হাওর এলাকাগুলো অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। হাওর অঞ্চল বছরের ৬-৭ মাস পানিতে প্লাাবিত থাকে। এসময় সীমিত পরিসরে মাছ ধরা ছাড়া দরিদ্র হাওরবাসীর তেমন কোন কাজ থাকে না। অপরদিকে, হাওরে শুষ্ক মৌসুমে এক ফসলী জমিতে শুধুমাত্র বোরো ধান চাষ হয়। অর্থাৎ, কর্মসংস্থানের বৈচিত্র বছর ব্যাপী নিয়মিত আয়ের সুযোগ এখানে সীমিত, যার ফলে হাওরবাসী দারিদ্র্যের দুষ্ট চক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। হাওর অঞ্চলের বর্তমান চ্যালেঞ্জসমূহ কি-তা নিয়ে আলোকপাত করেন প্রাথমিকভাবে করণীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরেন।
এই সেশনে হাওরের টেকসই উন্নয়ন সংক্রান্ত ৪টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। উপস্থাপনা চারটি প্রদান করেন ড. ফজলে রাব্বি ছাদেক আহমাদ পরিচালক (পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন), পিকেএসএফ জাকির আহাম্মদ খান হেড অব আরবান প্রোগ্রাম কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড, কে.এ.এম . মোরশেদ পরিচালক অ্যাডভোকেসি টেকনোলজি ও পার্টনারশিপ ব্র্যাক, ইকবাল আহাম্মদ নির্বাহী পরিচালক পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র। এই সেশনে প্যানেলিষ্ট হিসেবে আলোচনা করেন জিয়াউল হক মুক্তা সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পেইন ফর সাসটেইনেবল লাইভলিহুডস (সিএসআরএল), একেএম মাজহারুল ইসলাম অধ্যাপক নৃতত্ত¡ বিভাগ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট, ড. এম. মোখলেছুর রহমান নির্বাহী পরিচালক সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স ষ্টাডিস (সিএনআরএস)। কারিগরি সেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পিকেএসএফ-এর চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ।