আব্দুর রহিম,খাগড়াছড়ি সংবাদাতা:
খাগড়াছড়ি মহিলা কলেজ সড়কের পুরাতন রামগড় রাস্তার মোড় থেকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন উপলক্ষে বুধবার সকালে পৌর শহরে এক র্যালী বেরকরা হয়েছে। র্যালীটি উদ্বোধন করেন উপজাতীয় শরনার্থী টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা।
আদিবাসী ফোরাম খাগড়াছড়ি জেলা শাখার মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল যৌথভাবে এ র্যালীর আয়োজন করে। এতে বক্তব্য রাখেন, আদিবাসী ফোরাম জেলা শাখার সমন্বয়ক চাইথোয়াই মারমা, নারী নেত্রী নমিতা চাকমা ও প্রতিভা রোয়াজা। র্যালীটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন শেষে পূনরায় রামগড় রাস্তার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
সভায় বক্তারা পাহাড়ের ভূমি অধিকারসহ নানা বিষয় তুলে ধরে তা সমাধানের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান।
আদিবাসী শব্দটি বাংলাদেশে একটি বিতর্কিত শব্দ। সরকারের তরফ থেকেও আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করতে জারী করা হয়েছে প্রজ্ঞাপন। তারপরও পাহাড়জুড়ে বির্তকিত এ দিবসকে নিয়ে “আদিবাসী দিবস” নামে ঢাকঢোল বাজিয়ে পালনে মেতে উঠেছে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের একটি অংশ।
আদিবাসী শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা ও তাদের অধিকার নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রয়েছে প্রচুর বিতর্ক। জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পরেও আদিবাসীদের ব্যাপারে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য কোন সংজ্ঞায় উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানা যায়। বাংলাদেশ সরকারের মতে।
“বাংলাদেশে কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠী নেই”।
আদিবাসীদের উপজাতি হিসেবে সম্বোধন করা অনুচিত, কারণ তারা কোন জাতির অংশ নয়। বরং তারা নিজেরাই এক একটি আলাদা
জাতি।
পৃথিবীরূপ পাঁচটি মহাদেশে ৪০ টি দেশে বসবাসরত প্রায় ৫,০০০ আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি। নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়ায় যুগে যুগে এদের অনেকে শোষিত। যখনি তারা নিজেদের অধিকারের স্বপক্ষে কথা বলেছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা দমন নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে।
জাতিসংঘের আলোচনায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সাথে নেওয় হয়। এবং ১৯৯৩ সালকে “আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী দিবস” ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৫ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত “আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী জনগোষ্ঠী দশক” ঘোষণা করা হয় যার উদ্দেশ্য ছিল আদিবাসীদের উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া। এছাড়াা ১৯৯৫ সালের ৯ আগস্টকে “বিশ্ব আদিবাসী দিবস” ঘোষণা করা হয়। জাতিসংঘ ১৯৮২ সালে সর্বপ্রথম আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়।
কিন্তু অন্যান্যদের মতে বাংলাদেশে প্রায় ৪৫টি জাতিসত্তার উপস্থিতির হার তুলনামূলক বেশি। এত নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সমাহার থাকলেও এদের প্রত্যেকের জীবনধারা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি আলাদা। সংগত কারণেই আদিবাসীদের আচার-সংস্কৃতি নিয়ে সমতলের মানুষদের আগ্রহ। এ আগ্রহ দেখা যায় বিদেশি পর্যটকদের মাঝেও।
৪৫টি জাতিগোষ্ঠী নিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আন্দোলন ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম বাংলাদেশের আদিবাসী: এথনোগ্রাফিয় গবেষণা নামে যে গবেষণাটি করে আলাদা তিন খন্ডে বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সম্পদায়ের নাম উল্লেখ করা হয়। ৪৫টি বর্ণাঢ্য জাতিগোষ্ঠীর বসবাস এ দেশের সাহিত্য ভান্ডারকে করেছে সমৃদ্ধ।