প্রশান্ত সুভাষ চন্দ :
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরবালুয়াতে(উড়িরচরের কোম্পানীগঞ্জ অংশ) সন্দীপ এলাকার জলদস্যু ইব্রাহিম মাঝি ও তার বাহিনীর তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নোয়াখালী অঞ্চলের কোম্পানীগঞ্জের চাষী, খামার মালিক ও সাধারণ মানুষ। সরকারী খাস জমি দখল, চাঁদাবজি, খামার লুট, জেলেদের ট্রলার ও মাছ লুট, জেলে অপহরণ ও নারী ধর্ষণের মত ঘটনা অহরহ ঘটাচ্ছে এ বাহিনী। এ বাহিনীর অত্যাচারে অনেকে সহায় সম্বল হীন হয়ে পড়েছে। নি:স্ব এ মানুষ গুলোর এখন জীবনের নিরাপত্তা পর্যন্ত নেই। স্থানীয়ভাবে একটি পুলিশ ক্যাম্প থাকলেও এ বাহিনীর ক্ষমতার কাছে তারা অসহায়। ইব্রাহিম বাহিনীর কাছে নতিস্বীকার করেই ঐ ক্যাম্পের সদস্যরা সেখানে থাকতে হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই ইব্রাহিম মাঝি হল র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত কুখ্যাত জলদস্যু শাহাদাত হোসেন জাসুর সহযোগী। ২০১৪ সালে জাসু নিহত হওয়ার পর ইব্রাহিম মঝি হয়ে ওঠে ঐ বাহিনীর প্রধান। তার মূল বাড়ি সন্দীপ উপজেলার উড়িড় চর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে। যে কারনে নোয়াখালী অঞ্চলের মানুষকে সে প্রতিনিয়ত হয়রানী করে থাকে । ইব্রাহিম মাঝি ও তার লোকজন সরকারী খাস জমি দখল করে পরবর্তীতে এ সম্পত্তি সাধারণ মানুষের মাঝে বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ এলাকায় মাছ ধরতে হলে তাকে দিতে হয় চাঁদা। কাঁকড়া ধরতে হলে চাঁদা দিতে হয়। গরু, মহিষ, ভেড়া ও ছাগল পালন করতে হলে চাঁদা দিতে হয়। স্থানীয় খাল ইজারা দেয় এ ইব্রাহিম মাঝি। এ যেন বাংলাদেশের ভিতরে আরেকটি দেশ। যেখানে দেশের প্রচলিত কোন আইন কানুনের বালাই নেই। সবই চলে ইব্রাহিম মাঝির ইশারায়। প্রশাসন থেকেও নেই। একমাত্র রাজা ইব্রাজিম মাঝি। আর প্রশাসনের ভূমিকায় ইব্রাহিম মাঝির বাহিনীর সদস্যরা।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে জাসু নিহত হওয়ার পর ইব্রাহিম মাঝি গ্রেফতার হয়। বেশ কিছুদিন জেল হাজতে থাকার পর গত দেড় বছর পূর্বে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে শুরু করে তান্ডব। জানা গেছে, বর্তমানে ইব্রাহিম মাঝি কক্সবাজার জেলার মহেষখালী উপজেলার কুখ্যাত জলদস্যু সর্দ্দার আমিন মাঝির সাথে থাকে। সেখান থেকে ট্রলার যোগে চরবালুয়াতে এসে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ট্রলার লুট, মাছ লুটসহ নানা ধরনের সহিংস কর্মকান্ড করে আবার চলে যায়। সূত্র জানায়, মহেষ খালি থেকেই সে তার বাহিনী পরিচালনা করে। আর এখানে তার হয়ে কাজ করে মোস্তফা, আলমগীর, আলী আহম্মেদ, মনির হোসেন, ফরহাদ ও নিজাম কেরানীসহ কয়েকজন । অথচ তাদের ভয়ে কেউ কোন অভিযোগ পর্যন্ত করতে সাহস পায়না ।
নাম প্রকাশে অচ্ছিুক চরবালুয়ার(উড়িড় চরের কোম্পানীগঞ্জ অংশ)একাধিক বাসিন্দা জানায়, ইব্রাহিম মাঝির বিরুদ্ধে উড়িড় চরের খায়রুল আলম চেয়ারম্যান হত্যা মামলাসহ ফেনী, কোম্পানীগঞ্জ ও সন্দীপ থানায় অসংখ্য মামলা থাকলেও সে এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
চরবালুয়ার (উড়িড় চরের কোম্পানীগঞ্জ অংশ) সাধারণ মানুষ তাদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে চাষাবাদ এবং ব্যবসা বানিজ্য করার জন্য স্থানীয়ভাবে সৌরভ হোসেন নামে এক উদ্যমী যুবকের মাধ্যমে ইব্রাহিম মাঝির বিরোধীতা করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি। ইব্রাহিম মাঝির বিরোধীতা করায় সৌরভ হোসেনের বিরুদ্ধে একটি চক্র অপপ্রচার চালিয়ে তাকে ডাকাত সাজানোর চেষ্টা করছে বলেও স্থানীয় বাসিন্দারা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছে।
ইব্রাহিম মাঝি সম্পর্কে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো: আব্দুর রাজ্জাক জানান, ইব্রাহিম মাঝি সন্দীপ এলাকার বাসিন্দা ও বর্তমানে নদী এলাকার কুখ্যাত জলদস্যু সর্দ্দার। তার ভয়ে চরবালুয়াতে মানুষ বসবাস করতে চায়না। সেখানে সে এককভাবে রাজত্ব করে আসছে।
ইব্রাহিম মাঝি ও তার বাহিনী সম্পর্কে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক(এএসআই) মো: ইউনুছের সাথে তার মুঠো ফোনে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমি ইব্রাহিম মাঝিকে কখনো স্বচক্ষে দেখি নাই। তবে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে শুনেছি, সে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে প্রায় সময় চাঁদা নেয় এবং সে এলাকায় আসলে অপরাধ সংগঠিত হয়। এই ইব্রাহিম মাঝি র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত শাহাদাত হোসে জাসুর সহযোগী ছিল বলেও তিনি জানান।
ইব্রাহিম মাঝি সম্পর্কে কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মো: ফজলে রাব্বি জানান, ইব্রাহিম মাঝি একজন কুখ্যাত জলদস্যু সর্দ্দার। কোম্পানীগঞ্জে থানায় তার বিরুদ্ধে বর্তমানে তদন্তাধীন কোন মামলা না থাকলে পূর্বের মামলা রয়েছে বলেও তিনি জানান।