বিএনপি- আ’লীগের মধ্যে উত্তেজনা : ছাগলনাইয়ায় বিএনপি নেতাকে জড়িয়ে আপত্তিকর বক্তব্যে মির্জা ফখরুলের প্রতিবাদ

 

ছাগলনাইয়া প্রতিনিধি :

ছাগলনাইয়া আজিজিয়া ঈদগাহে ১৪৪ধারা জারি করে ঈদের জামাত বন্ধ ও ছাত্রলীগ নেতাকে মারধরসহ সাম্প্রতিক বেশ কিছুর ইস্যুকে নিয়ে আওয়ামী লীগের দু-পক্ষের বিরোধের সঙ্গে বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুর আহম্মদ মজুমদার ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেয়া বক্তব্য নিয়ে স্থানীয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে।

শনিবার (৮ ‍জুলাই) উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল চৌধুরীর বক্তব্যে প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

অপরদিকে, সংবাদ সম্মেলন ও সাংবাদিকদের কাছে পাল্টা-পাল্টি বক্তব্যে ছাগলনাইয়ায় প্রধান দু-দলের নেতাকর্মীরা কার্যত: দ্বিধা-দ্বন্ধে ও আতংকে রয়েছেন। পুলিশি হয়রানির অভিযোগ করছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

জানা গেছে, সম্পতি ছাগলনাইয়া আজিজিয়া মাদ্রাসা ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাযের ইমাম নিয়ে দু-পক্ষের পাল্টা-পাল্টি অনড় অবস্থানকে কেন্দ্র করে ঈদগাহে ১৪৪ধারা জারির পর থেকে শুরু হয়েছে ত্রিমূখি দ্বন্ধ। আজিজিয়া মাদ্রাসার সাবেক শিক্ষক মাওলানা কফিল উদ্দিনকে দিয়ে ঈদের জামাত পড়ানোর পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়।

মাদ্রাসার মোহতামিম মাওলানা রুহুল আমিন, শিক্ষক,আওয়ামীলীগ-বিএনপিসহ এলাকাবাসীর একটি অংশ মাওলানা কফিলের ইমামতির বিরোধিতা করে আসছিলেন শুরু থেকেই।

অপরদিকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও এলাকাবাসীর অপর অংশ কফিলকে ইমাম হিসেবে রাখার পক্ষে অবস্থান নেয়। বিরোধ মিটাতে গত ২৩জুন শুক্রবার বাদজুমা মাদ্রাসা মসজিদে উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল, বাঁশপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও পৌরসভার মেয়র মো. মোস্তফা, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি এনামুল হক মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সদস্য কাজী ওমর ফারুকসহ মুসল্লি ও এলাকাবাসীকে নিয়ে বেঠক হয়।

ওই বৈঠকে দুই পক্ষ তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় তৃতীয় ইমাম দিয়ে নামায পড়ানোর প্রস্তাব আসলেও কোন পক্ষ না মানায় ১৪৪ধারা জারি করে নামায বন্ধ করা হয়েছিল ।

পরে ঈদুল ফিতরের নামায পৌরশহরের জমাদ্দার বাজারে অনুষ্ঠিত হয়। শতবর্ষী পুরাতন ঈদগাহে ১৪৪ধারা জারি করে নামায বন্ধের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের দু-পক্ষের সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় একটি অংশও বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ নেতা মেয়র ও কাজী ফারুকের সমর্থক হিসেবে পরিচিত লোকজন নামায বন্ধের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানকে দায়ি করে অপপচার চালিয়েছে বলে উপজেলা চেয়ারম্যানের পক্ষের নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর একটি অংশের অভিযোগ। এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা নিয়ে দু-পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এখনো চলছে বলে জানা গেছে।

এ ঘটনার রেশ না কাটতেই পৌরসভার জমাদ্দার বাজারে মোটরসাইকেল- সিএনজি অটোরিকসার ওভারটেকিং নিয়ে গত ২৯জুন উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরাফাত হোসেন সাদ্দামের সঙ্গে স্থানীয় বাঁশপাড়া গ্রামের ওবায়দুল হকের সঙ্গে সৃষ্ট বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে বাঁশপাড়ার কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক একত্র হয়ে সাদ্দামকে বেধড়ক মারধর করে আহত করে । এ ঘটনায় বাঁশপাড়া গ্রামের আওয়ামী লীগ ও যুবদল কর্মীসহ ছয়জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন সাদ্দাম। মামলার আসামী নিয়েও স্থানীয় সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভক্তি রয়েছে।

গত ৫ জুলাই পৌরসভার জমাদ্দার বাজারের বধুয়া কমিউনিটি সেন্টারে বাঁশপাড়া ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ কর্তৃক আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও আলোচনা সভায় যুবলীগ সভাপতি এনামুল হক মজুমদারসহ স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আজিজিয়া মাদ্রাসা ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত না হওয়ার জন্যে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র মো. মোস্তফা ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ওমর ফারুককে জড়িয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। বাঁশপাড়ার ওই আওয়ামী লীগ নেতারা এর জন্যে বিএনপি- জামায়াতের সঙ্গে তারা হাত-মিলিয়েছেন বলেও অভিযোগ করে বক্তব্য রাখেন। বাঁশপাড়ার আঞ্চলিকা তুলে ছাত্রলীগ নেতাকে মারধর করারও প্রতিবাদ জানানো হয় ওই সভায় থেকে। আজিজিয়া ময়দানে ব্যাপারে দু-পক্ষের অনড় অবস্থানের মধ্যে মেয়র ও ফারুকের সম্মতিতেই সেদিন আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কায় ১৪৪ ধারা জারির ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল চৌধুরী ।

এদিকে, ওই সভায় ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুর আহম্মদ মজুমদার ও তার পরিবারকে নিয়ে ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেলের আপত্তিকর বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।

গতকাল শনিবার বিএনপির কেন্দ্রিয় সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক লিখিত বিবৃত্তিতে বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রকাশ্য জনসভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুর আহম্মদ মজুমদার ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি, গুম, মসজিদ ভেঙ্গে ফেলার হুমকির ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় নেতাদের দাম্ভিকতা সীমাহীন পর্যায়ে দাড়িঁয়েছে যে প্রকাশ্য জনসভায় হত্যার হুমকি প্রদানেও দ্বিধাবোধ করছে না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। স্থানীয় থানায় নুর আহম্মদ মজুমদারের দায়েরকৃত সাধারণ ডায়েরী পুলিশ নিতে অস্বীকৃতিরও নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

অপরদিকে এ বিষয়ে ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপি গত শুক্রবার ছাগলনাইয়ায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুর আহম্মদ মজুমদার বলেন, তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে জড়িয়ে দেয়া বক্তব্যে তিনি বিস্মিত হয়েছেন ,আওয়ামী লীগ নেতা উপজেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্যের পর থেকে বার বার পুলিশ তার অফিসের সামনে আসছে। বিএনপি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সহাবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাসী বলেই বেআইনি কর্মকান্ডকে পছন্দ করেন না।

বিএনপির অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে এ পর্যন্ত কোন নিরাপরাধ মানুষ হয়রানি করেছেন কিংবা তার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এমন নজির নাই । তিনি উপজেলা পরিষদে কিংবা রাজপথে সব জায়গায় সবাইকে সমানভাবে দেখেন। কারো প্রতি তিনি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনে তিনি বিশ্বাসী নন। উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুর আহম্মদ মজুমদার ও তার পরিবারকে নিয়ে বিএনপির মহাসচিবের প্রতিবাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান,ওইসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট । তিনি বলেন, আমরা মসজিদ গড়তে মানুষকে উৎসাহ দিই- মসজিদ ভাঙ্গার কথা মুখে বলাও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *