মো. স্বপন>>
সৌদি আরবের ভাষায় ‘সন্ত্রাসীদের সমর্থক’ কাতারের ৫৯ ব্যক্তি ও ১২ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে বাহরাইন। এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট যাবতীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছে বাহরাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সোমবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর।
এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোও জব্দের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নগদ অর্থ, আমানত, বিনিয়োগ, বিমা পলিসি এবং সব ধরনের আর্থিক লেনদেন জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাহরাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক বিবৃতিতে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুততম সময়ে তালিকায় উল্লিখিত কাতার সংশ্লিষ্টদের সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে বলা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিল সৌদি আরবের আরেক মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত।
কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার পর শুক্রবার কাতার সংশ্লিষ্ট ৫৯ ব্যক্তি ও ১২ প্রতিষ্ঠান ‘সন্ত্রাসীদের সমর্থক’ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন চার আরব দেশ। দেশগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ও বাহরাইন। এই তালিকায় বিশ্বখ্যাত আলোচিত ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক ইউসুফ আল কারজাভি-র নামও রয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাতারভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নামও রয়েছে তালিকায়।
এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান রাজনৈতিক সংকটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনও ভূমিকা দেখতে চায় না কাতার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রাহমান আল থানি। তিনি বলেন, ছয় আরব দেশকে কেউ কাতারের ওপর অবরোধ আরোপের অধিকার দেয়নি। আর বিদ্যমান অবরোধের মধ্যে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি দেশত্যাগ করবেন না।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, কাতারি আমিরের দেশত্যাগ না করার ঘোষণার মধ্য দিয়ে মূলত কাতার ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে দোহা। কারণ এ ঘোষণার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুযায়ী হোয়াইট হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করছেন না কাতারের আমির।
এর আগে সৌদি আরবের নেতৃত্বে কাতারের সঙ্গে ছয় আরব দেশের সম্পর্ক ছিন্নের ঘটনায় নিজের ‘কৃতিত্ব’ দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৬ জুন ২০১৭ তারিখে টুইটারে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেন, আমার সাম্প্রতিক সৌদি সফরের ফল আসতে শুরু করেছে। সম্ভবত, এটা হবে সন্ত্রাসের বিদায়ের সূচনালগ্ন।
টুইটারে এমন পোস্ট দেওয়ার পর কাতারের আমিরকে ফোন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ সময় তিনি সৌদি আরবসহ অন্য আরব দেশগুলোর সঙ্গে কাতারের মতপার্থক্য নিরসনে সহায়তার প্রস্তাব দেন। ট্রাম্প বলেন, প্রয়োজনে হোয়াইট হাউসে এ বিষয়ে বৈঠকের আয়োজন করা যেতে পারে।
কাতারের রাজধানী দোহা-য় এক অনুষ্ঠানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বলেন, কাতারকে একঘরে করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে আমরা সফল এবং প্রগতিশীল। আমরা শান্তির পক্ষে একটি প্লাটফর্ম, সন্ত্রাসের পক্ষে নয়। চলমান এই সংকট পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমরা বশ্যতা স্বীকার করতে প্রস্তুত নই। আমরা কখনোই আমাদের স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি ধুলায় মিশিয়ে দিতে প্রস্তুত নই।
সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর।