নিউজ ডেস্ক :
কয়েক দিনের উত্তেজনাকর নাটক শেষে স্কট মরিসন অস্ট্রেলিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। তিনি আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টার কিছু আগে দলীয় নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। মরিসন ৪৫-৪০ ভোটের ব্যবধানে সদ্য অভিবাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া পিটার ডাটনকে হারিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদে জয়লাভ করলেন। তিনি হবেন অস্ট্রেলিয়ার ৩০তম প্রধানমন্ত্রী।
আজ ২৪ আগস্ট শুক্রবার সকালে অনেক নাটকের পর লিবারেল দলের প্রধান নেতা পরিবর্তনের দলীয় নির্বাচন হয়েছে। সকাল থেকেই টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে ঘুম ভেঙেছে অস্ট্রেলিয়াবাসীর। গণমাধ্যম সরগরম হয়ে ওঠে একসঙ্গে। সরাসরি সম্প্রচার আর নতুন নতুন খবরে সরগরম হয়ে যায় পুরো অস্ট্রেলিয়া। শুক্রবার কর্মদিবস হলেও মানুষজন কাজের ফাঁকে ফাঁকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছিল গণমাধ্যমের ওপর।
দলের প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হতে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছিলেন সদ্য অভিবাসন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া পিটার ডাটন, বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ ও টার্নবুলের বিশ্বস্ত সহকর্মী কোষাধ্যক্ষ স্কট মরিসন। অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম গতকাল এ নির্বাচনকে বলছিল ‘তিন ঘোড়ার দৌড়’।
দলের প্রধান নেতা পরিবর্তনের দাবি নিয়ে ২১ আগস্ট পার্টি রুমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুলকে চ্যালেঞ্জ করেন পিটার ডাটন। স্বল্প সময়ের মধ্যেই দলের নির্দিষ্ট সদস্যের ভোট গ্রহণ করা হয়। ৪৮-৩৫ ভোটে জিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল ছিলেন টার্নবুল। হেরে গিয়ে নিজের মন্ত্রিত্ব পদই ছেড়ে দিয়েছিলেন ডাটন। অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন নাটকীয়তার শুরু হয়েছিল সেখান থেকেই। এরপর একে একে ডাটনের পথ ধরে ১৩ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ইস্তফা দেন। পরদিন ২২ আগস্ট সরকারকাঠামো অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে ওঠে।
টার্নবুল ও ডাটনপক্ষের অন্যান্য সভাসদ নতুন নেতার প্রসঙ্গ নিয়ে আবার দলীয় বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। নিজ সমর্থকদের জোরালো সমর্থনে ডাটন আবারও টার্নবুলকে চ্যালেঞ্জ করার সিদ্ধান্ত নেন। এ সময় টার্নবুলের পক্ষে থাকা অর্থমন্ত্রী ম্যাথিয়াস কোরম্যান ও তাঁর সমর্থকেরাও টার্নবুলের পাশ থেকে সরে দাঁড়ান।
২৩ আগস্ট লিবারেল পার্টির দলীয় কোন্দলের নাটকীয়তা চরম উত্তেজনাকর পর্যায়ে পৌঁছায়। আবার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার সব আয়োজন করেন ডাটন। কিন্তু নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করার মতো ডাটনের সে যোগ্যতা আছে কি না, সে প্রশ্ন তোলেন স্বয়ং সদ্য বিদায় হওয়া প্রধানমন্ত্রী টার্নবুল।
টার্নবুল বলেন, ডাটন সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য কি না, তাই আগে প্রমাণ করতে হবে। ডাটনের দুটি দাতব্য সংস্থা বেআইনিভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না, তা যাচাইয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। আর সে সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছিলেন টার্নবুল। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ডাটনের বিরুদ্ধে কোনো আইনি জটিলতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে।
উদ্দেশ্য ছিল—কোনো সত্যতা প্রমাণিত হলে সংসদ সদস্য পদ হারাবেন ডাটন। তখন এমনিতেই আর নেতৃত্ব নিয়ে চ্যালেঞ্জ করার যোগ্যতা থাকবে না ডাটনের। আজ সকালে টার্নবুলের ওই আরজি কাজে লাগেনি। ডাটনের বিরুদ্ধে কোনো সত্যতা প্রমাণিত হয়নি, আবার তাঁর পক্ষে করা ৪৩টি পিটিশনও নির্ভেজাল টিকে যাওয়ায় আজ লিবারেল দলের প্রধান নেতা ও প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের দলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দলীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি টার্নবুল। দলের অধিকাংশ এমপি একটি পত্রে স্বাক্ষর করে তাঁকে নির্বাচন দিতে বললে তিনি তাতে সম্মত হন।
নির্বাচনের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী মরিসনকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন পিটার ডাটন। তিনি বলেছেন, ‘স্কট মরিসনের প্রতি পরম আনুগত্য দেখানো হবে আমার কাজ এবং আমরা যাতে নির্বাচনে জিততে পারি তা নিশ্চিত করা।’
এই নির্বাচনের পর টার্নবুল ও জুলি বিশপ কোনো মন্তব্য করেননি।