শারমিন সুলতানা পায়েল :
লোহার খাঁচায় কামিনী! একটু কাছে যেতেই পাখির কিচিরমিচির আওয়াজও কানে লাগছে। খাঁচার ভেতরেই কামিনীর ডালে চক্কর দিচ্ছে দুটি লাভ বার্ড। অসংখ্য গাছের চারার ভিড়ে একটু আলাদাই লাগল এই কামিনীকে। দোকানি বললেন, মানুষকে কিছুটা ভিন্ন স্বাদ দিতে বৃক্ষমেলায় একই সঙ্গে পাখি-গাছের মিলন।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী জাতীয় বৃক্ষমেলা ২০১৭। বন অধিদপ্তরের আয়োজনে ‘বৃক্ষ রোপণ করে যে, সম্পদশালী হয় সে’ স্লোগানে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ৩ জুলাই পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এ মেলা চলবে। আজ ছিল মেলার দ্বিতীয় দিন। এখনো সবাই নিজেদের স্টল গুছিয়ে নিতে পারেনি। দুপুর থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। লোকজন স্বাভাবিকভাবেই কম।
‘পুষ্পকানন অ্যান্ড ইকবাল নার্সারি’ গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে এসেছে। এর বিক্রেতা মো. ইউনূস বলেন, ১০০ প্রজাতির ওপরে গাছ এনেছেন। আরও আসবে। বিশেষ কী ধরনের গাছ এবার পাওয়া যেতে পারে, জানতে চাইলে তিনি বললেন, ‘ডেউয়া, চালতা, চায়না মাল্টার মতো কিছু ফলের গাছ এবার বেশি উঠছে। এগুলোর চারা সহজে পাওয়া যায় না। আমরা কলম করে বিক্রি করি।’ ফুল-ফল-ভেষজের গাছই বেশি। এই স্টলে ৫০ টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা দামের গাছ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া মেলায় লাখ টাকার ওপরে গাছ আছে।
কিং অব চাকাপাতি (জাপানি জাত), তোতাপুরি, পালমা, গৌড়মতি, পঞ্চকলা—এসবই আমের নানান জাত। ড্রামের মধ্যে লাগানো গাছে আম ঝুলছে। প্রায় সব স্টল আমগাছ বা চারা বিক্রি করছে। এদের মধ্যে পঞ্চকলা জাতের আম হয় সারা বছর। গাছে দেখা গেল একই সঙ্গে আমের মুকুল, ছোট কাঁচা আম এবং পাকা আম। এ গাছটির দাম ৫০ হাজার টাকা।
হূমায়রা জাকারিয়া ক্যাকটাস বা সাকুলেন্ট প্রজাতির গাছ খুঁজছিলেন। গাছের প্রতি ভীষণ টান। বেশ কয়েকবার আসেন মেলায়। হূমায়রা বলেন, ‘এই মেলা ছয় মাস পরপর হওয়া উচিত। আমি ব্যাংকার ছিলাম, কিন্তু গাছ ছেড়ে থাকতে ভালো লাগে না। চাকরি ছেড়ে এখন গাছ নিয়েই পড়ে থাকি। গাছ আমরা কাছে বাচ্চার মতো।’
ওয়ার্ডরোব, খাট, সোফা সাজিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন। রাবারগাছের কাঠ দিয়ে তৈরি এসব আসবাব। ভিডিও চিত্র ও ছবির মাধ্যমে রাবার গাছের বীজ থেকে একটি সম্পূর্ণ গাছে পরিণত হওয়ার পুরো প্রক্রিয়া দেখা যাবে এ মেলায়।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ১৩৯ প্রজাতির গাছ এনেছে। ঔষধি গাছ আছে প্রচুর। নাগলিঙ্গম, টক আতা ও জয়তুন গাছ আছে। স্টলের এক বিক্রেতা বললেন, জয়তুন থেকে ভোজ্য তেল হয়। তবে এ গাছ মেলায় শুধু প্রদর্শনীর জন্য।
অ্যাভোকাডো, নাশপাতি, ডুমুর, আলুবোখারা, ডোরিয়ন, লঙ্গন, ড্রাগন, খেজুর, করমচা, লটকনসহ হরেক পদের দেশি-বিদেশি ফলের গাছ পাওয়া যাচ্ছে। বন অধিদপ্তরের সহ-বনসংরক্ষক হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, এবারের মেলায় ১০০টি স্টল বসেছে। মানুষকে গাছের প্রতি উৎসাহিত করতেই এ মেলা। বিভাগ ও জেলা শহরগুলো নিজেদের সুবিধামতো শিগগিরই বৃক্ষমেলা শুরু করবে।
ছাদবাগান উপযোগী গাছের সংখ্যাই বেশি। মেসার্স নাহার নার্সারির বিক্রেতা মো. জুয়েল বলেন, ‘ঢাকায় তো আর বেশি জায়গা নেই। মানুষ ছাদেই বাগান করে বেশি। তাই সবাই ড্রাম বা টবে করে গাছ নিয়ে এসেছে। যেগুলো দিয়ে খুব সহজেই ছাদে বাগান করা সম্ভব।’
গাছ ছাড়াও হারবাল পণ্য, হ্যান্ডি ক্র্যাফট, মাটির পাত্র ও ইনডোর প্ল্যান্টের বেশ কয়েকটি স্টল আছে। মেলায় দেখা যাবে নানান ধরনের বনসাই ও অর্কিডের জাত। সালমান তাবিব অর্কিড নেবেন। কিছু দ্বিধাগ্রস্ত হয়েই বলেন, ‘আজকে তো মাত্র সেকেন্ড ডে। আরও কিছুদিন পরে আসব কি না বুঝতে পারছি না। আর এখানে দামও একটু বেশি মনে হচ্ছে।’
মেলায় ঢুকলে বেলি তার ঘ্রাণ দিয়ে স্বাগত জানাবে। জবার কত জাত! সাদা ঝাঁপির মতো ফুটে থাকা অ্যারোমেটিক জুঁই পাওয়া যাবে সব কটি স্টলেই। হাসনাহেনা, ফুরুস, রঙ্গন, গোলাপ, কাঠগোলাপ—কত কী। গাছ লাগানোর পাশাপাশি চোখ ও মনকে সবুজের ছোঁয়া দিতে বৃক্ষমেলায় ঘুরে আসাই যায়।