“ছেলেদের দোষ নাই, আমাদের পোশাকের কারণে আমরা ধর্ষণের শিকার হই”

ধার্মিক পরিবারের পর্দানশীন এক মেয়ে সৈয়দা শারমিন ইস্পাহানী। তিনি তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে একটি চমৎকার লেখা লিখেছেন । যারা ধর্ষন বা যৌন নির্যাতনের জন্য মেয়েদের পোশাককে দায়ী করেন তাদের অন্ধ চোখ খুলে দেয়ার জন্য তার এই সময়োপযোগী লেখাটি আমাদের পাঠকদের জন্য শেয়ার করলাম।

বিভিন্ন গবেষনা ও তথ্য উপাত্ত থেকে এটা প্রমানিত যে বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষনের শিকার হয় নিরীহ নারী ও শিশুরা। কিন্তু সমাজের এক শ্রেনীর মানুষ তার পরও নারীর পোশাককে দায়ী করে ]

আমার আব্বা মাওলানা। পাশাপাশি ব্যবসা করে। আম্মা আমার আব্বার সহকর্মী। আমার ভাই আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট। আমরা ধার্মিক, তবে বাড়াবাড়িতে নেই। রাতে আমরা অনেক সময় গল্প করি। সেদিন ফেসবুকে গার্লস গ্যাংয়ের পেইজ দেখে পড়ছিলাম। রাতে শুরু আমাদের গল্পের আসর।

আব্বাকে বললাম, ‘আব্বা, চট্টগ্রামে কারাতে জানা মেয়েরা একটা গ্যাং বানিয়েছে। এই এই কাজ করে।’ আব্বা বললেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ এদের কামিয়াব করুক’। আমি সওয়াল করলাম, ‘আব্বা, মেয়েদের কারাতে শেখা কি ইসলাম সম্মত?’ আব্বার জওয়াব, ‘শোন মা, ইজ্জতের হেফাজত করা আর মানুষের জান বাঁচানো ফরজ। সুতরাং কারাতে শিখতে বাঁধা নাই।’ আমার সওয়াল, ‘এরা ইভটিজার শায়েস্তা করার কথা বলে’।

আব্বার জওয়াব, ‘নুসায়বা বিনতে কা’ব এত অল্প বয়সে অহুদ, হুনায়ন, খাইবার, ইয়ামামার যুদ্ধে হিস্যা নিতে পারলে, এরা কেন ইবলিসের দলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না? শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াই করা তো জিহাদে

তখন আমার ছোট ভাই বলল, ‘অনেকে যে বলে যা ঘটছে তার জন্য মেয়েদের পোশাক দায়ী…?’ আমার আব্বা তখন কোরান শরীফ বের করলেন এবং বললেন, ‘মেয়েদের পর্দা বলতে অনেকে বোরকা বা হিজাবকে বুঝায়, আসলে কোরানে কোথাও এইসব পোশাকের নাম নাই।

শুধু মাথার কাপড় বুকের ওপর টেনে নিতে বলেছে। সুরা নুরের ৩১ নম্বর আয়াত আর সুরা আহযাবের ৫৯ নম্বর আয়াত দেখ। তার চেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আল্লাহপাক মেয়েদের এসব বলার আগে ছেলেদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখতে এবং যৌনতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন। সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতটা দেখ। পুরুষরা যদি তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে, কে কোন ধরনের পোশাক পরল, কার শরীর কতটুকু দেখা যায়, তা তো বোঝার কথা না। আসল পর্দা হচ্ছে নফসের পর্দা। ওইটা নারী পুরুষ সবার থাকা উচিত।’

আমার ভাইয়ের সওয়াল, ‘বুঝলাম, বোরকা বা হিজাবের কথা কোরানে নেই। মাথায় কাপড় দিতে তো বলেছে, নাকি?’ আব্বার জওয়াব, ‘মাথায় কাপড় দিতে বলেনি। আরবের মেয়েরা আগেও মাথায় কাপড় দিত। ছেলেরা যেমন আগেও পাগড়ী পরত, ধুলা আর সূর্যের তাপ থেকে চুল বাঁচাতে। কোরানে বলা হয়েছে- মাথার সেই কাপড়ের কিছু অংশ বুকের ওপর দিয়ে টেনে নিতে, এতে তারা যে মুসলিম অর্থাৎ নতুন ধর্মের লোক, সেটা চেনা যাবে। নবীজির (সা)প্রচারিত নতুন ধর্মের মেয়েদের চেনার পর কেউ উত্যক্ত করত না, নিজেদের ধর্ম যাতে প্রশ্নবিদ্ধ না হয়, সেই ভয়ে। কিন্তু এখন আখেরি জামানা। মুসলমানের ছেলেরাও দেখি মেয়েদের উত্যক্ত করে। এই জুলুমের ফল আজাব।

’ভাইয়ের সওয়াল, ‘আব্বা, মেয়েরা যদি বেগানা থাকে, নফসের পর্দা ছেলেরা কিভাবে করবে?’ আব্বার জওয়াব, ‘শোন, নফস বা কুপ্রবৃত্তির মাধ্যমেই ইনসান শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে, শয়তানের গোলামী করে। নফসের পর্দা করতে না পারলে মোমিন হওয়া যায় না। আর নফসের পর্দা করতে করতে একসময় নফসের কোরবানি হয়ে যায়। তখনই ইনসানে কামেল হওয়া যায়। ইব্রাহিম (আ) ছয়বার নফসের কোরবানি দিয়েছেন। যখন বিবি সারাহকে শাদি করলেন, তাকে বাদশাহী দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলো, কিন্তু তিনি লোভের কোরবানী দিলেন। বিবি সারাহ যখন হাজেরার নাক-কান ছিদ্র করে দিলেন, তিনি ক্রোধের কোরবানি দিলেন।

 

সম্পাদনা / এমএ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *