কে হচ্ছেন আলোচিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র 

 

এম,তানভীর আলম :

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) আগামী প্যানেল মেয়র কে হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা ও সমীকরণ। কুসিক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা এবং নতুন করে আবার দুদকের তদন্ত ও তৎপরতা শুরু হওয়ায় প্যানেল মেয়র নির্বাচনের বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। প্যানেল মেয়র হতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর জোর লবিং শুরু করেছেন। তবে বেশি আলোচিত হচ্ছে চারজনের নাম। তাদের মধ্যে দুজন আওয়ামী লীগ ও দুজন বিএনপি-সমর্থক। তারা হলেনÑ ৯নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের জমির উদ্দিন খান জম্পি, ১৩নং ওয়ার্ডের বিএনপির শাখাওয়াত উল্লাহ শিপন, ১৪নং ওয়ার্ডের বিএনপির সেলিম খান ও ১৭নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের মো. সোহেল।

 

আওয়ামী লীগের দুজনই স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের সমর্থক। অন্য দুজন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজি আমিনুর রশিদ ইয়াছিনের সমর্থক।

 

সূত্র জানায়, মামলা জটিলতায় থাকার কারণে মনিরুল হক সাক্কু তার সমর্থক কাউন্সিলরদের ব্যাপারে কিছুই চিন্তা করতে পারছেন না। তবে অপর একটি সূত্র জানায়, মেয়র সাক্কু ইচ্ছা করেই এ ব্যাপারে মাথা ঘামাচ্ছেন না। তার কারণ হিসেবে সূত্র জানায়, কৌশলগত কারণে প্যানেল মেয়রটি স্থানীয় সংসদ সদস্য হাজি বাহার-সমর্থকদের দিতেই তিনি উৎসাহী।

 

মনিরুল হক সাক্কুর সঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সখ্য রয়েছে এমন একটি ধারণা কুমিল্লায় চলমান আছে। বিষয়টি মনিরুল হক সাক্কু স্বীকার করে বারবার বলেছেন, এটি উন্নয়নের স্বার্থে হয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে সখ্যতা ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়।

 

সূত্রমতে, সংসদ সদস্যের সঙ্গে সখ্যতাকে দৃঢ় করার স্বার্থে হলেও প্যানেল মেয়রটি তার পক্ষের কাউন্সিলরকে দিতে মেয়রেরও কোনো আপত্তি নেই; বরং সহযোগিতা থাকবে।

 

নানা সমীকরণ মাথায় রেখেই এ ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তি, সজ্জন হিসেবে পরিচিত, মানুষের প্রিয় মুখ এবং সংসদ সদস্যের খুব কাছের লোক কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জমির উদ্দিন খান জম্পিকেই প্যানেল মেয়র করতে পারেন বলে সূত্র জানায়।

 

সূত্র আরও জানায়, জমির উদ্দিন খান জম্পি শুধু একজন কাউন্সিলরই নন; তিনি সবার কাছে একজন প্রিয় মুখ হিসেবেও পরিচিত। তাই সব গুঞ্জন শেষে জমির উদ্দিন খান জম্পিকেই হয়তো কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র পদ দেওয়া হতে পারে।

 

জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সদ্য নির্বাচিত মেয়র মনিরুল হক সাক্কু দুদকের দুই মামলায় জড়িত। ঢাকার রমনা থানায় করা একটি মামলায় সম্পদ সম্পর্কে তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সম্পত্তি ক্রোকেরও আদেশ দিয়েছেন আদালত। ওই আদেশের পর মনিরুল হক সাক্কু এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে যে কোনো দিন আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইতে পারেন বলেও তার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন।

 

এ ছাড়া মনিরুল হক সাক্কুর ক্ষমতাকালীন কিছু অভিযোগ নিয়েও দুদক নতুন করে তদন্ত করছে বলেও জানা গেছে। এসব তদন্তের ফলে যদি সিলেট, রাজশাহী, হবিগঞ্জের মতো ঘটনা ঘটে, আর তার পরিণতি বরণ করতে হয় কুমিল্লা সিটি মেয়রকে, তা হলে প্যানেল মেয়রই নগরীর মূল ভূমিকায় থাকতে পারেন বলে অনেকে মনে করছেন।

 

গত ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন হলেও এখনো শপথ নেননি সাক্কু। কবে নেবেন তার দিনক্ষণও চূড়ান্ত হয়নি।

 

নির্বাচনে সাধারণ কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ১৫, বিএনপির ৮ ও জামায়াতের ৩ জন নির্বাচিত হন। সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের ৪, বিএনপির ৩ ও স্বতন্ত্র একজন নির্বাচিত হন। এ ছাড়া আজ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের স্থগিত দুটি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানেও সংরক্ষিত আসনে বিএনপির প্রার্থী একটি কেন্দ্রে বেশ কিছু ভোটের ব্যবধানে, অন্যটিতে প্রায় দেড়শ ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *