আদর্শীক পরিবারের সদস্য থেকে নেতৃত্ব চায় তৃণমূল
ফেনী :
দীর্ঘদিন ৭বছর পর ১লা জুন সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নেতা নির্ভর নেতৃত্ব থেকে বেরিয়ে এসে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচনের দাবি তৃণমূলের। অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডদের বাদ দিয়ে আদর্শীক পরিবারের সদস্য থেকে নেতৃত্ব চায় ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা কর্মী নয়, নেতাদের দরবারেই ঘূরে বেড়াচ্ছেন। পদ পদবীর জন্য জোর লবিং করছেন অনেকে।
জানা গেছে, সভাপতি পদে ফেনী কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মোজাম্মেল হক রায়হান, সোনাগাজী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নেয়ামত উল্যাহ, মতিগঞ্জ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক একরামুল হক সোহেল, আমিরাবাদ ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি মফিজুর রহমান চেয়ারম্যানের ছেলে মাহমুদুর রহমান রাসেল এবং সাধারন সম্পাদক পদে মতিগঞ্জ ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক আবদুল মোমিন’র ছেলে সাখাওয়াত হোসেন ফাহাদ, উপজেলা আ’লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শফি উল্যাহ চেয়ারম্যান’র ছেলে হেমায়েত উল্যাহ, পৌর কাউন্সিলর আইয়ুব খানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন মিশু খান, ফেনী কলেজের ছাত্র মোর্শেদ আলম খোন্দকার, পৌর ছাত্রলীগ নেতা সায়মন ভূঞা জেলা ছাত্রলীগের দপ্তরে জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন।
উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আবদুল মোতালেব রবিন বলেন, ছাত্রলীগের সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। আশাকরি একটি স্মরণীয় ও সুশৃঙ্খল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ১লা জুন সোনাগাজী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উক্ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন। উদ্বোধন করবেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু, সম্মেলনে প্রধান বক্তা জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক নুর করিম জাবেদ। সভাপতি সম্পাদক পদে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জীবন বৃত্তান্ত জেলা ছাত্রলীগের দপ্তরে জমা দিয়েছেন। তবে নেতা নির্বাচন করবেন আমাদের অভিভাবক জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপি।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৫সালের ৮মে উপজেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে সাইদুল হক সভাপতি ও আবদুল মোতালেব রবিন সাধারন সম্পাদক মনোনীত হয়। প্রায় দুইবছর পরও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি তারা। এক বৃদ্ধকে লাঞ্চিত করায় বহিষ্কার হয় সাধারন সম্পাদক আবদুল মোতালেব রবিন এবং স্থানীয় যুবলীগ নেতাদের হুমকির মূখে দেশছাড়েন সভাপতি সাইদুল হক। এরপর কাগজে কলমে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষনা দেয় তৎকালিন জেলা ছাত্রলীগ। কমিটিতে আবদুল মোতালেব সভাপতি ও ইফতেখার হোসেন খোন্দকার সাধারন সম্পাদক মনোনীত হন। মাত্র তিন মাসের মাথায় মাদক সেবনের দায়ে বহিষ্কার হয় সাধারন সম্পাদক ইফতেখার হোসেন । এই কমিটিও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। পরে মঙ্গলকান্দি ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি মীর এমরানকে উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদকের দায়ীত্ব দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। রবিন ও এমরানের দুই সদস্যের কমিটি দিয়েই চলছে তিনবছর। এই করুণ পরিনতির জন্য নেতৃত্ব নির্বাচনে ত্রুটিকেই দায়ী করছেন সাবেক নেতারা।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সলিম উল্যাহ সেলিম জানান, তৃণমূলের মতামত নিয়ে ১৯৯৬সালে সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের কমিটি হয়েছিল । ওই কমিটিতে সভাপতি হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। খুব দ্রুত সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করা হয়েছিল । এরপর আর সেভাবে গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে কোন কমিটি করা হয়নি। ২০০০সালে মিজানুর রহমানকে সভাপতি করে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়েছিল । মিজান পদত্যাগ করেই দেশত্যাগ করেছিল। ২০০৩সালে একটি কর্মীসভার মাধ্যমে জামাল উদ্দিন নয়নকে সভাপতি করে উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়েছিল । সেও পদ নিয়েই দেশ ছেড়েছে। ওই কমিটির সাধারন সম্পাদক মোশারফ হোসেন ২০১২সালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিল। এভাবে গত দুই যুগে এখানে নেতৃত্ব নির্বাচনে ত্রুটির কারনে ছাত্রলীগে নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি।
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক সৈয়দ দীন মোহাম্মদ জানান, অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে একটি সম্মেলন হয়। ছাত্রলীগে পদ পেতে কেউ কেউ নেতার সাথে সক্ষতা গড়ে তুলে আবার অনেকে তৃণমুল কর্মীদের সাথে সক্ষতা গড়ে তুলে। যেনতেন একটি পকেট কমিটি ঘোষনার পর যোগ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আ’লীগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের ইতিহাস ঐতিহ্য ও গৌরবের বিষয়টি মাথায় রেখে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের তথা আদর্শীক পরিবারের সদস্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন করা উচিত।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল আহমেদ তপু বলেন, সোনাগাজীতে দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হচ্ছে এতে নেতাকর্মীদের মাঝে বিপুল উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। আশাকরি একটি গ্রহনযোগ্য কমিটির মাধ্যমে তাদের উৎসাহ আরো বৃদ্ধি পাবে। অতীতের ন্যায় নতুন নেতৃত্বের হাত ধরেই সকল আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রাখবে সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগ।