সিটিজেন জার্ণালিজম -মোহাম্মদ ফজলুল হক ভুইয়া

 

 

শিরোণাম দেখে কেউ হয়তে আতকে উঠতে পারে, যে এটা আবার কি? সাংবাদিকতা বলতে যা বুঝাতো প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে যারা কাজ করেন বা মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাদের সংবাদ ছাপা বা প্রকাশ করা হয় তাদেরকেই সাংবাদিক বা গন মাধ্যম কর্মী বলা হয়। হাল জামানায় এর বিপরীতে আরো একটি ধারনা শক্তিশালী হচ্ছে। তা হচ্ছে সিটিজেন জার্ণালিজম অর্থাৎ নাগরিক সাংবাদিকতা এই ধারনাটি জনমনে বদ্ধমূল হচ্ছে। বিভিন্ন জনপ্রিয় যোগযোগ মাধ্যমে তড়িৎ গতিতে সাংবাদ প্রকাশ পাচ্ছে। জনগণের মাঝে তা দ্রুত খবর পৌছে যাচ্ছে। যদিও এসব জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ফেইক খবরের ছড়াছড়িও রয়েছে ব্যাপক। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো অতুলনীয় জনপ্রিয় ও অতিশয় শক্তিশালী। প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক হাউজগুলোতে প্রায়ই খরব সেন্সরশীপের কবলে পড়ে থাকে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবাদ প্রচার কেউ রুখে দিতে পারে না। সিলেটের রাজন হত্যাসহ অনেক ঘটনা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার আড়ালে থেকে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে সংবাদগুলো প্রচার পেয়েছিল। পরে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সংবাদ সংগ্রহ করেছিল। প্রত্যেক মিডিয়া প্রতিষ্ঠান তাদের আলাদা ফেসবুক পেইজ রয়েছে। প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চলেও গুরুত্বপূর্ণ ঘটে যাওয়া সংবাদ দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার পাচ্ছে এবং জনগণ তা জানতে পারছেন। যেখানে মিডিয়া কর্মীরা অনুপস্থিত সেখানকার মুহূর্তের ঘটনা নাগরিক নিজেই তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাউন্টে পোস্ট দিয়ে জনগণকে জানিয়ে দিচ্ছেন। নাগরিক সমাজ নিজেরাই মুহূর্তের ঘটে যাওয়া ঘটনার সংবাদ ও ছবি প্রচার করেছেন। যার ফলে জনমনে সিটিজেন জার্ণালিজম বা নাগরিক সংবাদিকতা দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ইদানিং একটি জরিপে প্রকাশ পেয়েছে, ফেসবুক পরিচলানায় বিশ্বে ঢাকা দ্বিতীয়। দেশে দেশে সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে জনগণের মাঝে তাদের বক্তব্য দ্রুত ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছর বাংলাদেশ সফরের রওনার আগ মূহূর্তে টুইট করেছিলেন। তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রজব তাইয়েব এরদোগান তার হাতে থাকা আই ফোনের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে সেনা অভ্যুত্থান নস্যাৎ করে দিয়েছিলেন। আমাদের দেশেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের প্রচারণা চালিয়ে আসছেন। শুধু তাই নয় অনেক কোম্পানী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত পণ্যের প্রচারণা চালাচ্ছে। জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম গুলো এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী, যার কারণে প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর প্রায় মুখাপেক্ষী। এখন মানুষ আর পরের দিনের খবর জানার জন্য অপেক্ষায় থাকে না। হাতে থাকা এন্ড্রয়েড মোবাইল দিয়ে দেশসহ তাবৎ দুনিয়ার খবর জেনে নিচ্ছে। খবর এখন জনগণের হাতে মুঠোয়। তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর আগামী প্রজন্মকে সাংবাদিকতায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

 

লেখক :

জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিক, অনলাইন লেখক,

সামাজিক গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী। নান্দাইল,ময়মনসিংহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *