সুনামগঞ্জ সীমান্তে চোরাচালান জমজমাট : ১১ চোরাকারবারী গ্রেফতার

মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়া- সুনামগঞ্জ :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার, ছাতক, বিশ^ম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদর, মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার সীমান্ত এলাকায় জমজমাট হয়ে উঠেছে চোরাচালান বাণিজ্য। সরকারে লক্ষলক্ষ টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চিহ্নিত চোরাকারবারীরা সিন্ডিকেটে মাধ্যমে প্রতিদিন ভারত থেকে অবৈধ ভাবে মহিষ, গরু, ঘোড়া, কয়লা, পাথর, কাপড়, কমলা, কাঠ, বাঁশ, বিড়ি, মদ, গাঁজা, হেরুইন, ইয়াবা ও অস্ত্র পাচাঁর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে- প্রতিদিনের মতো আজ শনিবার (১১ ডিসেম্ভর) ভোরে জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলা বাংলাবাজার সীমান্ত দিয়ে চোরাকারবারীরা ভারত থেকে ওপেন বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যসহ মহিষ পাচাঁর করছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওসি দেবদুলাল ধরের নেতৃত্বে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৮টি অবৈধ মহিষসহ মনির হোসেন (৪৫) নামের এক চোরাকারবারীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করেছে। ওই সময় অন্য চোরাকারবারীরা পালিয়ে যায়।

গ্রেফতারকৃত চোরাকারবারী মনির ওই উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের বীরেন্দ্রনগর গ্রামে। এর আগে পাশর্^বর্তী তাহিরপুর উপজেলার চারাগাঁও, বালিয়াঘাট ও বীরেন্দ্রনগর এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত
থেকে পাচাঁরকৃত কয়লা বোঝাই ২টি ইঞ্জিনের নৌকাসহ চোরাকারবারী শুক্কুর আলী, আবু তালেব, মনির মিয়া, সাকাওয়াত হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করাসহ অবৈধ ভাবে চুনাপাথর পাচাঁরের অভিযোগে সীমান্ত চোরাকারবারী নুরুল হককে অর্ধলক্ষ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালাতের ম্যাজিস্ট্রেট তাহিরপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলাউদ্দিন।

এছাড়াও তাহিরপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ তরফদারের নেতৃত্বে গত এক সপ্তাহে পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে কয়লা, মদ ও
ইঞ্জিনের নৌকাসহ বালিয়াঘাট গ্রামের চোরাকারবারী রুহুল আমিন, জাফর আলী, জাকির হোসেন, জয় হোসেন ও লাকমা গ্রামের চোরাকারবারী ছিদ্দু মিয়া, হেলাল মিয়াসহ ৬জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিছে। এঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ বাদী হয়ে চারাগাঁও, লালঘাট ও লাকমা গ্রামের চোরাকারবারী বিজিবির সোর্স পরিচয়ধারী ইয়াবা কালাম মিয়া, তার সহযোগী খোকন মিয়া, মানিক মিয়া, জামাল মিয়া, রতন মহলদার, শরীফ মহলদার, কামরুল মিয়া, তরিকুল ইসলাম, মোক্তার মহলদার, ফেরদৌস মিয়া, মানিক মহলদারসহ গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে থানায় পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

কিন্তু বিজিবির সোর্স পরিচয় দিয়ে সাংবাদিক, পুলিশ ও বিজিবির নাম ভাংগিয়ে ভারত থেকে পাচাঁরকৃত অবৈধ মালামাল ও ইঞ্জিনের নৌকা হতে বিভিন্ন হারে চাঁদা উত্তোলনকারী চোরাকারবারীদের সর্দার জিয়াউর রহমান জিয়া, ইয়াবা কালাম মিয়া, রমজান মিয়া, শফিকুল ইসলাম ভৈরব, লেংড়া জামাল, একদিল মিয়া, হরমুজ আলী, রহমত আলী, কুদ্দস মিয়া, শহিদুল্লাহ, বাবুল মিয়া, হারুন মিয়া, আজিজ মিয়া, সাজু মিয়া, কাসেম মিয়া, কামাল মিয়া, আবু বক্কর, আলমগীর, রফিকুল ইসলাম, এরশাদ মিয়া ও জজ মিয়াগং সহ তাদের দুই গডফদার আইনের আওতায় না আসার করণে বন্ধ হচ্ছেনা সীমান্ত চোরাচালান।

বর্তমানে তারা উপজেলা বালিয়াঘাট, চারাগাঁও, টেকেরঘাট, চাঁনপুর, লাউড়গড় ও বীরেন্দ্রনগর সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রতিদিন অবৈধ ভাবে কয়লা ও পাথরসহ মদ, গাঁজা, ইয়াবা, কমলা, বিড়ি, কাঠ, গরু, ঘোড়া ও অস্ত্র পাচাঁর করে ইঞ্জিনের নৌকা বোঝাই করে
যাদুকাটা ও পাটলাই নদীপথে নেত্রকোনা জেলার কমলাকান্দাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা পাঠাচ্ছে। তাই সীমান্ত চোরাচালান ও চাঁদাবাজি চিরতরে প্রতিরোধের জন্য সোর্স পরিচয়ধারী ও তাদের ২ গডফাদারকে শীগ্রই আইনের আওতায় নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন এলাকাবাসী।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন- সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে যারা চোরাচালান ও চাঁদাবাজি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক মাহবুবুর রহমান জানান- সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য বিজিবির পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *