বাবা কোথায় বাবাকে এনে দাও : সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত নোবেলের দুই শিশুর আকুতি

সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত নাছির উদ্দিন নোবেলের দুই পুত্র নিহাল ও নাবিল ।

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি:
শোকে কাতর হয়ে শয্যাশায়ী হয়েছেন সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা নাছির উদ্দিনের মা রোফেয়া খানম। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে তার দুই শিশু ছেলে নাবিল (৯) ও নিহাল (৬)। মরদেহ বাড়িতে আনার আগে দাদী রোফেয়া খানমের পিছূ ছাড়ছে না দুই নাতি।

বার-বার জিজ্ঞেস করছে আমার বাবা কোথায় ? বাবাকে এনে দাও। দুই শিশু জানে না তাদের বাবাকে সন্ত্রাসীরা খুন করেছে। এসব দৃশ্য দেখে উপস্থিত সবাই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। পরিবারে চলছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বনের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ।

১৮ আগষ্ট বুধবার দুপুর ১টার দিকে মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গ থেকে চকরিয়া উপজেলার পূর্ববড় ভেওলায় তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা নাছির উদ্দিনের নিজ বাড়িতে নিয়ে আসলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়।

এদিকে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত চট্টগ্রাম ওমর গণি এমএইস কলেজের সাবেক সমাজ কল্যাণ সম্পাদক তরুণ আওয়ামীলীগ নেতা নাছির উদ্দিন নোবেলের জানাজায় শোকাহত মানুষের ঢল নেমেছে। ১৮ আগষ্ট বুধবার বিকাল ৫টার দিকে ূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের জয়নাল আবেদীন মহিউচ্ছুন্নাহ মাদ্র্রাসা মাঠে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জানাজায় অংশনেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।

সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার থেকে মরদেহ আনার আগে তার বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, এলাকার লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীরা নাছির উদ্দিনকে এক পলক দেখার জন্য জড়ো হতে থাকে। এসময় হাজার-হাজার লোকের সমাগম হয়। তিল ধরনের ঠাঁই ছিলনা বাড়ির আশেপাশে।

জানাযায় কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, আমি আজকে জানাযা মাঠে আপনাদের ওয়াদা দিয়ে গেলাম ছাত্রলীগ নেতা নাছির উদ্দিন নোবেল হত্যাকন্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। নিরাপরাধ কোন ব্যক্তি যাতে হয়রানী না হয় তার বিষয়েও সজাগ রয়েছি।

জানাযায় অংশনেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এমআর আজিম, মাতামুহুরী থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বাবলা, সাধারণ সম্পাদক মহসিন বাবুলসহ এলাকার সর্বস্থরের মানুষ।

পূর্ববড় ভেওলার সিকদার পাড়ার বাসিন্দা মো. বদর মিয়া বলেন, মূলত জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে। বিরোধীয় জমির মালিক নাছির উদ্দিনের দাদা। এসব জমি তারা দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলে রয়েছেন। ইত্যবসরে একই ইউনিয়নের হাজী রওশন আলী সিকদার পাড়ার বাসিন্দা আমির হোসেন মেম্বারের নামে দিয়ারা রেকর্ড চুডান্ত হয়। এতে ওই জমির মালিকানা দাবী করে আসছে তারা।

১৭ আগষ্ট মঙ্গলবার সকালে এ জমিতে নাছির উদ্দিনের বর্গাচাষী চাষ করতে গেলে তাকে মারধর করেন আমির হোসেনের ভাড়াটিয়া এনাম, শামিম, রুবেল, হেলাল, রমিজ ও শহীদ। পরে এ বিষয়ে এনামের সাথে মোবাইলে কথা বলে নাসির উদ্দিন ১০-১২জন লোক নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে এনামের নেতৃত্বে নাছির উদ্দিন ও তার সাথে থাকা লোকজনের উপর উপুর্যপরী গুলি ছোঁড়ে। এসময় ঘটনাস্থলে মারা যায় নাছির উদ্দিন নোবেল। আহত হয় তার সাথে থাকা ১২জন।

পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক নাসির উদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। আহতদের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, নাছির উদ্দিনকে প্রতিপক্ষের লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। নাসির ঘটনাস্থলে যাওয়ার পরপরই তারা ৮টি বন্দুক দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। আমার ভাই আজিজুল হক ও এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, নাসির উদ্দিন নোবেল হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনো এজাহার দেয়া হয়নি। মরদেহ দাফনের কাজে ব্যস্থ থাকায় হয়তো এজাহার দিতে দেরি হতে পারে। তবে এজাহার জমা দিলে মামলা নেয়া হবে। ঘটনার সাথে জড়িতদের ধরতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *