মোঃ জহিরুল হক খাঁন সজীব, সোনাগাজী প্রতিনিধি:-
ফেনী জেলা সোনাগাজী উপজেলার ৯নং নবাবপুর ইউনিয়নের মহদিয়া গ্রামের প্রায় সবার প্রিয় শিক্ষক মাস্টর নেছার উল্যাহ খাঁন৷ যিনি ১৯৭১ সালে ৯নং নবাবপুর ইউনিয়নে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ৯নং নবাবপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং যুদ্ধ কালীন সময়ে সংগ্রাম পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন৷ তিনি আমিরাবাদ বি সি লাহা স্কুলের শিক্ষকতা করার সময় কয়েকজন যুবক শিক্ষককে সাথে নিয়ে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিলেন৷ যার ফলে উনাকে অনেক চাপের মুখে পতিত হতে হয়েছিলো৷ কিন্তু দুঃখের বিষয় মুক্তিযুদ্ধে পরামর্শক এবং এলাকার যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহ দিয়ে সক্রিয়কারী , দেশ স্বাধীন হলো ৪৬ বছর পার হল, কিন্তু জাতীর এই দুঃসময়ের নাবিক আজ তার মুক্তিযোদ্ধা সনধ নাই। উনার সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি বলেন, দেশের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি, সেবা করেছি এর থেকে বড় কি পাওয়ার আছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও কিছু পাইনি৷ আমার মনে হয় তুমি চাইলেও কিছু করতে পারবেনা। যারা করতে পারতেন তারা তো আমার জন্য কিছুই করেন নাই৷ কত জন দায়িত্বশীলকে বলেছি, দেখা করেছি, সবাই বলেছে সব ঠিক করে দিবেন, কিন্তু কই করলেন? সনদটা ও তো দিলেন না৷ দেশ স্বাধীন হয়েছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় জাতী মাথা তুলে দাঁডিয়েছে৷ কিন্তু আমিতো সর্বোশ্রান্ত৷ আমি শিক্ষিত লোক, সবাই স্যার ডাকে কাউকেতো আমার করুন পরিনতির কথা মুখ ফুটিয়ে বলতেও পারছিনা৷ জন দরদী নেত্রী দয়া করে যদি আমার নিরব আর্তোনাদ শুনেন, তাহলে চির কৃতঙ্গ থাকবো৷ কিনি আরো বলেন, সোনাগাজী এরিয়া ছাডাও লেমুয়া পর্যন্ত আমাদের আন্ডারে ছিলো৷ আমরা কয়েক জনের জন্য রাজাকারদের বুলেট বাজেট ছিলো যেখানে আমাদেরকে পাবে সেখানেই গুলি করার ঘোষনা ছিলো৷ আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন এটাইতো বড৷ সাবেক এমপি তালেবালি সাহেবের সাথে আমাদের যোগাযোগ ছিলো৷ ডাঃ হুদা মিয়া, ইসমাইল কেরানী, নেছার উল্ল্যাহ খাঁন, খাজা মিয়া, উনারা মুক্তিযোদ্ধে বীর ছিলেন, ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের এই এলাকার সংগঠক৷ নবাবপুরে কোন মুক্তিযোদ্ধা জয়েন্ট করতে চাইলে উনাদের সুপারিশ লাগতো৷ বাংলাগেশের প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের ছাডপত্র দিয়ে ভারতে টেনিং করানোর জন্য পাঠাতেন এই সংগঠক দল৷ নেছার উল্ল্যাহ খাঁন আরো জানান, ডাঃ হুদা মিয়া, ইসমাইল কেরানী, খাজা মিয়া আমরা এক সাথে কাজ করেছি৷ ভারতে টেনিং করানোর জন্য শত শত যুবকদের ছাডপত্র আমরা দিয়েছি৷ কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আজ আমারই ছাডপত্র নেই৷
মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আহম্মদ, কবির আহম্মদ, জামাল উদ্দীন বলেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ তিনি আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন৷ সোনাগাজী থানার বিভিন্ন অপারেশনে আমাদের সাথে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহন করেছিলেন৷
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল কাদের (সওদাগর বাডি,সফরপুর) মুক্তিযোদ্ধা ফয়েজ আহম্মদ (মিদ্দাবাডি,সফরপুর), মনির হাজারী (হাজারী বাডি,সফরপুর)তারা সবাই একযোগে বলেন, আমরাতো জানতাম না তিনি সনদ পাননি৷ উনারাতো উপরের লেভেলের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন (এডভাইজার)৷ নেছার উল্ল্যাহ খাঁন মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করার অপরাধে উনার চাকরি টিকাতে অনেক মুচলেকা দিতে হয়েছে৷ এবং গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের (পাইকার বাডি, দৌলতপুর) সাথে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে নেছার উল্ল্যাহ খাঁনের অবদানের কথা৷ সব মুক্তিযোদ্ধা একই সুরে বলেন তিনি সঠিক মুক্তিযোদ্ধা৷ হয়তো একটি পক্ষ চায়না উনি স্বীকৃতি পাক৷ সেই জন্য হয়তো বিলম্ব হচ্ছে৷
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমিটির সভাপতি শাহজাহান জানান, আমরা তরুন প্রজম্ম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি৷ আমরা তরুন প্রজম্ম চাই উনাকে মুক্তিযোদ্ধার সম্মান টুকু দেওয়া হোক । যেন মৃত্যুর পর উনার বুকের উপর লাল সবুজের পতাকা দিয়ে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান ( গাড অব অনার) দিয়ে দাপন করা হয়।