আগামী সাতদিন টর্নেডো ঝুঁকিতে বাংলাদেশ: সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান

 

বাংলার দর্পন ডটকম  ডেস্ক- আগামী সাতদিন বাংলাদেশে কালবৈশাখীর কারণে সৃষ্ট টর্নেডোর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, প্রতি বছর এপ্রিল মাসের ৫ তারিখ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত সময় টর্নেডোর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে, দুয়েকদিন আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ সময় বিবেচনা শুরু হয়। এই ধরনের টর্নেডো ঝড়ের জন্য বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ফরিদপুর ও মাদারিপুর এবং চাঁদপুর অঞ্চল।

ফাইল ফটো

বিদ্যুৎ চমকানো, বজ্রপাত, বজ্রসহ ভারী বর্ষণ এবং এমনকি বন্যার সময়ও এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিভিন্ন অংশে প্রচণ্ড ঝড় হয় যা কালবৈশাখী ঝড় নামে পরিচিত। বাংলাদেশ এবং ভারতের পূর্ব অংশে এ ভয়ঙ্কর ঝড় হয়ে থাকে। আর এই ঝড়ের ফলে মাঝে মাঝে সৃষ্টি হয় টর্নেডো। বিগত কয়েক বছরে কালবৈশাখীর কারণে টর্নেডোর মাত্রা বেড়েছে।

কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে সৃষ্ট টর্নেডো নিয়ে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বেগম তাসলিমা ইমাম বলেন: বিগত কয়েক বছরে কালবৈশাখীর ঝড়ের কারণে টর্নেডো বেড়ে গেছে।

“টর্নেডো তৈরি হতে খুব কম সময় নেয় এবং এই দুর্যোগটি নিয়ে পূর্বাভাস দেয়া খুব কঠিন। তবে উন্নত দেশগুলো টর্নেডোকে ‘চেস’ করতে পারে বা ‘মনিটর’ করতে পারে। তাই আমাদেরকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এতে করে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমানো সম্ভব।”

উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে কালবৈশাখী ঝড় এবং এ থেকে সৃষ্ট টর্নেডোর ধ্বংসাত্মক এলাকা ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন: কালবৈশাখী ঝড় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে নিচের দিকে নেমে আসছে। এখন দেশের মধ্যবর্তী জেলাগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ফরিদপুর ও মাদারিপুর এবং চাঁদপুর অঞ্চল টর্নেডোর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাংশের অঙ্গরাজ্যগুলোতেও এই ধরনের টর্নেডো হয়। সেখানে শক্তিশালী টর্নেডো এতো বেশি আঘাত হানে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ওই অঞ্চলটি টর্নেডো শব্দের প্রায় সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে। টেক্সাসের দক্ষিণ থেকে মিনোসেটার উত্তর পর্যন্ত ‘টর্নেডোর সরু গলি’ হিসেবে পরিচিত। যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশেও টর্নেডো হচ্ছে।

বিগত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা দেখতে পেয়েছেন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে কালবৈশাখী ঝড়ের সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঝড়ো হাওয়ার পাশাপাশি মূষলধারে বৃষ্টিপাত হতে পারে। এখান থেকে বড় ধরনের ঝড়ের ঝুঁকি নেই। তবে ‘টর্নেডোর সরু গলি’র মতো পরিবেশ হলে চলতি মাসের ৫ থেকে ১১ তারিখের দিকে ঝড়ের কারণে টর্নেডোর আশঙ্কা আছে। তবে মে-জুন মাসে মৌসুমী বৃষ্টিপাত শুরু হয়ে গেলে কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে সৃষ্ট টর্নেডোর সম্ভাবনা কমতে থাকবে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাবনার সুজানগর উপজেলায় হঠাৎ টর্নেডোর আঘাতে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ।

টর্নেডোয় ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন জানান, গতকাল সন্ধ্যায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ টর্নেডো আঘাত হানে। এক মিনিটেরও কম সময় ধরে চলা ওই টর্নেডোর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় উপজেলার চিনাখড়া, চরগোবিন্দপুর দুপপাড়া ও হাসেমপুর গ্রামের অনেক ঘরবাড়ি।

সরেজমিনে দেখা যায়, শক্তিশালী এই টর্নেডোর আঘাতে বিভিন্ন গ্রামের অন্তত পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘর ও গাছ চাপা পড়ে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক মানুষ। ঘটনার পর থেকে সবকিছু হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *