যুক্তরাষ্ট্রে পুরস্কার পেলেন সাহসী মেয়ে শারমিন

 

বাংলার দর্পন ডটকম :

নিজের বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ করে লেখাপড়ার পথে অটল থাকা ঝালকাঠির সেই সাহসী শারমিন আক্তার এবার আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হলেন। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেক্রেটারি অব স্টেটস ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ (আইডব্লিউসি) ২০১৭’ পুরস্কার গ্রহণ করেন শারমিন।

শারমিনের এই সাহসিকতার কথা প্রথম আলোয় প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের (টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে) অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা গত বছর তাঁর প্রিয় চার নায়কের একজন হিসেবে শারমিনকে বেছে নিয়েছিলেন।

গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শারমিনসহ বিশ্বের ১৩ জন সাহসী নারীর হাতে আইডব্লিউসি ২০১৭ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানটি রাইট সাইড ব্রডকাস্ট নেটওয়ার্কে সরাসরি প্রচারিত হয়। দেশটির রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস শ্যাননের উপস্থাপনায় পুরস্কার হাতে তুলে দেন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। লাল-সবুজ শাড়ি পরে শারমিন পুরস্কার গ্রহণ করেন।

ঝালকাঠির শারমিন আক্তার ২০১৫ সালে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাঁর মা তাঁকে জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বান্ধবীর সহযোগিতায় থানায় গিয়ে মা ও কথিত স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এরপর তিনি তাঁর দাদির কাছে থেকে লেখাপড়া করছেন। শারমিন আক্তারের সাহসিকতা নিয়ে গত বছরের ৮ নভেম্বর প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ১১ নভেম্বর অধিনায়ক ও নায়কেরা নামে একটি তথ্যচিত্র বানানো হয়। সেখানে মাশরাফি বিন মুর্তজার প্রিয় চার নায়কের একজন ছিলেন এই শারমিন।

২০০৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশের ১০০ জনের বেশি নারীকে উইমেন অব কারেজ সম্মানে ভূষিত করে। যাঁরা শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে ব্যতিক্রমী সাহসিকতা এবং অনেক সময়ই জীবনের ঝুঁকি প্রদর্শন করেন, তাঁদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

গতকাল ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পেজে শারমিনের একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়। সেখানে শারমিন বলেন, ‘আমি চাই আমার মতো সবাই এমন করে দেখাক। নিজের বাল্যবিবাহ আটকাক। যেন দুর্বল না হয়ে পড়ে, নিজের মধ্যে সাহস রাখে।’ শারমিনের কাছে এই পুরস্কার শুধু তাঁর নিজের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্জন। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে মেলানিয়া ট্রাম্প বলেন, এখানে যাঁদের সম্মানিত করা হলো, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজের জন্য, অন্যের জন্য লড়েছেন।

শারমিনের পাশে থেকেছেন তাঁর দাদি দেলোয়ারা বেগম। ঝালকাঠির সত্যনগর গ্রাম থেকে গতকাল মুঠোফোনে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমারে আমেরিকার অফিস থেইকা ফোন দিয়া বলছে, খালাম্মা দোয়া করেন, আপনার নাতনি একটা অ্যাওয়ার্ড পাইছে।’ আমেরিকায় যাওয়ার আগে দেলোয়ারা বেগম নাতনির সঙ্গে ঢাকায় ছিলেন।

বাংলাদেশ ছাড়াও এ বছর বতসোয়ানা, কলম্বিয়া, কঙ্গো, ইরাক, নাইজার, পাপুয়া নিউগিনি, পেরু, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, তুরস্ক, ভিয়েতনাম ও ইয়েমেনের ১২ জন নারী নিজ নিজ কাজের জন্য ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ পুরস্কার পেয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *