নিয়াজ মোহাম্মদ:
পৌরসভার আদলেই চলছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশন ঘোষণার দেড় যুগ পরও নিজস্ব নগর ভবন পায়নি বরিশাল। পুরনো পৌর ভবনে নগর ভবনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই চলছে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম। তার ওপরে গত চার বছরে বেড়েছে দেনার বোঝা। প্রয়োজনের চেয়ে তিনগুণ বেশি জনবল নিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ছে নগর ভবনের কার্যক্রম। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের বিশাল ব্যবধান নগর ভবনকে দিনে দিনে দন্যতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় বছর শেষে ঘাটতি দাঁড়ায় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ফলে নগরীর কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের পরিবর্তে দিনে দিনে নতুন নতুন সমস্যা যুক্ত হচ্ছে।
২০০১ সালে বরিশাল পৌরসভা সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা হয়। তখন পৌর ভবনেই নগর ভবনের কার্যক্রম শুরু হয়। নতুন নগর ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি কোনো মেয়রের আমলেই পূরণ হয়নি।

জানা গেছে, ২০০১ সালে পৌরসভার ২৫৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়েই সিটি কর্পোরেশনের পথচলা শুরু হয়। ২০০৩ সালে জনবল বৃদ্ধি করা হয় ৪শ ৫৭ জনে। সর্বশেষ সরকারি হিসাবে এ সিটি কর্পোরেশনে জনবল নির্ধারণ করা হয় ৭৫০ জন। কিন্তু বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা দুই হাজার তিনশ জন।
নগর ভবন সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের খুশি রাখতে এসব জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নগর ভবনে ৫শ কর্মকর্তা -কর্মচারী বসারও স্থান দেওয়া সম্ভব নয়। একই কক্ষে বসে একাধিক কর্মকর্তাকে বিভিন্ন শাখার কাজ করতে হয়। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে এদের বেতন পরিশোধ করা। বছরে নগর ভবনের আয় মাত্র ২০ কোটি টাকা। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধে ব্যয় হয় ৩৬ কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে পানি সরবারহ, জ্বালানি, পরিবহন ও স্টেশনারিসহ যাবতীয় খরচ মিলিয়ে ব্যয় দাঁড়ায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। তাতে বছরে ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৬ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া পড়েছে। এ নিয়ে নগর ভবনে চলছে আন্দোলন। ২৩ কোটি টাকা বিদ্যুত্ বিল বকেয়া থাকায় ইতোমধ্যেই বিদ্যুত্ বিভাগ সিটি কর্পোরেশনের ৬টি বিদ্যুত্ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ফলে ঐ সব এলাকার পানি সরবারহ বন্ধ হয়ে গেছে। মোটা অংকের বিদ্যুত্ বিল বকেয়া থাকায় নব-নির্মিত ওয়াটার প্লান্টে সংযোগ দেয়নি বিদ্যুত্ বিভাগ। ফলে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সাত মাস পরও চালু করা সম্ভব হয়নি প্রকল্পটি। সিটির ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকার সড়ক ভেঙে-চুরে একাকার হয়ে আছে। বিবির পুকুরসহ সৌন্দর্য্য বর্ধন করা এলাকাগুলো সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে।
পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরের সময় ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা যুক্ত করা হয়। এ এলাকাগুলো আগে জাগুয়া, চরবাড়িয়া, রায়পাশা-কড়াপুর, কাশিপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা এ গ্রামগুলোর বাসিন্দারা এখনো কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে নগরীতে যাতায়াত করেন। অধিকাংশ এলাকা ডোবা-নালায় ভরপুর। রসুলপুর, মোহম্মদপুরসহ অধিকাংশ এলাকার মানুষ নৌকায় করে নগরীতে যাতায়াত করেন।
নগরীর অধিকাংশ খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় বর্ষা কালে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। একে একে সকল খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর নগরীর ময়লা-আবর্জনা বের হতে পারছে না। আসন্ন বর্ষায় নগরবাসীর দুর্ভোগের শঙ্কা বাড়ছে।
৮ বছর পূর্বে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করতে একটি বেসরকারি সংস্থা এশিয়া মহাদেশের প্রথম এডিওপলিশ (সৃজনশীল নগরী) নগরী গড়তে একটি মহা পরিকল্পনা তৈরি করে। ওই পরিকল্পনায় আধুনিক নগর ভবন নির্মাণ ও পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য মহা-পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। কিন্ু্ত তার বাস্তবায়ন অনিশ্চিত। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য আজ পর্যন্ত গঠন হয়নি আলাদা কোনো নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ৮ লাখ জনগোষ্ঠীর এই নগরীতে নেই পর্যাপ্ত বাসা বাড়ি। ফলে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাড়ি ভাড়া ।
সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল জানান, অপ্রয়োজনীয় জনবল এবং পে-স্কেল ঘোষণা করায় খরচ কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। কিন্তু বাড়েনি নগর ভবনের আয়। নতুন করে ট্যাক্স নির্ধারণসহ অন্য খাতের আয় বাড়তে সময় লাগবে। হঠাত্ করে কেউ আয় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করতে পারবে না। বর্তমানে নগর ভবনের দেনার পরিমাণ দু’শ কোটি টাকার বেশি। এ টাকা সরকারিভাবে বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে প্রদান না করলে সিটি কর্পোরেশন ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। আর পাহাড় সমান সংকট মোকাবেলা করাও সম্ভব হবে না। তবুও আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে থেকেই চেষ্টা করছি মানুষের সমস্যাগুলো সমাধান করার।
সম্পাদনা/ সৈয়দ মনির অাহমদ।