মেয়াদ তিন-চতুর্থাংশ পার হলেও অগ্রগতি ৩৬ শতাংশ * বাড়ছে না ব্যয় ও মেয়াদ
প্রতিবেদক :
ঘূর্র্ণিঝড় বুলবুল, আম্পান এবং সর্বশেষ কোভিড-১৯ এর আঘাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর ( মীরসরাইয়ে বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল) (১ম পর্যায়)প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কার্যক্রম। তাছাড়া আগে থেকেই ছিল ধীরগতি। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পার হলেও ভৌত কাজের অগ্রগতি এখন ৩৬ শতাংশ। আর্থিক অগ্রগতি আরও কম, ২৬ শতাংশ। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এতে বাড়বে প্রকল্পটির ব্যয় ও মেয়াদ। ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটির সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
এ প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, এর আগে বুলবুল ও আম্পান এবং করোনার কারণে বাস্তবায়ন বাধার সৃষ্টি হয়। এখন মাটির কাজ চলছে। কিন্তু রাস্তার কাজ করা যাচ্ছে না। প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। তবে প্রকল্পের অধিকাংশ কাজেরই ওয়ার্ক অর্ডার দেয়া আছে। এখন শুধু অপেক্ষা করতে হবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের অবস্থা কি হয়। বলতে গেলে রেফারির বাশি ফুঁ দেয়াটাই শুধু বাকি। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রথম দিকে শঙ্কা ছিল বিনিয়োগকারী পাওয়া নিয়ে। কিন্তু এখন বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তবে শীতকালে করোনা পরিস্থিতির ওপরও অনেক কিছুই নির্ভর করছে। প্রকল্পটির গতি কমে যাওয়ায় ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বাড়াতে হবে বলে তিনি জানান।
২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত স্টিয়ারিং কমিটির সভার কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানের প্রকল্পটির আওতায় জোন উন্নয়ন কার্যক্রম পুরোদমে চলমান রয়েছে। তবে বর্ষাকালে মাটির উৎস থেকে সাইট পর্যন্ত সংকীর্ণ রাস্তাগুলো অতি অল্প বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আম্পান ও কোভিড-১৯ সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, অনুমোদিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ৯৩৫ একর জমি ভরাটের সংস্থান থাকলেও মাত্র ৩৬০ একর জমির ওপর প্রথম পর্যায়ের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হচ্ছে।
এছাড়া বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অধিকসংখ্যক শিল্প প্লট তৈরির জন্য প্রকল্পটির ডিপিপি সংশোধন প্রয়োজন। এসময় সভার সভাপতি বিস্তারিত জানতে চান। প্রকল্প পরিচালক ডিপিপি সংশোধনের পক্ষে তিনটি যুক্তি তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে- বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিপরীতে বর্তমানে ৫১টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিনিয়োগের জন্য প্রায় ১৬ লাখ বর্গমিটার শিল্প প্লটের চাহিদা রয়েছে। সেই সঙ্গে এ চাহিদা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপির আওতায় ৫৩৯টি শিল্প প্লটের আয়তন হবে প্রায় ১৮ দশমিক ১৮ লাখ বর্গমিটার। এছাড়া অনুমোদিত ডিপিপিতে অবকাঠামোগত মূল কার্যক্রম ৩৬০ একরব্যাপী হলেও মাটি ভরাটের কাজ ৯৩৫ একরজুড়েই রয়েছে। তাই অতিরিক্ত মাটি ভরাটের অর্থ বিনিয়োগকারীদের অনুকূলে প্লট বরাদ্দ দিয়ে ক্যাশ ফ্লো উন্নয়ন করা প্রয়োজন। এসব কারণে প্রকল্পটির সংশোধন করতে হবে।
স্টিয়ারিং কমিটির সভায় প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, বেপজা বর্তমানে দেশের প্রায় ২০ শতাংশ জাতীয় রফতানিতে অবদান রাখছে। পাঁচ লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বেপজার অধীন সাতটি ইপিজেড প্রকল্পে ৩০ জুন পর্যন্ত ৫৫৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা সরকারের কাছ থেকে সুদমুক্ত ঋণ নিয়েছে। গত এক দশকে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে বেপজার নিজস্ব অর্থায়ন প্রায় ১ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ফলে বর্তমানে বেপজার আর্থিক সক্ষমতা কমেছে। এ অবস্থায় বেপজা সরকারের কাছে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। অপরদিকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এক শতাংশ হারে সুদ নিতে পারে। তাই সংশোধিত ডিপিপিতে ঋণ পরিশোধ সিডিউলে সুদের হার এবং রেয়াতকাল বেজার মতো করার প্রস্তাব করা হবে। এ সময় সভায় উপস্থিত অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি জানান, সরকারি সংস্থা ও কর্পোরেশনের অনুকূলে ঋণ প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা অনুসারে বেজা বিশেষ ক্যাটাগরিভুক্ত হওয়ায় ১ শতাংশ হারে ঋণ মঞ্জুর করা হয়।
সূত্র জানায়, ‘বেপজা অর্থনৈতিক অঞ্চল, মীরসরাই’ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন সেই মেয়াদ ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত করার প্রস্তাব তৈরি হচ্ছে। বাংলারদর্পণ