ফুলবাড়ীতে ধরলায় বিলীন হচ্ছে স্কুলসহ বসতবাড়ি : প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেই

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ধরলা নদী বেষ্টিত একটি জনপদ মেখলীরচর। বন্যা পরবর্তী ধরলার অব্যাহত ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে এখানকার সরকারি স্কুল, মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ, বসতবাড়ি ও ফসলি জমি। সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসছে এ জনপদের মানুষ।

সরকারি কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসে অনেক আগে থেকে নানান প্রতিশ্রুতি দিলেও ভাঙ্গন প্রতিরোধে কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। ফলে সব হারানো আতংকগ্রস্থ মানুষগুলোর মনে জমেছে ক্ষোভ। অনেকে সব হারিয়ে দিশেহারা।

আবার অনেকে আছে সব কিছু নদীতে বিলীন হওয়ার আশংকায়। জনমনে বুক ফাঁটা আর্তনাদ তাদের রক্ষার জন্য কী কোন পদক্ষেপ নেবে না সরকার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মেখলীরচর খন্দকারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ভবনের একাংশ ও বিদ্যালয় সংলগ্ন খন্দকারপাড়া জামে মসজিদের ভবন ধরলার ভাঙ্গনে
বিলীন হচ্ছে।

যেকোন মুহুর্তে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বিদ্যালয়টির পুরো ভবন। যে
ভবণটি এক বছর আগে পুনঃ নির্মাণ করা হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত গ্রামটির
বাসিন্দা হারুন (৩৭), মতিয়ার (২৮), ছাইফুল (৩৫), মনজুরুল (৩৮), কবির
আহম্মেদ (২৭) জানান, ধরলার অব্যাহত ভাঙ্গনে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। ভাঙ্গন
আতংকে রয়েছে অনেক পরিবার। গত ২ মাসে গ্রামের প্রায় ৮০টি বসতবাড়ি নদী
গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বহু আবাদি জমি প্রতিদিনই ধরলার পেটে চলে যাচ্ছে।
আমাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার একমাত্র বিদ্যালয়টিও ধরলা ভেঙ্গে নিচ্ছে। এখন
বাচ্চাগুলো কোথায় লেখাপড়া করবে জানেন না তারা। বিদ্যুতের ৬টি খুঁটি নদীতে
বিলীন হওয়ার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে এখানকার প্রায় শতাধিক বাড়ি। ধরলার
ভাঙ্গনে খন্দকারপাড়া জামে মসজিদটি নদীতে বিলীনের ফলে ১১০ ঘর মুসল্লি খোলা
আকাশের নিচে নামাজ আদায় করছে। হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদের অদুরে
ঈদগাহ মাঠও।

এলাকাবাসী আবু বকর (৭৫), আলিফ উদ্দিন (৫০), হযরত আলী (৩৫), নুর ইসলাম (৩২),
বাছের আলী (৭০), কফিল উদ্দিন (৪৬), আঃ কাদের (৬৮) বলেন, দীর্ঘদিনেও ভাঙ্গনরোধে
কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় আমরা আজ নিঃস্ব হচ্ছি। তারা অভিযোগের সুরে বলেন,
এবছর প্রথম বন্যার সময় ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, প্রকল্প
বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এখানে ত্রাণ
বিতরণের জন্য এসেছিলেন। তখনি আমরা নদীর ভাঙ্গনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নিতে তাদেরকে অনুরোধ করি। ওই সময়ে এখান থেকে নদী অনেকটা দুরে ছিল।
তখনি ব্যবস্থা নিলে আজ আমাদের বাপ দাদার ভিটেমাটি হারাতে হতো না। সে
সময় তারা ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা গ্রহনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন
ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি।

তারা আরো বলেন, কয়েকদিন আগে নদী যখন বিদ্যালয়টির
খুব কাছাকাছি চলে আসে তা পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার,
উপজেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের
কর্মকর্তাগণ। সেদিনও ভাঙ্গন রোধে দেওয়া হয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস।
কিন্তু তাদের আশ্বাস বাস্তবায়নের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। আমরা সর্বস্ব হারাচ্ছি
এতে বোধ হয় কারো কিছু যায় আসে না। আসলে আমাদের সীমাহীন দুঃখ
দুর্দশা দেখার কেউ নাই।
এমতাবস্থায় ধরলার কড়াল গ্রাস থেকে মুক্তি পেতে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান বলেন, আমরা একাধিকবার
ভাঙ্গন কবলিত এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। ভাঙ্গনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের
কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এরশাদুল হক বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকার স্কুল ভবনটি
রক্ষায় আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলেছি। banglardarpan

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *