রোকসানা চৌধুরি :
‘আমি কিন্তু উদার না, যারা দুর্নীতি করছে তারা তওবা করে ফেলুন আজ থেকে। যারা দায়িত্বের সাথে বেঈমানি করবেন তাদের ছাড় দেবো না, ক্ষমা করবো না। না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দেবো, তবুও অন্যায়ের সাথে আপোষ করবো না।’
এই ডায়লগগুলো ‘এম এল এ ফাটা কেষ্ট’র মিঠুন চক্রবর্তীর নয়। ডায়লগগুলো সদ্য দায়িত্ব পাওয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরশেনের (চসিক) প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের। দায়িত্ব গ্রহণ করতে না করতেই তিনি এমন হুঁশিয়ারিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন। শুধু বক্তব্য দিয়েই শেষ করেননি বরং সাথে সাথে দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় পড়ে থাকা খানাখন্দে ও গর্তে পরিণত হওয়া নগরীর পোর্ট কানেক্টিং রোডে চলে যান। শুরু থেকেই তিনি ফাটা কেষ্ট’র পথে হাঠতে শুরু করেন তিনি।
জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর একটা পরিচয় হল ‘ফাটা কেষ্ট’। মুভিতে দেখেছিলাম কিভাবে ফাটা কেষ্ট সাত দিনের মধ্যে মন্ত্রী হয়ে দেশ বদলে দিয়েছিল। একমাত্র ফাটা কেষ্টই পরে যেকোন ভঙ্গুর সভ্য সমাজ ব্যবস্থাকে পুনরায় গড়ে তুলতে। ঘটনাটা কেবল মুভিতে ছিল, বাস্তবেও তার প্রকাশ দেখতে পাচ্ছি চসিকের দায়িত্ব নেয় প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সময়ে। চট্টগ্রাম নগরীকে আধুনিক ও সমস্যা দূরীকরণে নানা নিয়েছেন তিনি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রশাসক আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজ ‘ফাটা কেষ্ট’ রুপে আবির্ভূত হয়েছেন চট্টগ্রামে, হাটছেন সেই ফাটা কেষ্টের পথে। যেখানেই অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা সেখানেই চলছে অভিযান। রাত নেই, দিন নেই অক্লান্ত অভিযান চালাচ্ছেন তিনি। কখনো ভাঙা রাস্তার মেরামত কাজের তদারকি, কখনো স্থাপনা ভেঙে অবৈধ দখল উচ্ছেদ এমনকি আল্টিমেটাম দিয়ে যাচ্ছে। অ্যাকশনের পর অ্যাকশন নিয়ে যাচ্ছে অনিয়ম, অন্যায় ও যত অবৈধ বিষয়ের বিরুদ্ধে।
ক্লান্তিহীন দিন পার করার পর রাতেও নামছেন ‘অ্যাকশনে’। যখন যেখানে অনিয়ম দেখছেন, সেখানেই হাজির হচ্ছেন চসিক প্রশাসক সুজন। নিজেই সরেজমিনে পদাচরণ করছেন, বিচরণ করে বেড়াচ্ছেন সর্বত্র। চসিক প্রশাসকের এমন উদ্যমী উদ্যোগ সব মহলে প্রশংসার পাশাপাশি তাকে চট্টগ্রামের ‘ফাটা কেষ্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন নগরবাসীসহ নানা মহল।
গত ৬ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করার প্রথম দিন কর্মকর্তাদের সাথে পরিচিত পর্বেইঅনিয়মের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি কিন্তু উদার না, যারা দুর্নীতি করছে তারা তওবা করে ফেলুন আজ থেকে। যারা দায়িত্বের সাথে বেঈমানি করবেন তাদের ছাড় দেবো না, ক্ষমা করবো না। না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দেবো, তবুও অন্যায়ের সাথে আপোষ করবো না।’
সেদিন অপরাধ করাটা অপরাধ না, তা স্বীকার না করা অপরাধ মন্তব্য করে সুজন বলেছিলেন, এখানে যারা আছেন সবাই জ্ঞানী-গুণী মানুষ, আপনাদের জ্ঞান-প্রজ্ঞাকে কাজে লাগান।
আজ সকালে আসার সময় নিউ মার্কেট জিপিওয়ের সামনে ময়লা দেখেছি সকাল নয়টার সময়। কেন এত সকালে ময়লা থাকবে। পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তাদের আহ্বান জানাবো, ভবিষ্যতে এ ময়লা আর দেখতে চাই না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে নাছির ভাই অনেক কাজ করছে, সেটা সাকসেসফুল করতে হবে।
‘যেদিন বৃষ্টি হবে সেদিন আমিও থাকবো, কোথায় পানি জমছে তা সরেজমিনে দেখবো। ঘরে বসে কাজ করার দিন শেষ। আমরা মহিউদ্দিন চৌধুরীর কর্মী, কিভাবে কাজ করতে হয় তা আমরা জানি।’
চসিককে দলীয় কার্যালয় বা পারিবারিক করা হবে না জানিয়ে সুজন বলেন, বাড়ি থেকে বের হবার সময় আমার সাথে চসিকের গেইট পর্যন্ত আমার ছেলে এসেছে, তাকে ভিতরে ডুকতে দিই নাই।
এখানে তার কোন কাজ নেই। প্রত্যেক দিন, মুহুর্তে কাজ করবো চ্যালেঞ্জ নিয়ে। জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য খাদ্যে ভেজাল বন্ধ করার জন্য বিএসটিআইকে সাথে নিয়ে কাজ করবো। এক সপ্তাহ দশদিন গেলে বুঝবেন আমি কি করতে পারবো কি পারবো না সেটা।
‘সবচেয়ে আশার কথা যিনি আমাকে দায়িত্ব দিয়ে এখানে পাঠিয়েছেন তিনিই এ শহরের দায়িত্ব নিয়েছেন। কাজেই উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করার কোন কারণ নাই। আমাকে পুকুরে নামতে দেন, নামার পরে দেখবেন কিভাবে সাঁতরাবো সেটা।’, যোগ করেন তিনি।