বাদশা সালমান অসুস্থ্য : সৌদির পরবর্তি বাদশা হচ্ছেন মোহাম্মদ বিন সালমান | বাংলারদর্পন

প্রতিবেদকঃ
সৌদি আরবের ৮৪ বছর বয়সী বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ গুরুতর অসুস্থ হয়ে গত সোমবার (২০ জুলাই) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার এমন অসুস্থতার পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তার ছেলে ক্রাউন প্রিন্স (বাদশাহর উত্তরাধিকার) মোহাম্মদ বিন সালমানকে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগেই বাদশাহ সালমানের স্থলাভিষিক্ত করা হবে।

ws: 2;”>উপসাগরীয় আরব দেশগুলো নিয়ে কাজ করা স্বাধীন গবেষক নাবিল নওয়ারাহ এশিয়া টাইমসকে বলেছেন, চলতি বছরের শেষদিকে তার (যুবরাজ সালমান) ক্ষমতায় আরোহণের কথা রয়েছে।কিছু বিশেষ সূত্রের বরাতে তিনি জানান, বছরের শেষ নয় আসন্ন যে কোনো মাসেও তিনি সৌদির ক্ষমতায় আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পিত্তকোষের প্রদাহ নিয়ে বাদশাহ সালমান হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছে রয়্যাল কোর্ট। তবে তিনি মৃত্যুশয্যায় নেই বলেও এরই মধ্যে জানানো হয়েছে। তবুও তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে অনিশ্চয়তা আর আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের কারণে নির্ঝঞ্ঝাট ক্ষমতার বদল নিশ্চিত করতে অভিষিক্ত হবেন মাত্র ৩৪ বছর বয়সী যুবরাজ সালমান।

 

 

ওই গবেষক আরও বলছেন, বিশ্বজুড়ে সংক্ষিপ্ত এমবিএস নামে পরিচিত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান প্রতিদ্বন্দ্বীদের সরিয়ে দিয়েছেন। খাশোগি হত্যার পর ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাদশাহ সালমানের ছোট ভাই প্রিন্স আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ লন্ডন থেকে দেশে ফিরলে অভ্যুত্থানের অভিযোগে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

একই রাতে গ্রেপ্তার হন সাবেক ক্রাউন প্রিন্স এবং মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহযোগী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ। ১৯৩২ সালে সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার পর থেকে দেশটির প্রতিষ্ঠাতার কোনো না কোনো ছেলে বাদশাহ হয়েছেন। কিন্তু যুবরাজ সালমান বাদশাহ হলে দীর্ঘদিনের সেই প্রথা ভেঙ্গে যাবে।

গবেষক নাবিল নওয়ারাহের মতে, ক্ষমতার অংশীদার বিবেচনায় যারা গুরুত্বপূর্ণ, তাদের প্রায় সবাই এখন বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। এমনকি বিন নায়েফও বন্দি রয়েছেন। বন্দিদের কারও কোথাও যাওয়ার অনুমতি নেই। এছাড়া আরও কয়েক ডজন প্রিন্স দেশ ছাড়তে পারছেন না। মূলত তাদের গতিবিধি নজরদারি করা হচ্ছে। আমি মনে করি এখন সবই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সৌদি গবেষক ও জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর আবদুল্লাহ আলাউধ বলছেন, আমার ধারণা আগামী নভেম্বরের মধ্যেই কিছু একটা ঘটে যাবে। যুবরাজ সালমান তার ভাইদের মধ্যেও সবার বড় নন। সৌদি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যে ঐতিহ্য তার সেই যোগ্যতাও নেই। আর তিনি এটা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত।

অধ্যাপক আবদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলছেন, যুবরাজ সালমান তার ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত। তবে এটা সত্য যে, বাদশাহ’র উত্তরাধিকার হিসেবে তিনি একধাপ এগিয়ে রয়েছেন। তার বাদশাহ হওয়ার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন এমন ভাবনা কারও মনে আসার আগেই তিনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন।

বাদশাহ’র উত্তরসূরি সংক্রান্ত ঝুঁকি বিবেচনায় তাড়াহুড়ো করে করে ক্ষমতায় আরোহণ বড় কারণ হলেও নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনও গুরুত্বপূর্ণ। তার বড় সমর্থক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে হারতে পারেন এমন সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় ঝুঁকি না নিয়ে মার্কিন নির্বাচনের আগেই ক্ষমতা পোক্ত করতে চাচ্ছেন যুবরাজ সালমান।

কেননা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট দল থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য মনোনীত সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন খাশোগি হত্যায় সংশ্লিষ্টতা থেকে শুরু করে ইয়েমেন যুদ্ধ নিয়ে সৌদির ডি-ফ্যাক্টো নেতা মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রকাশ্য সমালোচক। তার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় শঙ্কিত এমবিএস।

২০১৯ সালের নভেম্বরের এক প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে জো বাইডেন সৌদি আরবকে নীচ জাতি হিসেবে অভিহিত করে বলেছিলেন, দেশটির বর্তমান সরকারের আমলে সামাজিকভাবে মানুষের মূল্যবোধ সংরক্ষণের ছিটেফোঁটা নেই। ইয়েমেন যুদ্ধের জন্য সৌদির কাছে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি বন্ধের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন তিনি।

 

 

অধ্যাপক আবদুল্লাহ বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থন নিয়ে যুবরাজ সালমান নিজেকে সাহসী মনে করেন। কারণ ট্রাম্পের কারণে সব কিছু থেকেই ছাড় পাচ্ছেন তিনি। কনস্যুলেটের ভেতরে একদল গুণ্ডা পাঠিয়ে একজনকে (খাশোগি) খুন করেও কিছু হলো না তার। মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটদের চেয়ে রিপাবলিকানরা বেশি ক্ষুব্ধ।

 

ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সৌদি আরব দ্বি-দলীয় সমর্থন এতদিন ধরে পেয়ে আসছে ট্রাম্পের শাসনকাল শেষ হলে বিন সালমান হয়তো আর সেই সমর্থন পাবেন না বলেই ধারণা।পশ্চিমা এক গবেষক এশিয়া টাইমসকে বলেন, জানুয়ারি পর্যন্ত বাদশাহ সালমান যে বাদশাহ থাকবেন এর সম্ভাবনা খুবই কম বলে আমার মনে হয়।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, সত্যিকারের শারীরিক সমস্যার মধ্যে পড়েছেন বাদশাহ সালমান। অবস্থা গুরুতর। সামনে বাদশাহর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হবে বলেই মনে হচ্ছে। ফলে তিনি হয়তো ডিক্রি জারি করে বলবেন, ‘আমি দায়িত্ব ছেড়ে বিশ্রামে যাচ্ছি, আমার ছেলে এখন দায়িত্ব সামলাবে।

বাংলারদর্পন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *