নুরুল হুদা সায়েম:
সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতকে নৃশংসভাবে হত্যা সোনাগাজীর ইতিহাসে এক জঘন্যতম ঘটনা। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের অনেক মিডিয়া এটা কাভার করেছে। এই ঘটনায় একসঙ্গে অনেকজনের ফাঁসির আদেশও হয়েছে যা আপিল বিভাগে চুড়ান্ত ফয়সালার অপেক্ষায়। ইদানিং অনেক জায়গায় সোনাগাজীর নাম বললেই নুসরাতের কথাটা কেউ কেউ স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের। আমরা লজ্জিত হই।
এরপর গত সপ্তাহে ৪নং মতিগঞ্জ ইউনিয়নের সুলাখালীতে একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তির (জনাব সাহাব উদ্দিন) পরিবার মৃত্যুর সময় তার পাশে ছিল না বা রুমের দরজা বন্ধ করে রেখে দিয়ে খাবারও না দিয়ে তারা অন্যত্র ছিল, মৃত্যুর পরও কেউ আসেনি এরকম অনেক ভুল তথ্য দিয়ে সোনাগাজীর কিছু সংবাদ মিডিয়ায় সংবাদ প্রচার করার সূত্র ধরে ফেনীর বেশ কিছু মিডিয়া ও কয়েকটি জাতীয় টিভি চ্যানেলও একই রকমভাবে ভুল তথ্য দিয়ে নিউজ প্রকাশ করে যা সোনাগাজীর বাইরের অনেক বন্ধু / পরিচিতজনেরা আমাদের ইনবক্সে দিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করে “এটা কি আপনার এলাকায়?” আবারো লজ্জায় আমাদের মনটা খারাপ হয়ে যায়। যদিও পরে প্রমাণিত হয়েছে যে ঐ তথ্যগুলো সম্পূর্ণ ভুল ছিল। সর্বশেষ ইউএনও মহোদয়ও এ ব্যাপারে বিবৃতি দিয়েছেন।
সর্বশেষ গত ৪ জুন ৩নং মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের জনৈক আবুল হোসেন নামের একজন নিরিহ কৃষকের হালের অন্ত:সত্তা গরু রাতের আধাঁরে চুরি করে নিয়ে জবাই করে মাংস খেয়ে ছামড়াযুক্ত গরুর মাথা খালের পাড়ে ঝুলিয়ে রেখেছে অজ্ঞাত দূবৃর্ত্তরা। গতবছর ২২ জুন অজ্ঞাত দূবৃর্ত্তরা একইভাবে আবুল হোসেনের আরেকটি গাভী গরুও চুরি করে নিয়ে খালের পাড়ে খেয়ে পেলে। সোনাগাজীর বাইরের অনেকে আবারো আমাদের ফোনে, ইনবক্সে, কথা প্রসঙ্গে, আড্ডাচ্ছলে টিসকারি করবে, খোঁচা দিবে। আমরা সোনাগাজীয়ান হিসেবে আবারো লজ্জিত হই।
সোনাগাজীর আরো বেশ কিছু জায়গায় অনেক সময় শিশু ধর্ষণ, ভাতিজি বউ এর সঙ্গে চাচা শশুরের অবৈধ সম্পর্ক, রাজনৈতিক কর্মীদের নৃশংসভাবে হত্যা এ রকম বেশ কিছু অযাচিত ঘটনা মিডিয়ার কল্যাণে আমরা বিভিন্ন সময় জানতে পারি। এসব নিয়ে ফেনীর কিছু সাংবাদিক বা ব্যক্তিবিশেষ ফেসবুক পোষ্ট দেয়ার পর সেসবের কমেন্টে সোনাগাজীকে নিয়ে যেসব মন্তব্য করা হয় তা আমরা সোনাগাজীয়ান হিসেবে দেখা খুব কষ্টদায়ক এবং মান-সম্মানেও লাগার মতো। এসব নেগেটিভ ঘটনার পাশাপাশি সোনাগাজীতে প্রচুর ভালো কাজও হচ্ছে। অন্যান্য সময় এবং এই করোনাকালীন সময়ে সোনাগাজীর উচ্চবিত্ত বা জনপ্রতিনিধি বা সামাজিক সংগঠনগুলো যেভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তা সারা বাংলাদেশের জন্য দৃষ্টান্ত। কিন্তু ঐসব কিছু জঘন্য/নৃশংস ঘটনাগুলোর কারণে এই ভালো কাজগুলোর স্মৃতি অনেকের মন থেকে মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
তাই যেসব সোনাগাজীয়ান এ ধরণের নৃশংস বা লজ্জাজনক ঘটনাগুলো ঘটানোর অভিপ্রায় মনে পুষেন, চিন্তা চেতনায় ধারণ করেন তাদের প্রতি অনুরোধ/আহবান, ইতোমধ্যে আমরা অনেক লজ্জিত হয়েছি, প্লিজ আমাদের আর লজ্জা দিবেন না।
লেখক: সভাপতি, শাহাপুর মুনষ্টার ক্লাব।
এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার, মানব সম্পদ ও প্রশাসন বিভাগ, জেমকন গ্রুপ, ঢাকা।