উপকূলীয় এলাকা কয়রার পানি উন্নয়ন বাঁধ ‘জরুরি কাজ’ অযুহাতে লুটপাটের মহোৎসব

শেখ সিরাজুদৌল্লাহ লিংকন, খুলনা থেকে :

” অসাধূ এক প্রকৌশলী (এসও)র ইশারায় এসব অনিয়ম চলছে ”
” দীর্ঘদিন ধরে নেই কোন প্রতিযোগিতামূলক টেন্ডার আহ্বান ”
” তদন্তপূবর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছে এলাকাবাসি “

খুলনা জেলার সর্বদক্ষিণে উপকূলীয় উপজেলা কয়রা। পাশেই সুন্দরবন। ভৌগলিক কারণে এলাকার মানুষ নাগরিক সূযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাছাড়া প্রতি বছরই ঝড়ঝঙ্টা লেগেই থাকে। অতীতে আইল্যাসহ বড় বড় দুর্যোগে ধ্বংস হয়ে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ। একারণে বিশাল জনগোষ্ঠী দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতায় জীবনযাপন করেছেন। জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ফসল, গবাদি পশু ও মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। অনেকেই হয়েছেন সর্বশান্ত। কয়রা উপজেলায় আইল্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষত্রিগস্ত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই এলাকায় পরিদর্শন করেছিলেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এলাকায় টেকসই ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করার।

সেই থেকে অবহেলিত উপকুলীয় উপজেলা কয়রা এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রতি অর্থ বছরে সরকারের শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে আসছেন। এ টাকা কোথায় কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা দেখার যেন কেহ নেই। বাঁধ নির্মাণের নামে কথিত ‘জরুরি কাজ’ অজুহাত দেখিয়ে লুটপাট করা হচ্ছে। শতভাগ কাজ বুঝিয়ে না দিয়ে যেনতেনভাবে কাজ শেষ করে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে সনদ দিয়ে টাকা উঠিয়ে নেওয়ার নজির রয়েছে।

আবার প্রতিযোগিতামূলক উম্মুক্ত টেন্ডারও হচ্ছে না। ফলে সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঘুরেফিরে তাদের পছন্দের ঠিকাদাররাই কাজ করছে। আসন্ন বিধ্বংসী ক্ষমতা নিয়ে আসা ঘুর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আর্বিভাবে আবারও জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার আয়োজন চলছে। এজন্য বাজেট ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিহ্নিত সেই প্রকৌশলী ‘অতি জরুরি’ কাজ হিসেবে তার পছন্দের ঠিকাদারদের দেওয়ার পায়তারা করছে। পানির প্রবল চাপে এসব কথিত ‘জরুরি কাজ’ নিয়ে এলাকাবাসি সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ করলেও তা কাজে আসেনি। সুতরাং বরাবরের মতো এবারও ‘অতি জরুরি’ কাজের নামে লুটপাটের মহাযোজ্ঞ চলবে। লাভবান হবে দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলী ও ঠিকাদাররা। ক্ষতিগ্রস্ত হবে উপকূলীয় বিশাল জনগোষ্ঠী।

জানা গেছে, উপজেলাটি খুলনা জেলায় অবস্থিত হলেও এটি সাতক্ষীরা জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে। যে কারণে এখানে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চললেও জোরালো কোনো তদারকি নেই। এটি দেখভাল করেন সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহি প্রকৌশলী, কয়রা আমাদি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ও উপসহকারি প্রকৌশলী (এসও)। তাদের নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে উপকূলীয় কয়রা উপজেলায় গত কয়েক বছরে কথিত ‘জরুরী ভিত্তিতে’ উন্নয়ন প্রকল্প কাজ চলে আসছে। এসব উন্নয়নমূলক কাজ জনগনের কাজে না আসলেও প্রকল্পের নামে শত শত কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কাজ করেছে পছন্দের ঠিকাদার। চলমান আরো কয়েকটি প্রকল্পে কাজের নামে নয়ছয়ের আয়োজন চলছে বলে জানা গেছে। আর এসব কাজে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের দোহাই দেওয়া হচ্ছে। তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের বাইরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা অন্য কোনো দক্ষ ঠিকাদার দিয়ে কাজ করাতে পারছে না। চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে নিন্মমানের কাজ করানো হয়। এর নেপথ্য অসাধু প্রকৌশলীরা বছরের পর বছর ধরে একই জায়গায় কর্মরত থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। অন্যত্র বদলি করলেও উপর মহলকে ম্যানজ করে পুনরায় একই স্থানে থাকছেন তারা।

সামান্য কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের টাকা লোপাটের পায়তারা: তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, কয়রা উপজেলা সদরের ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ঝুকিপূর্ণ ঘাটাখালি হরিণখোলা ও ২ কয়রা স্লুইস গেট সংলগ্ন বেড়ি বাধে ৩ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। কয়েক কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ ‘জরুরি ভিত্তি’ দেখিয়ে বিনা টেন্ডারে পছন্দের ঠিকাদারদের দেওয়ার সকল আয়োজন চলছে। অথচ নিন্মচাপ ‘আম্পান’ আঘাত হানলে বাঁধ ভেঙে গোটা এলাকায় পানি প্রবেশ করবে। এর আগেও দায়সারা ভাবে কাজ করায় ঐ ৩ টি স্থান মারাত্মক ঝুকিতে রয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ‘আম্পান’ আসলেই প্লাবিত হবে কয়রা উপজেলা সদরের অফিস আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শত শত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার ঘর বাড়ি। ভেসে যাবে গৃহপালিত প্রাণী গাছ-পালা রাস্তাঘাট জমির ফসল ও কোটি কোটি টাকার মৎস সম্পদ।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের আমাদী উপ-বিভাগের ১৩/১৪-২ নং পোল্ডারের এই তিনটি প্রকল্পের কাজ বিগত ৩ মাস আগে শেষ হওয়ার কথা ছিলো। পাউবোর ২ কর্মকর্তা সহ স্থানিয় জন প্রতিনিধি মিলে যৎ সামান্য কাজ দেখিয়ে প্রকল্পের সিংহ ভাগ টাকা লোপাটের পায়তারা করছে।

পাউবোর দায়িত্বরত কর্মকর্তা মশিউল আবেদীনের কাছে জানতে চাইলে, তিনি বলেন কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে কেন জরুরি ভিত্তিতে কাজ দেখিয়ে পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হলো সে বিষয়ে তিনি বলেন, আমারা যতদুর জানি একটি প্রকল্পের কাজ করাতে হলে প্রথমত প্রকল্পের নকশা তৈরি বরাদ্দের পরিমান টেন্ডার সহ আনুসাংগিক প্রক্রিযা সারতে ১৫-২০ দিন এরপরে দরপত্র আহবান কাজের কার্যাদেশ প্রদান সহ বিভিন্ন কারনে আরো ৫-১০ দিন সময়ক্ষেপন হয়ে থাকে ফলে হঠাৎ করে বাধের কোথাও ঝুকি পূর্ন হয়ে পড়লে সেখানেই শুধুমাত্র জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকে। জানা যায়, এই তিনটি স্থান গত কয়েক মাস আগে ঝুঁকি দেখা দিয়ে ছিলো। পানি উন্নয়ন বোর্ড তড়িঘড়ি করে নিজের পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে ঘাটাখালি হরিণখোলা ২টি প্রকল্পে মাত্র ৪ লক্ষ টাকার কাজ করা হয়েছে আর ২ নং কয়রার স্লুইসগেট সংলগ্ন প্রকল্পে বালু ভর্তি প্রায় ১৪ শত জিও বস্তা ফেলানো হয়েছে।

কিন্তু বস্তাগুলো নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে দায়সারা ভাবে বাঁধের কাছে এবড়ো থেবড়ো ভাবে ফেলেছে যা প্রকল্পের কোন কাজে আসছে না। ওই প্রকল্পে মাত্র ৩০ হাজার টাকার মাটির কাজ করানো হয়েছে। সাইন বোর্ডবিহীন এই প্রকল্পগুলোর বরাদ্দের টাকার পরিমান কখনোই জানা সম্ভব হয় না। বেশি লাভের আাশায় নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ৩টি প্রকল্পে বাধের নিচে বালু দেওয়ায় ৩ টি প্রকল্পের নিচ দিয়ে ছিদ্র হয়ে পানির চাপে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। ফলে বর্তমানে এই ৩ টি প্রকল্পই মারাত্মক ঝুকিতে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *