হারিয়ে যাচ্ছে গাঁয়ের মেয়েদের বোনা ঐতিহ্যবাহী শিকা

রতি কান্ত রায়, কুড়িগ্রাম  :
অাবহমান কাল থেকে  প্রকৃতির অপরুপ  সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চল। অবসর সময়ে পল্লী অঞ্চলের মেয়েরা  অাপন মনে তৈরি করতেন নানান শিল্প কর্ম।
এসব শিল্পকর্মের মধ্যে লুকায়িত থাকে বাঙালী নারী সমাজের বৈচিত্র্যময় স্নৃতি। পাট  দিয়ে তৈরী করা নকশি শিকার ব্যবহার বাংলাদেশে প্রাচীন কাল থেকে বিরাজমান।
পল্লী অঞ্চলের একটি সুপরিচিত লোকশিল্প এই শিকা। পল্লী গাঁয়ের মেয়েদের নিজ হাতে তৈরী রঙিন সুতা, পাট বা পাটের রশি দিয়ে বোনা বিভিন্ন শতরঞ্জি, জায়নামাজ, শিকা এগুলো লোকশিল্পের অন্তর্ভুক্ত।
পল্লী গাঁয়ের মেয়েরাই প্রকৃতপক্ষে শিকা তৈরীর কারিগর। সংসার অনুরাগী নারীরা স্ব-যত্নে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজাতে চায় মনমঞ্জীলকে।  শিকা তৈরী করা হয় সাধারণত পাট দিয়ে এবং করা হয় বিভিন্ন ধরনের কারুকার্য।
কিছুদিন অাগেও অহরহ শিকা চোখে পড়তো কিন্তু বর্তমানে তেমন অার চোখে পড়ে না। শিকা চেনে না এমন লোক খুজে পাওয়া মুশকিল পল্লী অঞ্চলে।
বর্তমান প্রজম্মের অনেক ছেলে ও মেয়েরাই সম্ভবত শিকা চিনে না । তারা শুধু চারু ও কারুকলা বইয়ে পড়েছে।
অাধুনিক যুগের গাঁয়ের মেয়রা তেমনটা পরিচিত নয় এই লোকশিল্পের সাথে।
গাঁয়ের মেয়রা সাধারণত  পাট বা পাটের অাঁশ দিয়ে তৈরী করেন এবং এতে যখন বিভিন্ন কারুকার্য করা হয় তখন একে নকশি শিকা   বলা হয়। নকশি শিকার অঞ্চলভেদে  হরেক রকমের নাম রয়েছে  জালি , কউতরখোপি, জিলাপি, বেড়ি, অাউলাকেশি ইত্যাদি।
বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি  বাড়ীতে ব্যবহারের   প্রচলন ছিল এই শিকার।ঘরের অাড়া  বা সিলিং -এ শিকা বেঁধে তাতে খাদ্যদ্রব্যসহ সংসারের হরেক রকমের জিনিস ঝুলে রাখা হত।
শিকা গৃহস্থালি কাজের জন্য শুমাত্র নির্মিত হলেও তার মধ্যে শিল্পীর কারুচাতুর্য ও সৌন্দর্যচেতনারও  প্রকাশ ঘটে। গাঁয়ের মেয়রা মাটির গুটি, কড়ি, পুঁতি , মাটির গোলাকার ঢেলা ইত্যাদির সাহায্য শিকায় নকশা করতেন।
বিজোবালা( ৭০) জানান যে অাগে শিকার কদর ছিল এখন অার তেমন কদর নেই।অাজকালের পল্লী গাঁয়ের মেয়েরা শিকা বোনাকে ঝামেলা মনে করে  অার অামরা শিকা পাট দিয়ে তৈরি করে তাতে মাটির হাড়ি- পাতিল , সরাসহ গৃহস্থালির বিভিন্ন জিনিস ঝুলে রাখতাম।
 তিনি অারও জানান কুটির ঘরের  সারি সারি টানানো শিকা যেন অাকৃষ্ট রাখতে চায় দেহ-পিঞ্জীরাকে এবং প্রকৃতির উপাদান দ্বারা তৈরী শিকার সৌন্দর্য  ভরে তোলে বাঙালীর ঘরকে।
কিন্তু সেই নকশি শিকা পল্লী অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। অাধুনিকতার ছোঁয়ায় অার বিজ্ঞানের যুগে এর ব্যবহার নেই বললেই চলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *