তানভীর আলম: আসন্ন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার ৪জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামীলীগের আঞ্জুম সুলতানা সীমা ছাড়া অন্য ৩জন প্রার্থী নাগরিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বিকাল ৪ টায় নগরীর টাউনহল মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)’র উদ্যেগে আয়োজিত পরিচিতি ও জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু,স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর মামুন (অব:) ও জেএসডির শিরিন সুলতানা। অনুষ্ঠানে দলীয় কর্মসূচি থাকায় অনুষ্ঠানে হাজির হতে পারেননি আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের অধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডের নাগরিকদের স্বত:স্ফূর্ত উপস্থিতি আর সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় জমে উঠে আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব।
অনুষ্ঠানে নিজের নির্বাচনী ইশতেহার ও নাগরিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু বলেন, সুজনের উদ্যোগে আয়োজিত পরিচিতি ও জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠানে কাকে দিয়ে শুরু করা যায়। সে জন্য সংগঠনের পক্ষে উপস্থিত ৩ মেয়র প্রার্থীর নাম লিখে লটারি করা হয়। লটারিতে প্রথমে সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর নাম আসে। বক্তব্যের শুরুতে মনিরুল হক বলেন, আমি মেয়র থাকা অবস্থায় শতভাগ চেষ্টা করেছি সুন্দর ও পরিচ্ছন্নভাবে নগর ও নগরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করতে। অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সে পরিকল্পনার অনেকগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে আবার অনেক প্রজেক্টের কাজ চলমান রয়েছে। একটি নগরীকে শুধু পাঁচ বছরের মধ্যে উন্নত নগরীতে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি সময় লাগে। অর্থায়ন একটি বড় সমস্যা। বিদেশি দাতা সংস্থাগুলো এমনিতে টাকা পয়সা দেয় না । সে জন্য, পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন পড়ে। সব মিলিয়ে নগরীর বহু সমস্যা সমাধান করেছি, ভবিষ্যতে মেয়র নির্বাচিত হলে বর্তমানে যে সমস্যাগুলো বিদ্যমান রয়েছে সেগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে। নগরবাসীর উদেশ্যে মনিরুল হক সাক্কু বলেন, তার মেয়র থাকাকালীন সময়ে নাগরিক সেবার পাঁচ বছর সময়ে কাজে স্বচ্ছতা ছিল,তিনি নিজেও নিবেদিত ছিলেন উল্লেখ করে বলেন, নগরীতে যে সব ফোয়ারা, ফুলের বাগান, শিশু পার্কের উন্নয়নের মত বহু কাজ আমার ব্যক্তিগত অর্থায়নে করেছি। আমি সবার সামনে এ কথা বলতে পারি, আমার কোন ভয় নেই। পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে নগরীর ২৭ নং ওয়ার্ডের একজন সাবেক কাউন্সিলর মনিরুল হক সাক্কুকে বলেন, আপনি গত পাঁচ বছর দলীয়করণ করে দলের লোকদেরকে বিভিন্ন কাজের দরপত্র আহ্বান না করে আড়ালে আবডালে কাজ দিয়েছেন। ভবিষ্যতে মেয়র হলেও কি এমন দলীয়করণ থাকবে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে প্রশ্ন কর্তার উদ্দেশ্য মনিরুল হক বলেন, আপনি যে প্রশ্ন করলেন যে দলীয় লোকদের নগর উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারী তুলে দিয়েছি, এ ব্যাপারে আপনার কাছে কি সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ আছে। তথ্য প্রমাণ ছাড়া এমন অমূলক প্রশ্ন করা ঠিক না। এ সময় আরো দু’জন প্রশ্নকর্তার উত্তর দেন মনিরুল হক।
লটারিতে দ্বিতীয় নাম উঠে স্বতন্ত্র প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর মামুনুর রশীদের নাম। এ সময় তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে কিভাবে নগর পরিচালনা ও উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালিত করবেন সে বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। নগরীতে বিদ্যমান জলাবদ্ধতা,মাদক সন্ত্রাসমুক্ত ও খেলাধুলার প্রসারে ছোট বড় ১শটি মাঠ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তার। এছাড়াও তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন তার বক্তব্যদের সত্যতা নিশ্চিত করতে মেজর মামুন বলেন, আল্লাহর কসম, আমি চুল পরিমাণ দুনীর্তি করবো না,দুর্নীতি হতে দেব না।
পরে প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন প্রশ্ন করেন, কিভাবে ছোটবড় ১শটি খেলার মাঠ নির্মাণ করবেন, এছাড়াও আরেকজন প্রশ্ন করেন ইসলাম ধর্ম অনুসারে কসম করে কথা বলা ঠিক না,তবে প্রশ্নের শেষাংশে ছিল কিভাবে এক চুল পরিমাণ দুনীর্তি না করে কাজ করা যায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে মেজর মামুন তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কিভাবে করবেন সে বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন। আপনি পরাজিত হলে বিজয়ী মেয়ররের সাথে নগর উন্নয়নে কাজ করবেন কিনা, সে প্রশ্নের উত্তরে মেয়র প্রার্থী মামুন বলেন আমি সব সময় মানুষের জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক । বিজয়ী প্রার্থী যদি মনে করে নগর উন্নয়নের আমার সহযোগিতা লাগবে, আমি প্রস্তুত আছি।
সর্বশেষে মেয়র প্রার্থী শিরিন সুলতানা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হলে কিভাবে কাজ করবেন সে বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, নগরে যে উন্নয়ন করা হয়েছে তা শুধু চোখ ধাঁধানো। সাময়িক রঙ্গিন বাতি আর ফুলের বাগান গড়ে তুলে কি আর নগরীর উন্নয়ন সম্ভব। নগরীতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে যে জলাবদ্ধতা,মাদক,সন্ত্রাস ইত্যাদি সমস্যা দূর করে নগরীকে বিশ্বের মধ্যে একটি রোল মডেল সিটি হিসেবে গড়ে তুলবেন বলে উপস্থিত নাগরিকদের সামনে তিনি ওয়াদাবদ্ধ হন। নারী নেতৃত্বকে এগিয়ে নিতে তিনি তার প্রতীক তাঁরা মার্কায় ভোট চাইলেন।
অনুষ্ঠানে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, সুজন কুমিল্লার সভাপতি অধ্যক্ষ মমিনুল হক চৌধুরী, সুজন সংগঠক অধ্যক্ষ সফিকুর রহমান, আলহাজ্ব শাহ মো. আলমগীর খান। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন, সুজন কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম।