সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি :
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নুসরাতের বাবা একেএম মুসা মানিক ও বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেছেন এ রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। পরিবারের নিরাপত্তার আশংকা করে দ্রুত রায় কার্যকর করার দাবি জানান বাদী নোমান। আদালত প্রাঙ্গনে রায় ঘোষনার আগে ও পরে আসামীর স্বজনরা নানানভাবে হুমকি দেয় বলে গনমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছিলেন নোমান।
শুক্রবার দুপুর ১২টায় নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, নুসরাত হত্যা মামলার রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যতদিন প্রয়োজন নুসরাতের পরিবারকে নিরাপত্তা দেবে সরকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এ রায় মাইলফলক উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, বর্বর এ হত্যাকান্ডে জড়িত সকলের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির আদেশ দিয়েছে নিম্ম আদালত। আশাকরি নিম্ম আদালতের রায়ের কাগজপত্র ৭দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আসবে। উচ্চ আদালতেও দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আসামীদের সর্বোচ্চ সাজা হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে রায় ঘোষনার আগে ও পরে আসামীর স্বজনরা নানানভাবে হুমকি দেয়। তাই নিরাপত্তার আশংকা করছেন তিনি।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) খালেদ দাইয়ান বলেন, আমাদের কাছে নির্দেশনা আছে, প্রয়োজনে রায় কার্যকর হওয়ার পরও নুসরাত পরিবারের নিরাপত্তা দেবে সরকার। তিনি বলেন, ২৪ঘন্টা দুজন কর্মকর্তা ও সঙ্গীয় ফোর্স নুসরাতের বাড়ীতে অবস্থান করছে। তাছাড়া সকাল-সন্ধা দুবার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করছেন। ডিস লাইনের সংযোগ বিচ্চিন্ন হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ডিস ব্যাবসায়ী শিবলূ পাটোয়ারীকে ডেকে রাতেই (২৪ অক্টোবর) সংযোগ লাইন ঠিক করা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) বেলা পৌনে এগারোটায় বহুল আলোচিত মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামালায় অভিযুক্ত ১৬ আসামীর মৃতুন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মামুনুর রশিদ একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি হলো সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা, মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সাবেক সহ সভাপতি রুহুল আমিন, পৌরসভার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম, মাদ্রাসার শিক্ষক আবদুল কাদের, আফসার উদ্দিন, মাদ্রাসার ছাত্র নূর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, সাইফুর রহমান মোহাম্মদ যোবায়ের, সাখাওয়াত হোসেন জাবেদ, কামরুন নাহার মণি, উম্মে সুলতানা পপি, আবদুর রহিম শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, মোহাম্মদ শামীম ও মহি উদ্দিন শাকিল।
প্রসঙ্গত, সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন নুসরাত জাহান রাফি। তাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হয়।
গত ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্রের পরীক্ষা দিতে ওই মাদ্রাসার কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাত মারা যায়। এই ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই বাদী হয়ে ৮ এপ্রিল সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।