স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, দিনাজপুর,বাংলার দর্পন- কেউ জানেনা কেন এমন নৃশংস হত্যার শিকার হলেন কথিত পীর ও তার নারী মুরিদ?
সোমবার রাতে দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় কথিত এক পীর ও তার নারী মুরিদকে গলা কেটে ও গুলি করে হত্যা করেছে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতংক। নিহত পীর বিএনপির সাবেক নেতাও ছিলেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত পৌনে ৯টার দিকে বোচাগঞ্জের দৌলা গ্রামে কথিত পীর ফরহাদ হোসেন চৌধুরী (৬০) এর আস্তানার পাশে প্রথমে পীরকে ও পরে এক নারী মুরিদকে গলা কেটে ও পরে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা ।
রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি। কারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে সে বিষয়েও কোনো ইঙ্গিত দিতে পারেনি তারা।
বোচাগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছে, ফরহাদের সঙ্গে নিহত নারী মুরিদ তার বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো। নিহত নারী মুরিদের নাম রুপালী বেগম (২৩)।
নিহত পীরের এক আত্মীয় জানান, এশার নামাজের পর পীরের বাড়ি থেকে প্রায় একশ’ গজ দূরের খানকায় হামলা চালিয়ে পীর ও তার নারী মুরিদকে হত্যা করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত।
স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বাংলার দর্পনের প্রতিবেদককে পুলিশ জানায়, নিহত পীরের নাম ফরহাদ হোসেন চৌধুরী (৬০)। তিনি সেতাবগঞ্জ পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। দিনাজপুর পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপি থেকে একবার নির্বাচনও করেছিলেন। দিনাজপুর বাস মালিক সমিতির সাবেক সভাপতিও ছিলেন। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে তাঁর। বর্তমানে রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে পীর পরিচয়ই বেশি দিতেন তিনি। লোকজনও তাঁকে সে ভাবেই চিনত। নিহত নারীর নাম রুপালি বেগম (২৩)। তাঁর বাড়িও একই গ্রামে। ফরহাদ হোসেনের মুরিদের পাশাপাশি ওই বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজও করতেন।
প্রতিবেশীরা জানায়, ফরহাদ হোসেন বাড়িতে পীরের আখড়া গড়ে তুলেছিলেন। বাড়িটি ‘দৌলা দরবার শরিফ’ নামে পরিচিত। আট-দশ বছর ধরে এ আস্তানা চলছে। সপ্তাহে এক দিন আনুষ্ঠানিকভাবে সেখানে মুরিদরা জিকির-আজকার করতেন। এ ছাড়াও প্রায়ই তাঁরা জিকিরের জন্য আস্তানায় জমায়েত হতেন। গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে জিকিরের পরবর্তি সময় দুর্বৃত্তরা সুযোগ বুঝে হামলা চালায়। তারা প্রথমে ফরহাদ হোসেন ও ওই নারীকে এলোপাতাড়ি কোপায়, পরে গুলি করে হত্যা করে।
দৌলা দরবার শরিফের খাদেম সায়েদুল বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে দরবারের জিকির ও মিলাদ হতো। জিকিরে অংশ নিতে সুমি (৫২) নামের এক মুরিদ রাতে দরবারে আসেন। দীর্ঘক্ষণ হুজুরকে (ফরহাদ) ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তিনি আমাকে ডাক দেন। আমি এসে দেখি হুজুরের রক্ত মাখা লাশ। পরে পরিবারের অন্যদের খোঁজ নিতে গিয়ে পাশের একটি কক্ষে গৃহকর্মী রুপালিকেও মৃত অবস্থায় দেখতে পাই। ’
খবর পেয়ে রাতে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। প্রাথমিক তদন্তের বরাতে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, নিহত ফরহাদ হোসেন চৌধুরী (৬৮) দৌলা খানকার পীর হিসেবে পরিচিত। তিনি বিএনপির সাবেক পৌর সভাপতি ছিলেন । স্থানীয়রা জানায়, গেলো ১০ বছর ধরে ফরহাদ হোসেন আখড়াটি চালাচ্ছেন। সপ্তাহে একদিন বিশেষ জিকিরের আসর বসে। আজও এরকম জিকিরের পরে সুযোগ বুঝে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। তারা প্রথমে তাদের গলা কাটে। পরে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।
বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুল ইসলাম প্রধান বলেন, রাতে স্থানীয়দের কাছ থেকে ওই দুজনের গলাকেটে হত্যার কথা শুনে ঘটনাস্থলে আমরা এসেছি। রাতের কোন সময় কারা তাদের হত্যা করেছে তা এখনও জানা যায়নি। সঙ্গীয় ফোর্স নিয়েআমি ঘটনাস্থলে আছি । লাশের সুরতহাল রিপোর্টসহ পরবর্তী প্রক্রিয়া চলছে।
নেপথ্যে যত রহস্য (সর্বশেষ আপডেট মঙ্গলবার সকাল ৯টা )
বিএনপি’র ডাকসাইটে নেতা থেকে কথিত পীর! অতঃপর নৃশংস হত্যার শিকার! নেপথ্যে যত রহস্য
কথিত পীর ও নারী মুরিদের হত্যাকান্ড নিয়ে বাড়ছে গুঞ্জন! খুলছেনা রহস্যের জট!