আনোয়ারুল হক অানোয়ার-
পশ্চিমা সমর্থিত প্রভাবশালী ম্যাগাজিন বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ব্লামিদির পুতিনকে পর পর তিনবার নিবাচিত করেছে । ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় হোক ভ্লামিদির পুতিনের ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে পশ্চিমা গনমাধ্যম । চলতি বছরও তাকে সেরা ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে । পর পর তিনবার ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্বীকৃতি লাভের পরও ভ্লামিদির পুতিনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । প্রচার বিমুখ পুতিন অধিকাংশ সময় মিডিয়াকে এড়িয়ে চলার নীতিতে বিশ্বাসী । স্বল্পভাষী, তীক্ষ্ণ বৃদ্বি, ধীরস্থির ও আত্নপ্রত্যয়ী পুতিন গত কয়েক বছর বেশ ধৈর্য্য সহকারে দেশ পরিচালনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিজের প্রভাব প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন । ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব যখন পুতিনের বিরুদ্বে রীতিমত জিহাদে অবতীর্ণ ঠিক তখন পুতিনকে হরিণ শিকার কিংবা জুডো খেলায় তাকে মনোনিবেশ করতে দেখা গেছে । ক্রিমিয়ায় গনভোট ও পরে অন্চলটিকে রাশিয়ার অন্তর্ভূক্তকরন ঠান্ডা মাথায় সম্পন্ন করেন । এক কথায় রুশ প্রতিপক্ষকে এক প্রকার দৌড়ের মধ্যে রেখে পুতিন তার মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পশ্চিমা দুনিয়া । উদ্দেশ্য, রুশ অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হলে পুতিন ক্ষমতাচ্যূত হবে । কিন্তু পুতিন ধীরস্থিরভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সক্ষম হন । অবরোধে ক্ষতিগ্রস্থ অথনীতি পূষিয়ে নিতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এর শরনাপন্ন হন পুতিন । উল্লেখ্য, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বোধ হয় সেই মহেন্দ্রক্ষনের অপেক্ষায় ছিল । এসময় দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় দ্রুততার সাথে চীনা প্রেসিডেন্টের রাশিয়া সফর নিশ্চিত করে । বন্ধু দেশের দূ:দিনে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং রাশিয়া সফর করেন । সফরকালে উভয় দেশ ১২টি চুক্তি স্বাক্ষর করে । এর মধ্যে রাশিয়ায় কয়েক হাজার কিলোমিটার রেল লাইন ও সড়ক নিমাণ এবং তেল, গ্যাস সংক্রান্ত চুক্তি উল্লেখযোগ্য । এক কথায় উভয় দেশ ২০ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি সম্পাদন করে । এছাড়া ভবিষ্যতে আরো কয়েকটি খাতে চীনা বিনিয়োগের কথাও চুক্তিতে লিপিবদ্ব রয়েছে । শি জিনপিং মস্কো অবস্থানকালে রুশ স্টক মাকেট ঘুরে দাঁড়ায় । এরপর থেকে ভ্লামিদিন পুতিনকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি । ইরানের সাথে রয়েছে রাশিয়ার ঘনিষ্ট সম্পক । বিভিন্ন খাতে উভয় দেশ প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি ডলার লেনদেন করে থাকে তুরস্কের সাথেও ঘনিষ্ট সূ-দৃঢ় হচ্ছে । তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান এখন মস্কো সফরে রয়েছে । দেশটির সাথেও রাশিয়ার বেশ কয়েকটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে যা কিনা হোয়াইট হাউসের মাথা খারাপ হবার কথা ।
তৃতীয় বিশ্বে মাকিন আগ্রাসন বিশেষ করে কয়েকটি মুসলিম দেশের ঘটনাবলীতে পুতিন এক প্রকার নীরবতা পালন করে । এতে অধিকাংশ মুসলিম দেশ ভ্লামিদির পুতিনের নীরবতাকে সন্দেহের চোখে দেখছিল । অবশেষে সিরিয়া গৃহযুদ্ব পুতিনের নিদ্রা ভঙ্গে সহায়ক হয় । সিআইএ’এর পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত আইএস এক পযাযে রুশ সীমান্তের দোরগোড়ায় পৌছে যাবার উপক্রম হয় । এর পরের ঘটনাবলী সকলের জানা । রুশ জঙ্গী বিমান ভূপাতিত করে তুরস্ককে ভ্লামিদির পুতিনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চেয়েছিল আমেরিকা । কিন্তু কৃষ্ণ সাগরের বৈরী আচরন উপলব্দি করে রজব তাইয়্যেব এরদোগান পিছু হটতে বাধ্য হন । এর কয়েক মাস পর সিআইএ’র মদদে তুরস্কে একটি ব্যথ সামরিক অভূল্থান পরবতী এরদোগানের বোধগম্য ঢ়টে । এরপর থেকে এরদোগান সরকার চীন ও রাশিয়া নিভর হয়ে পড়ছে । এরদোগানের চলতি মস্কো সফরের মাধ্যমে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে । সিরিয়ার বাসার আর আসাদ ভ্লামিদির পুতিনের নিকট মহাঋণী । আফগানিস্তানে, ইরাক ও লিবিয়ায় আইএস তথা জঙ্গী দমনে ভ্লামিদির পুতিনের সহযোগীতা কামনা করেছে সরকারগুলো । অচিরেই এসব দেশে রুশ হস্তক্ষেপ শুরু হলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে।
ইউক্রেন ও সিরিয়ায় সফল অভিযানের মাধ্যমে ভ্লামিদির পুতিনের যশ প্রতিপত্তি বহুলাংশে বৃদ্বি পেয়েছে । তারই ধারাবাহিকতায় জঙ্গী দমনে বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার সহোয়তা চেয়েছে । পাশ্চাত্যের অধিকাংশ দেশের সাথে পুতিনের সূ-সম্পক রয়েছে । জাতিতে খৃীস্টান হলেও এসব দেশ মাকিন আধিপত্য কোনভাবে সহ্য করতে পারছেনা । ফলে এসব দেশও সূযোগের অপেক্ষায় ছিল । বণবাদী ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর পাশ্চাত্যের সাথে ওয়াশিংটনের সম্পক অবনতি ঘটার পাশাপাশি পুতিনের গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্বি পায় । উপসাগরীয দেশগুলো মূলত: মাকিন নিভরশীল । দেশ পরিচালনা, পররাষ্ট্রনীতি এমনকি সামরিক বিষয়েও পাশ্চিমা ব্যবস্থাপত্র গ্রহন করে আসছে । কিন্তু সিরিয়া ইস্যু অথাত আইএস’এর পতনের পর রাজা বাদশা ও বিশেষ দূতরা ঘন ঘন মস্কো সফর করছে । এমনকি গত বছর সৌদী আরব রাশিয়া থেকে শত শত কোটি ডলারের সমরাস্ত্র ক্রযের চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন । সিরিয়া অভিযানের অজুহাতে ফ্রান্স রাশিয়া থেকে অগ্রিম অথ গ্রহন করেও দুইটি মিত্তাল শ্রেনীর যুদ্ব জাহাজ প্রদান করেনি । অপরদিকে সৌদী বাদশা একধাপ এগিয়ে উক্ত যুদ্ব জাহাজগুলো মিশররে জন্য ক্রয় করে । অথচ মিশরের সামরিক জান্তা জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আর সিসি’র সাথে ভ্লামিদির পুতিনের ঘনিষ্ট সম্পক রয়েছে ।
বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব প্রতিপত্তি কিংবা ভারসাম্য রক্ষায় ভ্লামিদির পুতিন অনেকদূর এগিয়ে রয়েছে । এক সময যেসব দেশ রুশ তথা ভ্লামিদির পুতিনকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনা করত বতমানে সেসব দেশ মস্কোর সাথে যোগাযোগ বৃদ্বি করে চলেছে । আফ্রিকা মহাদেশের ৩৫টি দেশের সাথে রাশিয়ার সম্পক রয়েছে । অপরদিকে মধ্য আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলা, বলিভিয়া, প্যারাগুযে, নিকারাগুয়া, ব্রাজিল, ইকুয়েডরের সাথে মাকিনীদের সম্পকের চিড় ধরেছে । এক সময়ের ঘনিষ্ট মিত্র ফিলিপাইন ও মেক্সিকো’র সাথে আমেরিকার দা কুমড়ো পরিস্থিতি বিরাজ করছে । পাক – রুশ সম্পক আরো ঘনিষ্ট হচ্ছে । এক কথায় ঠান্ডা মস্তিস্কের অধিকারী ভ্লামিদির পুতিন যেন বিশ্ববাসীর হৃদয় জয় মিশনে নেমেছে । মূলত: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্বের পর আমেরিকার আগ্রাসী মনোভাবের কারনে অধিকাংশ দেশ ক্ষুব্দ । এসব দেশ সরাসরি প্রতিবাদ না করলেও এমন একটা সূযোগের অপেক্ষায় ছিল । ভ্লামিদির পুতিনের সময়োপযোগী কমকান্ডের সুবাদে সেই মহেন্দ্রক্ষনটি এসে গেছে । অথাত মাকিনীদের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারনে ভ্লামিদির পুতিন বিশ্বের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন ।
লেখক সিনিয়র রিপোর্টার এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।