যেভাবে তৃণমূল থেকে শীর্ষ রাজনীতিবিদ হলেন মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কাদের | বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্ক :

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের অসুস্থতায় গোটা দেশবাসী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন এখন। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা অবশ্য জানিয়েছেন, ক্রমেই উন্নতির দিকে রয়েছে দেশের অন্যতম শীর্ষ এই রাজনীতিকের শরীর। একজন শিক্ষকের সন্তান থেকে কীভাবে তিনি দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ হয়ে উঠলেন, সেকথা জানা নেই অনেকেরই।

 

১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি, নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ থানার বড় রাজাপুর গ্রামে জন্ম নিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তার বাবা মোশারফ হোসেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহপাঠী ছিলেন। জনসেবার ব্রত নিয়ে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন।

 

কর্মজীবনের বসুরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর নেন মোশারফ হোসেন। ১৯৯৩ সালের ২৩ জুলাই ইন্তেকাল করেন মহান এই ব্যক্তিত্ব। অন্যদিকে ওবায়দুল কাদেরের মা ফজিলাতুন্নেসা ছিলেন গৃহিনী।

 

ওবায়দুল কাদের কোম্পানিগঞ্জের বসুরহাট সরকারি এএইচসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি ও নোয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে মেধা তালিকায় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্সসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

 

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা ওবায়দুল কাদের ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালে গণঅভুত্থান এবং ছাত্রদের ১১ দফা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে নিজ এলাকা কোম্পানিগঞ্জে ফিরে মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

 

বিভিন্ন রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। এরমধ্যে ১৯৭৫ এর পর একনাগাড়ে দীর্ঘ আড়াই বছর কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং পরপর দুইবার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

 

১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২৩ জুন ’৯৬ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। একই দিনে যুব ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

 

তিনি ২০০১ সালের ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। ২০০০ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সংস্কৃতি ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

 

২০০২ সালে তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এ পদে ছিলেন তিনি। এ পদে থাকার সময়ই তিনি এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ মার্চ গ্রেফতার হন। ১৭ মাস ২৬ দিন কারাগারে ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্ত হন। কারাগারে থাকাকালে কারাজীবনের বর্ণনা দিয়ে ‘অনুস্মৃতি : যে কথা বলা হয়নি’ লেখেন।

 

এর আগে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। পরের কাউন্সিলের দলের সর্বোচ্চ ফোরাম প্রেসিডিয়ামে ঠাঁই পান তিনি। তিনি ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো নোয়াখালী-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

 

২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর যোগাযোগমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ওবায়দুল কাদের। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি নোয়াখালী-৫ আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী হন তিনি।

 

২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলনে তিনি ২০১৬-২০১৯ মেয়াদে দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

 

কর্মজীবনের শুরুতে ওবায়দুল কাদের দৈনিক বাংলার বাণী পত্রিকার সহকারী সম্পাদক হিসাবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। জীবনের অনেক চড়াই উৎরাই গেলেও লেখালেখি ছাড়েননি। ওবায়দুল কাদেরের রচিত গ্রন্থের সংখ্যা ৯টি। গ্রন্থগুলি হলো- Bangladesh : A Revolution Betrayed, (যা ১৯৭৬ সালে কলকাতা মনীষা পাবলিশার্স প্রকাশ করেছে), বাংলাদেশের হৃদয় হতে, পাকিস্তানের কারাগারে বঙ্গবন্ধু, এই বিজয়ের মুকুট কোথায়, তিন সমুদ্রের দেশে, মেঘে মেঘে অনেক বেলা, রচনা সমগ্র, কারাগারে লেখা অনুস্মৃতি: যে কথা বলা হয়নি, নির্বাচিত কলাম ও গাংচিল।

 

ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা একজন আইনজীবী। এই দম্পতির কোনও সন্তান নেই, তবে দেশের কোটি মা-বাবার সন্তানদের জন্য সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গড়ার জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন তারা। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতিকে সুস্থধারায় ফিরিয়ে আনতে এবং ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ গড়তে ওবায়দুল কাদেরের অবদান অনস্বীকার্য। এই আজন্ম দেশপ্রেমিক জীবনে আরও অনেক কিছুই হয়তো দেবার আছে দেশকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *