সোনাগাজী (ফেনী)প্রতিনিধি :
ফেনীর সোনাগাজী পৌরসভাস্থ চর গনেশ গ্রামের শেখ বাড়ীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সিরাজ উদ দৌলার স্ত্রী শাহানা বেগম (৫৬) গত২৬ জানুয়ারী ২০১৮ তারিখ শুক্রবার সকাল ১০টায় নিজ শয়নকক্ষে খুন হয়। খুনের ১বছর পরও প্রকৃত ক্লু উদঘাটন হয়নি। ২৯জানুয়ারী নিহতের দেবর শেখ সেলিম বাদি হয়ে মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। হত্যায় জড়িত সন্দেহে বিভিন্ন সময়ে গৃহকর্মী খাতিজা বেগম(৫৭), তার মেয়ে হালিমা আক্তার(৩৬), কর্মচারি আবদুল্লাহ রানা (১৫)ও নিহতের স্বামী শেখ সিরাজ(৭৭)কে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ। ধৃতরা সকলেই কারাবন্দী রয়েছেন।
পরিবারের দাবি সোনাগাজী মডেল থানার তৎকালিন ওসি (তদন্ত) মো. হারুনুর রশিদ এবং তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সেলিম উজ জামান মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পুর্ব শত্রু কর্তৃক প্রভাবিত হয়ে হত্যাকান্ডকে ভিন্নক্ষাতে নেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তারই অংশ হিসেবে খুনের মিশনে জড়িত গৃহকর্মী খতিজা বেগমের নাতি আবদুল্ল্যাহ রানাকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে জোরপুর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করেন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। ওই বিতর্কিত এবং বানোয়াট স্বীকারোক্তি আদায়ের পর নিহতের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা শেখ সিরাজ কে আটক করে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশের ওই পরিদর্শক হারুন অর রশিদ।
শেখ সিরাজের আইনজীবি এড. জাহাঙ্গীর আলম নান্টু বলেন, জোরপুর্বক আদায়কৃত ওই স্বীকারোক্তির বিষয়ে আদালতে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। এবং অভিযোগের শুনানিতে রানা অাদালতকে বলেছেন পুলিশ পরিদর্শক হারুন অর রশিদ তাকে শিখিয়ে দেয়া জবাববন্দি দিতে বাধ্য করেছেন ।
সর্বশেষ গত ২১ জানুয়ারী মামলার বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহনেওয়াজ নিহতের বাড়ীর দরজায় দুটি চা দোকানে আগতদের জিঙ্গাসাবাদ করেন। তাদের মধ্যে শেখ লেদুমিয়া(৭৮) বলেন, ওইদিন সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত তিনি শেখ সিরাজের চা দোকানে বসা ছিলেন, সাড়ে ৮টার সময় তাকে দোকানে রেখে বাজারে যান শেখ সিরাজ। ১০টায় সময় দোকানের বাজারসহ দোকানে আসেন শেখ সিরাজ।
নিহতের বাড়ীর সামনের চা দোকানদার শেখ সুমন(৪৩) বলেন, ঘটনার দিন সকাল প্রায় সাড়ে ৮টার দিকে বাজারে যাওয়ার সময় মসজিদের মাসিক চাঁদা চেয়েছিলেন। তখন সাবেক মেয়র জামাল উদ্দিন সেন্টু দোকানে বসা ছিলেন। সকাল ১১টার দিকে তিনি শুনেছেন শেখ সিরাজের স্ত্রী খুন হয়েছেন। এবং তিনি নিজেই সিএনজি যোগে ভিকটিমকে হাসপাতালে পাঠান।
এছাড়া দক্ষিন চরের পৈত্রিক জমির কাগজের জন্য ওইদিন সকালে শেখ সিরাজের দোকানে এসেছিলেন ওলামাবাজার সংলগ্ন হাজী নুরুল ইসলমের ছেলে তাজুল ইসলাম রাসেল (৪২)। তিনি বলেন, সকালে শেখ সিরাজ তাকে কাগজপত্রের জন্য দোকানে আসতে বললেন। সকাল পৌনে ৯টায় আসার পথে তিনি শেখ সিরাজকে জেলে পাড়া সংলগ্ন ব্রিজের উপর দেখলেন,রিক্সায় বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন। তাকে দোকানে যাওয়ার জন্য বলেছিলেন শেখ সিরাজ। যাওয়ার পথে শেখ সুমনের দোকান থেকে সিগারেট নেয়ার সময় সাবেক মেয়র সেন্টুকে বসা দেখেছেন। এরপর শেখ সিরাজের দোকানে গিয়ে শেখ লেদুমিয়াকে বসা দেখলেন। সকাল প্রায় ১০টায় শেখ সিরাজ দোকানের বাজারসহ দোকানে আসেন।তাকে কাজগপত্র বুঝিয়ে দেয়ার পর তিনি দক্ষিন চরে চলে যান।সকাল১১ টার দিকে তিনিও লোক মারফত শুনতে পান শেখ সিরাজের স্ত্রী খুন হয়েছেন।
মামলার বাদি শেখ সেলিম জানান, প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা সেলিম ও ওসি (তদন্ত) হারুনুর রশিদ হত্যাকান্ডকে ভিন্নক্ষাতে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। নিহতের পরিবারকে নানাভাবে নাজেহাল করেছিলেন।। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার মাধ্যমে তদন্ত হলে হত্যাকান্ডের মুল রহস্য উদঘটিত হবে।
মডেল থানার ওসি মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হত্যাকান্ডের বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) পরিবর্তন হওয়ায় চার্জশিট দাখিলে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।