সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ গজারিয়া নদীপথের ঘাটে মালবাহী বালু-পাথর কয়লা বোঝাই বাল্কহেড (ষ্টীল বডি নৌকা) থেকে চাঁদা দাবী করে টাকা আদায় শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডবিøউটিএ, আশুগঞ্জ ভৈরব নিয়ন্ত্রনাধীন সুনামগঞ্জ নদী বন্দর) এর একটি রিসিট দেখিয়ে অস্বাভাবিক পরিমাণ টাকা আদায়ের ঘটনাকে চাঁদাবাজি দাবি করে এর প্রতিবাদে ফেনারবাঁক ইউনিয়নের গজারিয়া এলাকায় নৌ- মালিক শ্রমিকরা কাজ না করে কর্মবিরতী ও মানববন্ধন কর্মস‚চী পালন করেছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নৌযান ও মালিক পক্ষের হাজরো শ্রমিকরা গজারিয়া এলাকায় নৌ- মালিক শ্রমিকরা কাজ না করে কর্মবিরতী ও মানববন্ধন কর্মস‚চী পালন করেন।
স্থানীয় নৌ-মালিক ও শ্রমিকরা জানান, জামালগঞ্জের ফেনারবাঁক ইউনিয়নের বৌলাই ও সুরমা নদীর মোহনায় কোন বালু বা পাথর মহাল নেই। ওখানে বর্ষায় বালু-পাথর মজুদ করে রাখেন কিছু ব্যবসায়ী। মহাল থেকে বালু-পাথর কেনার সময় এরা নির্ধারিত রয়েলিটি দিয়েই কিনেন। মঙ্গলবার থেকে হঠাৎ করেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক ইউপি সদস্য রমজান আলী এখানে বিআইডবিøউটিএর রশিদ দিয়ে প্রতিফুট বালু’র জন্য ২৫ পয়সা টোল দিতে হবে জানিয়ে টাকা আদায় শুরু করেন। কিছু শ্রমিকরা টাকা দিতে অস্বীকার করলে চাদাঁবাজরা তাদের মারপিটর করে। এমবি ইলিয়াছ বলগেট জাহাজের সোকানী মো: মহসীন মিয়া জানান আমরা ফাজিলপুর বালী মহালে রয়েলিটি দিয়ে আসি নদী পথে চাদাঁবাজরা দল বেধেঁ ছোট ছোট নৌকা যোগে জাহাজে আসে কেউ বলে রয়েলেটি, কেউ বলে বিআইডবিøউটিএ, আবার কেউ বলে পৌর টেক্স, কেউ বলে ইউনিয়ন টেক্স এসব বলে আমাদের ভয় দেখিয়ে চাদাঁ আদায় করে, চাদাঁ দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে আমাদের মারধর করে।আমরা চাঁদাবাজদের কারনে নদীতে ভয়েভীতি নিয়ে জাহাজ চালাতে হয়।
খোজঁনিয়ে জানাযায় গাজাঁরিয়া এলাকার প্রভাবশালী রমজান আলী’র লোকজন গত কয়েকদিন ধরে চলতি নদীতে গজাঁরিয়া এলাকায় বিআইডবিøউটিএর নামে চাঁদা আদায় করছে। তারবিরদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে ভয়পায়। চাদাঁ আদায়ের প্রতিবাদ জানাতে মঙ্গলবার বিকাল ৩ টা থেকে নৌ শ্রমিকরা গজাঁরিয়া ঘাটে কাজ বন্ধ রাখেন। বুধবার দুপুরে এর প্রতিবাদে মানববন্ধন ও দিনব্যাপী ধর্মঘট পালন করেন নৌ-পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। মানব বন্ধনে চলতি নদীতে চাদাাঁজী বন্ধের জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে দাবী জানান নৌ পরিবহন শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ নৌ-যান কর্মচারী ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং গাবতলি শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল আলীম শেখ বলেন,‘মঙ্গলবার থেকে হঠাৎ করে এখানে বিআইডবিøউটিএর নামে চাঁদাবাজি শুর হয়েছে। এর আগে কখনোই এভাবে টাকা আদায় করা হয়নি। এখানে টোল ট্যাক্স আদায়ের কোন যুক্তিও নেই।’ তিনি জানান, এমভি ঝিলিক, এমভি হান্নানসহ ১৫/২০টি বলগেট জাহাজ’এর কাছ থেকে বিআইডবিøউটিএর নামে টাকা তোলার রশিদ তাঁর কাছে রয়েছে। রশিদে যা লেখা, এর চেয়ে বেশি টাকাও কোন কোন ক্ষেত্রে আদায় করছে এরা (কথিত ইজারাদার রমজান আলীর লোকজন)।
স্থানীয় কয়েকজন শ্রমিক জানান, গজাঁরিয়া এলাকার প্রভাবশালী সকলকেই বুধবারের মধ্যে নিজের পক্ষে নিয়েছেন রমজান আলী। নিরীহ শ্রমিকরা এখন প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। একেকটি বলগেট জাহাজ থেকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ইজারাদার রমজান আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান তার লোকজন গজাঁরিয়া ঘাটে বলগেট থেকে রশিদ দিয়ে সরকারের রাজস্ব আদায় করছে। তিনি কোন চাদাঁবাজী করছেন না যা করছেন ঠিক করছেন এবং সেই জন্যে তাকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আল ইমরান বলেন,‘বিষয়টি সম্পর্কে গত দুই দিনে স্থানীয় অনেকেই ফোন করে জানিয়েছেন। এর আগে কখনোই এখানে এভাবে অর্থ আদায় করা হয়নি। আমাদের এ ব্যাপারে কোন চিঠিও দেওয়া হয়নি। বিআইডবিøউটিএর কাছ থেকে ইজারা এনেও যে পরিমাণ অর্থ আদায়ের কথা শুনেছি, তা সত্য হলে এটি ন্যায়সঙ্গত হবে না। থানার ওসি ও নৌ-পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জামালগঞ্জ থানার ওসি আবুল হাসেম বলেন,‘২১ জানুয়ারিতে বিআইডবিøউটি’এর উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ডাক বিভাগের মাধ্যমে আমাদের কাছে এসেছে। ওই চিঠিতে উল্যেখ আছে, সুরমা ও বৌলাই নদীর মোহনায় গজারিয়া লঞ্চঘাট ছাড়া অন্য এলাকায় ২২ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্তএক মাসের জন্য ঘাটের ইজারা আদায় করবেন রমজান আলী। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেবকে এই বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন। তিনি (ইউএনও) বুধবার কয়েকবার আমাকে ফোন দিয়েছেন। আমরা নিজেরা এই বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছি, নৌ-পুলিশকেও বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি।’
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ-১ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন জানান নদীতে কোন চাদাঁবাজী চলবে না রমজান কোন দলের কেউ নয় কোন চাদাঁবাজরা নদীতে চাদাঁবাজী করতে পারবেনা রমজানকে গ্রেফতার করার জন্য জামালগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে বলা হয়েছে এবং নৌ মন্ত্রনালয়ের কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।