বাংলাদেশে আর কোনদিন খুনীদের রাজত্ব আসবে না : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | বাংলারদর্পন 

বাসস : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আর কোনদিন খুনীদের রাজত্ব ফিরে না আসার ব্যাপারে দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ আর কোনদিন খুনীদের ক্ষমতায় আসতে দেবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুনীদের রাজত্ব এ দেশে আর আসবে না, আসতে দেওয়া হবে না। মুজিব আদর্শের প্রতিটি সৈনিককেই এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চলতে হবে, কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না।’

প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আজ বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতির পিতার ৪৩তম শাহাদৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।

জাতির পিতার হত্যকান্ডের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যত বড়ই হোক, কেউ যদি কোন অন্যায় করে তার বিচার বাংলাদেশের মাটিতে হবেই।

তিনি বলেন, ‘যারা বংশপরম্পরায় এই চক্রান্ত করে যাচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণকে বলবো এদের সম্পর্কে আপনাদেরও সচেতন থাকতে হবে। কারণ, এরা বাংলাদেশের উন্নয়ন, মানুষের কল্যাণ, মানুষের ভাল দেখতে চায় না। শুধু নিজেরাই ভালো থাকতে চায়।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টার অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের দেশের উন্নয়ন সহ্য হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘যারা শিশুদের নিয়ে খেলতে চায়, তাঁদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়, তারা বাংলাাদেশের জনগণের ভবিষ্যতকেই আসলে অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়। আলোর পথে যাত্রায় বাধা দিতে চায়।’

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপি এবং দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়–য়া বক্তৃতা করেন। দলের যুগ্ম-সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, সিমিন হোসেন রিমি এমপি এবং কেন্দ্রীয় নেতা আনোয়ার হোসেন আলোচনায় অংশ নেন। সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন আহকাম উল্লাহ।

দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম স্মরণ সভাটি পরিচালনা করেন।

 

শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিদেশি দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করা এবং ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে জাতির পিতার খুনীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিলেন অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী সেনাশাসক জিয়াউর রহমান। আর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভোট চুরি করে সেই খুনীদের জাতীয় সংসদে বসিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘তাঁর অর্থ কি দাঁড়াচ্ছে জিয়া শুধু নিজেই নয়, তার স্ত্রীও ১৫ আগস্ট হত্যার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং তাতে কোন সন্দেহ নেই।’

খুনীরা সবসময়ই খুনীই হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই খুনীরাই ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা করেছে এবং বার বার হত্যার চেষ্টা করছে। কাজেই, এদের হাতে ক্ষমতা গেলে দেশের উন্নতি কি হবে? প্রশ্ন রাখের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অন্যায়ের মাধ্যমে যাদের ক্ষমতায় আরোহন তারা কখনো ন্যায় বিচার করতে পারে না।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় শহীদ রমিজ উদ্দিন স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর সম্প্রতিক বাসচাপায় মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা আবার সক্রিয় হয়েছিল উল্লেখ করে বলেন, বাস চাপায় দুু’টি শিশু মারা গেল, সাথে সাথে তাঁর সরকার পদক্ষেপ নিয়ে ঐ ঘাতক বাসের ড্রাইভার-হেলপারকে গ্রেফতার করলেও ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় বেরিয়ে আসার পর কারা উস্কানি দিয়েছে।

তিনি বলেন, তাঁর করে দেওয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে উস্কানি দিয়ে দিয়ে, মিথ্যা কথা বলে বলে দেশে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য কি?

এখানে উস্কানিদাতাদের অনেকেই অনেক বড় বড় আঁতেল হলেও তাঁদের রক্তের সূত্রটা ঐ পাকিস্তানেই উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি এদের কাউকে কাউকে গ্রেফতারে আবার মিডিয়ায় অহেতুক আলোড়নের সমালোচনা করে বলেন, কেউ যদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোমলমতিদের উস্কানি দিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করতে চায় তাহলে তাদের প্রেফতার করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা রাষ্ট্রের কর্তব্য।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্কুল ছাত্র সেজে স্বার্থান্বেষী মহলের অনুপ্রবেশের উল্লেখ করে বলেন, ‘ঐ বুড়োদের আবার গুড়ো হওয়ার সাধ জাগলো কেন? উদ্দেশ্যটা কি? ব্যাগে বইয়ের পরিবর্তে দা, চাইনিজ কুড়াল, পাথর, অস্ত্র-সস্ত্র তাহলে এরা আবার কোন স্কুলের ছাত্র?’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবী এবং এক শ্রেণির মিডিয়ার কাঠোর সমালোচনা করে তাঁদের দেশ ও জাতির স্বার্থে বস্তুনিষ্ট সংবাদ পরিবেশনের আহবান জানান এবং তাঁর সরকারের সময় বলবৎ থাকা মিডিয়ার অবাধ স্বাধীনতার অপব্যবহার করে কেউ যেন দেশ ও জাতির কোন ক্ষতি সাধন না করেন সেদিকে সতর্ক করেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যাতে জনপ্রিয়তা হারায় তা নিশ্চিত করাই যেন কিছু কিছু পত্রিকার কর্তব্য। কারণ, দেশে যখন অসংবিধানিক সরকার থাকে, দেশে যদি কোন গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকে, তখন এই অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের কাছে তাদের কদর বাড়ে। এরা একটা পতাকা পাবে, ব্যবসা পাবে, এরাই সুযোগ সন্ধানী।

শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, এদের কারণেই বাংলাদেশের মানুষকে বার বার বিপদে পড়তে হয়েছে। এদের কারণেই দেশের মানুষ বার বার তাঁদের অধিকারহারা হয়েছে। বাংলাদেশ বারবার গণতন্ত্র হারিয়েছে, এরাই সংবিধান ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে। আর এরা এখনও তাদের পূর্বপ্রভূদের ভুলতে পারে না। পাকিস্তানীদের পদলেহন করাই তাদের চরিত্র।

ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে গেল বলে আজকে এই শ্রেণির মন খারাপ, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *