যে কারণে খুলনায় মুখ থুবড়ে পড়লো বিএনপি | বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্ক: খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনেক আগে থেকেই বিএনপি প্রার্থী মঞ্জুর পরাজয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খুলনা জেলা বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা। তার মতে, খুলনায় যেমন নির্বাচন হয়েছে ঠিক একই রকম নির্বাচন হয়েছিল কুমিল্লাতেও। কিন্তু কুমিল্লায় বিজয়ী হলেও খুলনায় বিএনপির রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে। এই ব্যর্থতার জন্য খুলনার স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধামহল ও সাধারণ মানুষ কয়েকটি কারণকে দায়ী করছেন।

প্রথমত: দলীয় কোন্দল। খুলনায় বিপর্যয়ের জন্য প্রধান কারণ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে দলীয় কোন্দলকে। মনোনয়ন বঞ্চিত সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি এই নির্বাচনে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন। শুধু মনি নয়, কমিশনার পদে মনোনয়ন বঞ্চিত অন্তত ৮ জন বিদ্রোহী প্রার্থী সরাসরি তালুকদার আব্দুল খালেকের পক্ষে কাজ করেছেন বলে বিএনপির হাই কমান্ডে অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী মন্জুর নিজেই। তাই মনির সমর্থকদের বিরুদ্ধাচরণ খুলনায় ধানের শীষের পরাজয়ের প্রধান কারণ হিসেবে দেখছে বিএনপি।

দ্বিতীয়ত: নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়াও পরাজয়ের আরেক কারণ ছিল জামায়াতের বিশ্বাসঘাতকতা। আওয়ামী লীগের পরেই খুলনা হলো জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা। জামায়াত দাবি করে খুলনা সিটিতে তাদের ৭০ হাজার ভোট আছে। যদিও প্রকৃত হিসাবে এই ভোট ৪০ হাজারের বেশি নয়। কিন্তু জামায়াত এবার নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে ভোট দেয়নি। বিএনপির নিজস্ব ভোট ব্যাংকের সাথে জামায়াতের ৪০ হাজার ভোট যুক্ত হলেও হারের ব্যবধান এত বেশি হবার কথা নয়। ভোটের দিন জামায়াতের কোনো প্রতিনিধিকেও পাওয়া যায়নি। কাজেই জামায়াতের বিশ্বাসঘাতকতা খুলনায় বিএনপির বিপর্যয়ের একটা বড় কারণ ছিল বলেই মনে করছেন অনেকে।

তৃতীয়ত: খুলনায় বিএনপির বিপর্যয়ের আরেকটি কারণ হলো নেতৃত্বহীনতা। বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার থাকায় নির্বাচন নিয়ে তিনি কোনো নির্দেশনা বা অনুপ্রেরণা দিতে পারেননি। বিএনপির অধিকাংশ নেতাই মনে করেন, নিজ দলে শেখ হাসিনার যেমন একটা কারিশমা আছে বেগম জিয়ারও আলাদা একটা কারিশমা আছে, যা ভোটে বিএনপির প্লাস পয়েন্ট হতে পারতো। খালেদা জিয়া ছাড়া অন্য কেউ যে বিএনপিতে জাতীয় নেতা নন এই নির্বাচনে সেটিই প্রমাণিত।

চতুর্থত: অর্থ সংকট। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় নির্বাচনের অর্থ দল বহন করবে এই আশ্বাসে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনে প্রার্থী হবার সুযোগ পেলেও নির্বাচনের মাঠে বাস্তবে তা না হওয়ায় অর্থ সংকটে পড়ে যান মন্জুর। মূলতঃ এ কারণেই তিনি নির্বাচনের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন এবং পরাজয়ের গ্লানি থেকে বাচতে বিভিন্ন উসিলায় নির্বাচন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন কয়েকবার।

পঞ্চমত: ফল বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান আরেকটি কারণ ছিল গত সেশনের সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনির ব্যর্থতা। ২০১৩ থেকে এ পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিএনপির এই নেতা। কিন্তু এই ৫ বছরে খুলনা সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে মনি উল্লেখযোগ্য কিছুই করতে পারেননি। বরং ২০০৮-২০১৩ তে বর্তমান বিজয়ী প্রার্থী তালুকদার খালেক যে উন্নয়নের জোয়ার এনেছিলেন, সেটিকেও মনি ধরে রাখতে পারেননি। তাই খুলনায় ভোটাররা বিএনপিকে ভোট দিয়ে খুলনাকে আবার উন্নয়ন বঞ্চিত করতে চায়নি বলেই মনে করছেন সুশীল সমাজ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতো, যে কারণগুলোর প্রভাবে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটেছে তা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির বিপর্যয় ঘটতে পারে বলেই মনে করছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *