কোম্পানীগঞ্জ বিএনপিতে কোন্দল-বিভক্তি চরমে : অন্ধকারে মওদুদ আহমদ

 

কোম্পানীগঞ্জ : নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনটি জেলার ভিআইপি আসন হিসেবে খ্যাত। এখানে দীর্ঘদিন থেকে যে দলই সরকার গঠন করে সেই দলের প্রভাবশালী মন্ত্রী হন এ আসনের এমপি। ফলে দিনে দিনে এ আসনটি বিভিন্ন দিক থেকে ভিআইপির মর্যাদা পেয়ে আসছে। এখানে দুই প্রতিদ্বন্দ্বির একজন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অপরজন হচ্ছেন সাবেক উপ-রাষ্ট্রপতি ও সাবেক আইনমন্ত্রী এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। অতীতের যে কোন নির্বাচনে এ দু’জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জমজমাট হয়ে ওঠে নির্বাচনী মাঠ।

 

এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে বিএনপির মতো দল রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে বির্ষিয়ান নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এখন ভবিষ্যত রাজনীতিতে বেকায়দায় রয়েছেন বলে অনেকে মন্তব্য করছে। কারণ হিসেবে জানা গেছে, এ আসনের দুই উপজেলায় বিএনপিতে রয়েছে চরম কোন্দল, নানা গ্রুপিং ও নেতাদের স্বজনপ্রীতি। এখানকার বিএনপি নেতারা মওদুদ আহমদের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের চাইতে দল বিক্রি ও পদ বিক্রিতে নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন বলে নেতাকর্মীদের অভিযোগ।

 

এ আসনের দুই উপজেলার মধ্যে ওবায়দুল কাদের ও মওদুদ আহমদের জন্মস্থান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। আর এ উপজেলায় বিগত ২০০৮ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওবায়দুল কাদেরের চাইতে ১০ হাজারের অধিক ভোট পেয়ে এগিয়ে ছিলেন। পরে কবিরহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওবায়দুল কাদের অধিক ভোট পেয়ে সমগ্র আসনে মাত্র ১৩৭১ ভোটে জয়লাভ করেন। নেতাকর্মীরা মনে করে, তখন কোম্পানীগঞ্জে জয়লাভের মূল কারণ ছিল সংঘঠিত বিএনপি-জামায়াতের শক্ত অবস্থান ও তখনকার উপজেলা নির্বাচনের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফখরুল ইসলাম। যিনি নিজের নির্বাচনের স্বার্থে উপজেলার আট ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ব্যাপক গনসংযোগসহ মওদুদ আহমদের পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন তৈরি করেন।

 

বর্তমানে সেই কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে কোন্দল-বিভক্তি চরম আকার ধারণ করেছে। এখানকার বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হলেও এটা পদ-পদবির জন্য নেতার আনুগত্য বলে অনেকে মনে করে। কারণ এখানকার বিএনপির বিবদমান দুইটা গ্রুপই সরকারি দলের সাথে আঁতাত করে রাজনীতিতে টিকে থাকা ও লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্যেকটা নির্বাচনে বিএনপির প্রায় নেতা আওয়ামী লীগের কাছে দলকে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই সেলিম এবং অপর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম শিকদার। আর উপজেলা বিএনপি যুবদল ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের কিছু অংশ এদের দুই গ্রুপে থাকলেও দলের বিশাল অংশটি এ বিভক্তিকে অপছন্দ করে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কর্তৃক উপজেলা ও পৌর বিএনপির সম্মেলন করার ঘোষণা দেয়ায় দলের মধ্যে চাঙ্গা ভাবের চাইতে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের সাথে দ্বিধা-দ্বন্ধে জড়িয়ে দলের মধ্যে চরম বিভক্তিতে রূপ নিয়েছে।

 

এদিকে সাধারণ সম্পাদক শিকদার ছাড়াও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই সেলিমের আরেক মানষিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর আপন ছোটভাই বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বেলায়েত হোসেন স্বপন। তাঁদের দুই ভাইয়ের পারিবারিক দ্বন্দ্ব এখন বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাব পড়ছে বলে অনেকে জানিয়েছে। শুনা যাচ্ছে আগামি সম্মেলনে আবদুল হাই সেলিমের বিপক্ষে বেলায়েত হোসেন স্বপনও সভাপতির পদে লড়তে চান। সেই লক্ষ্যে স্বপনও এলাকায় চষে বেড়াচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত বেলায়েত হোসেন স্বপন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না থাকেলও তিনি নিজের লোকজনকে সভাপতি আবদুল হাই সেলিমের আষ্টে-পিষ্টে জড়িয়ে দিয়েছেন। বর্তমানে আবদুল হাই সেলিমের আশ পাশে যারা রয়েছেন সকলেই কোন না কোনভাবে বেলায়েত হোসেন স্বপনের কাছের লোক বলে পরিচিত। এসব লোকজন কমিটির দায়িত্বে আসলে সেলিম-স্বপনের দ্বন্দ্বে বিএনপি আরো বেশি তুষের আগুনে পুড়বে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করে।

 

অপরদিকে বিএনপির আরেক গ্রুপের নেতা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম শিকদার। তার সাথে সভাপতি সেলিমের চরম দ্বন্দ্ব এখন প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। সমগ্র উপজেলার প্রত্যেক ইউনিয়নের বিএনপি নেতাকর্মীরা এ দুই নেতার রাজনৈতিক বিরোধে অতিষ্ট। নুরুল আলম শিকদার তৃণমূল থেকে দলের রাজনীতি করে উঠে আসলেও সভাপতির সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে তিনি একটি পক্ষের নেতৃত্ব দেয়ায় সেলিম সমর্থিত নেতাকর্মীরা তাকে চরম অপছন্দ করছে। অপর দিকে শিকদার সমর্থিতরা সেলিম গ্রুপের নেতাকর্মীদের বিরোধিতা করায় বিএনপি এখন উভয় গ্রুপের দ্বন্দ্বে চমরভাবে রাজনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য, ভবিষ্যতে বিএনপির এ সংকটের চরম খেশারত দিতে হবে এসব বিষয়ে অন্ধকারে থাকা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে।

 

এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নানা কথা বাজারে চাউর হচ্ছে। এরমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ বিএনপিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের একক নিয়ন্ত্রণ থাকায় সবাই এখন তাঁর সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে আছে। তবে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত কমিটির নাম হিসেবে অঘোষিত প্যানেলের মধ্যে শিকদার-জাহাঙ্গীর, সেলিম-রিপন, স্বপন-লিটনের নাম সভাপতি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আলোচিত হচ্ছে। এছাড়া অনেকে বলছে, উপজেলা ও পৌর বিএনপির দুই সভাপতিকে রেখে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসছে। সেক্ষেত্রে উপজেলায় সাধারণ সম্পাদক পদে সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, পৌর বিএনপিতে সাধারণ সম্পাদক পদে যুবদল সভাপতি আবদুল মতিন লিটনের নামও আলোচিত হচ্ছে।

 

তবে অতীতের সম্মেলন পর্যালোচনা করে নেতাকর্মীরা জানান, আগের কমিটি বহাল রাখতেই ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এমন কৌশল নিয়েছেন। তবে বিএনপির সকল গ্রুপের নেতা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *