আমি জনগণের সেবক, আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই’ | বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্ক :

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কবিগুরুর ভাষায় বলতে চাই, এ মনিহার আমার নাহি সাজে। আমি জনগণের সেবক। আমি এই সংবর্ধনা বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করলাম। জনগণের জন্য কাজ করতে এসেছি। জনগণ কতটুকু পেল সেটাই আমার কাছে বিবেচ্য বিষয়। এর বাইরে আর কোনো কিছু চাওয়া-পাওয়া নেই আমার। সংবর্ধনার আমার প্রয়োজন নেই।’

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন। আজ শনিবার বিকেল পৌনে ৫ টার দিকে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভাষণ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমি মাত্র ৫ ঘন্টা ঘুমাই। বাকি ১৯ ঘণ্টা দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করি। আমার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। আমি চাই, বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুধা মুক্ত, দারিদ্র মুক্ত হোক। দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হোক। আমি জাতির পিতার দেখে যাওয়া স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।

নৌকা বিদ্বেষীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে বলে নৌকা ঠেকাতে হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন, কেন নৌকা ঠেকাতে হবে? সামনে বন্যা, শ্রাবণ মাস। নৌকাতে চড়েই তো দেশের জনগণ পার পাবে। তাহলে নৌকা ঠেকিয়ে লাভ কি? যারা নৌকা ঠেকাতে চান তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, নৌকা ঠেকিয়ে কি রাজাকার ক্ষমাতায় আনতে চান?

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই মুখে ভারত বিদ্বেষের কথা বলে। কিন্তু তারাই ভারতে গিয়ে তোষামোদ করে। ১৯৭৫-এর পর কোনো সরকার গঙ্গার পানি চুক্তি নিয়ে কথা বলেনি। জিয়াউর রহমান না, খালেদা জিয়াও না, এরশাদও না। কোনো এক প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে গঙ্গার পানি চুক্তির কথা বলতে ভুলে গিয়েছিল। কিন্তু আমরা ভুলি না। আমরা গিয়ে ঠিকই পানি চুক্তির কথা বলেছি (উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারত গিয়ে গঙ্গা পানি চুক্তির কথা ভুলে গিয়েছিলেন)।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জাতির পিতা হত্যার বিচার করেছি আমরা। আর এই বিচারের মাধ্যমে কলুষ মুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।’

বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নই প্রধান লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জাতির পিতা যেমন স্বপ্ন দেখতেন বাংলাদেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, আমারও জীবনেও তেমনি লক্ষ্য একটাই বাংলার মানুষের জীবনমান উন্নত করা। বাংলাদেশের দুখী মানুষের মুখে হাসই ফোটানো। আমি যখন বিদেশ থেকে দেশে দেশে ফিরে এসেছি, সারাদেশে ঘুরে দেখেছি, বাংলার মানুষের দুঃখ দুর্দশার চিত্র। বাংলার মানুষের জীবন্মান উন্নত করার জন্যে আমার যদি জীবনও যায় আমি তাও পরোয়া করিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। যেদিন সাধারণ জনগণের জীবন মান উন্নয়ন করতে পারব, সেদিনই নিজেকে সার্থক মনে করব।’

রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্বন্ধে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা ৬১ সালে রুপপুরে জমি নিয়ে রেখেছিল কিন্তু পাকিস্থান শুধু বাংলাদেশের সাথে প্রতারণাই করেছে। পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তাঁরা পাকিস্থানে তৈরি করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই। এর কোনো প্রতিদান চাই না। এই সংবর্ধনার তো আমার দরকার নেই। এই সংবর্ধনা আমি উৎসর্গ করলাম বাংলার জনগণকে, বাংলার সাধারণ মানুষকে।’

মাদক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে বলেন, ‘আমরা মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছি। একটি পরিবার ধ্বংস হলে একটি দেশ ধ্বংস হয়। তাই আমাদেরকে মাদকের বিরুদ্ধে রুখর দ্বাড়াতে হবে।’

স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু সে কতটুকু সময় পেয়েছিল? সে মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিল। এর মধ্যেই তিনি বাংলাদেশকে একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের কথা স্পষ্টভাবে বলা আছে।

এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেকটা গ্রামকে শহরের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করতে চাই। গ্রামে আমরা ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করেছি। আমরা প্রতিটা গ্রামে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শেষে বলেন, ‘আমরা কাজে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই, কারণ তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমার একার পক্ষে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব হতো না।’

প্রধানমন্ত্রীর গণসংবর্ধনার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হয়েছেন লাখ লাখ মানুষ। ঢাকঢোলের আওয়াজ আর স্লোগানে মুখরিত পুরো উদ্যান ও আশেপাশের এলাকা। রাজধানী ও আশপাশের জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত, ভারতের আসানসোলের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি-লিট ডিগ্রি গ্রহণ, মহাকাশে সফলভাবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রেরণ, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি থেকে গ্লোবাল উইমেন্স লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড অর্জন, চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ পুরুস্কারসহ দেশের উন্নয়ন ও অর্জনে অনন্য অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ গণসংবর্ধণা দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *