কোটা সংস্কার আন্দোলনে ম্লান হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের অবদান | বাংলারদর্পন 

নিউজ ডেস্ক: মুক্তিযুদ্ধ’ একটি মাত্র শব্দ আমাদের চেতনা, ভাবানুষঙ্গ, আদর্শ ও জীবন চেতনার সঙ্গে এমনভাবে মিশে আছে, যার বিশদ বর্ণনা করা কষ্টকর। বাঙালির রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে গভীর অর্থ বহন করে তার মূল্য অপরিসীম, অসীম। এই চেতনার সঙ্গে মিশে আছে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাঙালিত্বের বোধ ও জাগরণ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা, সহিষ্ণু সমাজ নির্মাণ, পরধর্মে আস্থা ও শ্রদ্ধা এবং সকল শোষণ-বঞ্চনার অবসানের লক্ষ্যে বাঙালির মানবিক জীবনসাধনা। শুধু মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলে বাকিটা ইতিহাস শতাব্দীকাল টেনে নিয়ে যেতে বাঙালি।

মুক্তিযুদ্ধে তিরিশ লক্ষ মানুষের প্রাণ বিসর্জন, লক্ষ নারীর সম্ভ্রমহানীর করুণ ইতিহাস এই উপমহাদেশে যেকোন ইতিহাসের চেয়ে বেশি আবেগ ও ত্যাগের সংমিশ্রনের ফসল। এই ত্যাগ ও শোক বাঙালির স্মৃতিতে অমলিন থাকবে চিরজীবন। মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির আত্মার সাথে জড়িত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কোনোদিনই ভুলবার নয়।

দেশকে ভালোবেসে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে গিয়েছিলো লক্ষ লক্ষ তরুণ, যুবক, মধ্য বয়সী, বৃদ্ধ নারী-পুরুষ মুক্তিযোদ্ধারা। তবে সে সময়ও অসংখ্য তরুণ যুদ্ধে না গিয়ে মাথা নিচু করে কোন রকমে প্রাণ বাঁচিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের জন্য বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালেই কোটা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যারা অধিক সংখ্যায় অংশ নিয়েছিল বা আত্মাহুতি দিয়েছিল, তাদের উত্তরসূরীদের অনেকে আজও দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারেননি। এখনো মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানদের রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের খবর আসে। তারা সহ অন্যদের নাতি-নাতনিকে সুযোগটা দিলে অন্তত মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারীদের সংখ্যা একদিনে নিঃশেষের পর্যায়ে চলে যাবে না। তাই মুক্তিযোদ্ধার কোটা সংস্কারের আগেই কতিপয় বিষয় আবারো বিবেচনায় আনতে হবে। আগে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার নির্মূল আবশ্যক। সেটা থামাতে না পারায় অন্যদের মনে বেদনা বাড়ছে।

শেখ হাসিনা সরকারের আমলে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করা হয়েছে। কেননা, আগের আমলগুলোতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তেমন কিছু করা হয়নি। কৃতজ্ঞ জাতি তাই তাদের ত্রাতাদের কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে চেয়েছিল। আজকে যারা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে উপহাস করে, তারা প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশকে নিয়ে উপহাস করছে। বাংলাদেশকে যারা স্বীকার করে, বাংলাদেশের অস্তিত্বকে যারা স্বীকার করে তাদের অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান এবং তাদের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে হবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বাংলাদেশ বিচ্যুত না হয়, সেজন্য অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত যাদের গায়ে বইছে তাদের বঞ্চিত করাটা সমীচিন হবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *