মাটিরাঙ্গায় ভুয়া ও জাল দলিলের মাধ্যমে ভুমি জবর দখলের অভিযোগ |বাংলারদর্পন 

খাগড়াছড়ি (মাটিরাঙ্গা) প্রতিনিধি :

 

পার্বত্য খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় জনৈক আবদুল হান্নানের বিরুদ্ধে রেকর্ডভুক্ত টিলা ভুমি ভুয়া ও জাল দলিলের মাধ্যমে জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে। মাটিরাঙ্গার ১৯১নং তাইন্দং মৌজায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়ে কোন ধরনের আইনী সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 

জানা গেছে, মাটিরাঙ্গার তাইন্দং ইউনিয়নের ১৯১নং তাইন্দং মৌজায় জনৈক মো: আলী মিয়ার নামে কবুলিয়ত সুত্রে রেকর্ডভুক্ত (বর্তমানে তার ওয়ারিশদের নামে উত্তোরাধিকার সুত্রে নামজারিকৃত) ৭৩নং হোল্ডিংয়ে ৫ একর ও তার ওয়ারিশদের ক্রয়সুত্রে ১২৮নং হোল্ডিংয়ের ৫ একর সহ মোট ১০ একর টিলাভুমিতে সেগুন বাগান সৃজন করেন। কিন্তু প্রভাবশালী মহলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় একই মৌজার জনৈক আব্দুল হান্নান পিতা- মৃত আব্দুর রশিদ ভুয়া ও আঞ্চলিক জাল দলিলের মাধ্যমে উক্ত ভুমি জবর দখলের চেষ্ঠা করেন। এ নিয়ে আলী মিয়ার ওয়ারিশগন বিভিন্ন সময়ে বাঁধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মিথ্যা মামলা ও হয়রানী করে যাচ্ছে। পাশাপাশি তাদেরকে হাট বাজারে-রাস্তায় সময় সুযোগ মত  একা পেলে খুন, জখম কিংবা অপহরণ পূর্বক গুম করে হত্যা করবে, তাদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিবে, এমনকি তাদেরকে মিথ্যা মামলায় জড়াইয়া দেশ ছাড়া করবে মর্মে  হুমকি প্রদান করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন মো: আলী মিয়ার ছেলে মো: সিরাজুল ইসলাম।

 

স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, মো: আব্দুল হান্নান ব্যাক্তিগত ভাবে একজন অসামাজিক, জুলুমবাজ, পরসম্পদ লোভী ও উচ্ছশৃংখল প্রকৃতির মানুষ। সে সামাজিক কোন আইন-কানুনের ধার ধারেনা। স্থানীয় একটি বিশেষ মহলের প্ররোচনায় সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের জমি জবর-দখলের চেষ্ঠা করে আসছে।

 

এবিষয়ে তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মো: হুমায়ূন কবির বলেন, আলী মিয়া, পিতা- মৃত মনছুর আলীর নামে বন্দোবস্তি মামলা নং- ৬৩০৮/১৯৮০-৮১ মূলে ১৯১নং তাইন্দং মৌজায় ৭৩নং হোল্ডিংয়ে ৫.০০ (পাঁচ) একর ৩য় শ্রেণির টিলা ভুমি রেকর্ড আছে। যা পরবর্তীতে তার এক পুত্র ও তিন কণ্যা সন্তানের নামে উত্তোরাধিকার সুত্রে রেকর্ড সংশোধন হয়। একই মৌজার বন্দোবস্তি মামলা নং ৬২৬৯/১৯৮০-৮১ মূলে ৫ একর, নামজারি মামলা নং ১৬৭/মাটি/২০১৩ মুলে ৩ একর ও ২৭৭/মাটি/২০১৩ মুলে ২ একর টিলা ভুমি ক্রেতা মো: সিরাজুল ইসলাম, পিতা- মৃত মো: আলী মিয়ার নামে ক্রয়সূত্রে নামজারির আদেশে রেকর্ড সংশোধন হয়। উক্ত ১০ একর ভুমির খাজনা পরিশোধ পূর্বক বিভিন্ন জাতের ফলজ-বনজ বাগান সৃজন পুর্বক ভোগদখলে বিদ্যমান আছেন।

 

সম্প্রতি আবদুল হান্নানের নির্দেশে তার ছেলে মো: ফারুক হোসেন, ছোট ভাই মনু মিয়া ও গণি মিয়া লোকজন নিয়ে উক্ত ভুমিতে বেআইনীভাবে প্রবেশ করে সেগুন গাছ কেটে নেয়াসহ জবর-দখল করার চেষ্ঠা করলে মালিক পক্ষ বাধা দিলে তারা তাদেরকে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদেরকে হত্যার হুমকি-ধমকি দেয়। এসময় অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। এনিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে একাধিকবার সালিশী বৈঠক হলেও তারা উপস্থিত হয়নি। উল্টো জায়গার মালিকদের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ির বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ফৌ: কা: বি: ১৪৫ ধারায় মামলা করেন। যা এখনো  চলমান রয়েছে।

 

এতেও তারা ক্ষান্ত না হয়ে বিভিন্ন সময়ে বাগানের সৃজিত মুল্যবান বনজ কাঠ কেটে নিয়ে যায়। এ প্রেক্ষিতে মো: আলী মিয়ার ছেলে মো: সিরাজুল ইসলাম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন। এমতাবস্থায় প্রতিপক্ষ আদালতের সমন পাওয়ার পরে ১০ দিনের মধ্যে মামলা উঠাইয়া না নিলে সৃজিত বাগানের সেগুন, গামারী, জাম, কনক ও কড়ইসহ মূল্যবান গাছ কেটে নেয়াসহ তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। এমনকি তাদের বাড়ি-ঘর জ¦ালিয়ে দেয়াসহ মিথ্যা মামলায় জরাইয়া দেশ ছাড়া করারও হুমকি প্রদান করে প্রতিপক্ষ।

 

এবিষয়ে কথা বলার জন্য ভুমিখোকো আবদুল হান্নানের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার চেষ্ঠা করা হলেও সংযোগ না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

তবে মো: আবদুল হান্নানের কাছে জমি বিক্রির কথা অস্বীকার করে মো: আবদুল ছামাদের ছেলে সিলেট সদর উপজেলার ৩নং খাদিমনগর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার আতাউর রহমান শামিম বলেন, তাইন্দংয়ে আমার বাবার জমি আছে শুনেছি তবে আমরা দেখিনি। পাহাড়ের বিরাজমান পরিস্থিতির কারনে আমার মা-বাবা তাইন্দং থেকে ৩৮ বছর আগে সিলেটে এসছে। আমার বাবা বা আমরা আবদুল হান্নানের নিকট কোন জমি বিক্রয় করি নাই। আমার ধারনা আমাদের অবর্তমানে আবদুল হান্নান উক্ত জমির জাল আঞ্চলিক দলিল করেছেন।

 

এবিষয়ে স্থানীয় মৌজা প্রধান প্রভাত কান্তি রোয়াজা জানান, মো: সিরাজুল ইসলামসহ মো: আলী মিয়ার ওয়ারিশগন রেকর্ডমুলে এসব সম্পত্তির মালিক। তারা নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করে জমির ভোগ দখলে আছে। তবে আবদুল হান্নানের কাছে জমির কোন বৈধ কাগজপত্র নেই।

 

অবিলম্ভে ভুমিদস্যু মো: আবদুল হান্নানগংদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী উঠেছে সচেতন মহল থেকে। তাদের মতে ভুমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া না হলে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *