বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প | বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্ক :

একটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে আয়ের খাতগুলোর যেমন যথাযথ তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করতে হয়, তেমনি সম্ভাবনাময় খাতগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্প সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

আমাদের অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় সবচেয়ে বড় খাতের একটি চামড়া শিল্প। শেখ হাসিনা সরকার এই খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে চট্টগ্রাম এবং রাজশাহী বিভাগে আরো দুটি চামড়া শিল্পাঞ্চল গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চামড়া শিল্প খাতের সামগ্রিক বিকাশের জন্য ইতোমধ্যে সাভারে পরিবেশসম্মত চামড়া শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়েছে।

বর্তমানে রপ্তানি খাতে চামড়ার অবদান ৯ শতাংশেরও বেশি। চামড়া খাতের উন্নয়নের জন্য এই খাতে ১৫ শতাংশ নগদ সহায়তা আগামী ৫ বছর অব্যাহত রাখার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার জন্য বেসরকারি খাত সহযোগে একটি টেস্টিং ও ক্যালিব্রেশন সেন্টার স্থাপনেরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আয়কর রেয়াত ও ওয়েট ব্লু লেদার ছাড়া চামড়া খাতে এফওবি রপ্তানি মূল্যের ওপর ১০০ ভাগ এক্সপোর্ট পারফরম্যান্স লাইসেন্স সুবিধা দেয়া হচ্ছে যাতে রপ্তানি আরও সহজ করা যায়।

বর্তমানে চামড়া খাতে ২ লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। ২০১৭ সালে চামড়া রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮ম। ২০১৭ সালে চামড়া খাতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল ১২৩ কোটি বা ১.২৩ বিলিয়ন ডলার। অথচ এই খাতে ২০১২ সালে রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ৫৮ কোটি ডলার।

চামড়ার ১৫৯টি ট্যানারী সাভারে স্থানান্তর ও অবকাঠামো নির্মাণজনিত জটিলতা থাকা সত্বেও চলতি ২০১৮ সালে চামড়া রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ১৩৮ কোটি বা ১.৩৮ বিলিয়ন ডলার অর্জিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৮৪কোটি ৮৭ লক্ষ ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে।

তবে কারখানা অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে চামড়া পণ্য রপ্তানি আরো বৃদ্ধি পাবে। চামড়া খাত থেকে আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার।

বুড়িগঙ্গা নদীর দূষণ রোধকল্পে এবং আবাসিক এলাকার পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ২০১৭ সালে সরকার চামড়া শিল্প হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করেছে সরকার।

আধুনিক বর্জ্য শোধনাগার ব্যবস্থা সম্বলিত ১২৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ বর্তমানে শেষ পর্যায়ে। সাভারে নতুন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে পরিবেশ দূষণ রোধ হবার পাশাপাশি বিদেশে গুণগত মানের চামড়া রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গার্মেন্টসের মতো আমাদের দেশে এখন চামড়া খাতের ব্যবসা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপুল সম্ভাবনাও আছে এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার। ইউরোপের সবচেয়ে বড় জুতা বিক্রেতা ডাচম্যান বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত জুতা আমদানি শুরু করেছে। এছাড়াও চীনের বাণিজ্য নীতির পরিবর্তনের ফলে চামড়া শিল্পে নতুন আশার হাতছানি দেখতে পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তাদের বিশ্বাস চীন এ খাত থেকে নজর সরিয়ে নেয়ায় বাংলাদেশই হতে চলেছে চামড়া শিল্পের বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের পরবর্তী গন্তব্য।

ক্ষমতাসীন সরকার চামড়া খাতের উন্নয়নে যে ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে আগামী ৫ বছর তা ধরে রাখতে পারলে চামড়া শিল্পে বাংলাদেশ নিশ্চিত ভাবেই সারা বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে থাকবে এবং এই খাত থেকে রপ্তানি আয় বিপুল পরিমানে বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্ট অনেক বিশেষজ্ঞ মত দিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *