জঙ্গি মদদদাতা হাসান আরিফ | বাংলারদর্পন

নিউজ ডেস্ক :

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার সাজার বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস আইনের সর্বশেষ সংশোধনী আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলে মত দিয়েছিলেন এমিকাস কিউরি সাবেক এটর্নি জেনারেল ও জরুরি অবস্থাকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আইন উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।

এ এফ হাসান আরিফ এমিকাস কিউরির অভিমতে বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সর্বশেষ সংশোধনী আবদুল কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ২০১৩ এর ৫ ফেব্রুয়ারিতে ট্রাইব্যুনাল আবদুল কাদের মোল্লার মামলার রায় ঘোষণা করেছেন। ওই দিন তার শাস্তি চূড়ান্ত হয়। এরপর আনা সংশোধনী তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। উপরের আলোচনা থেকে আসলে কি প্রতীয়মান হয়? একজন যুদ্ধাপরাধীকে বাঁচাতে কেন এত তোড়জোড় ছিল হাসান আরিফের?

জামায়াতের স্বঘোষিত অংশীদার হাসান আরিফের সাম্প্রতিক জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা তাই খুব বেশি অবাক করা বিষয় না। কেননা, হাসান আরিফের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড অনেকটাই জঙ্গি মতাদর্শের। প্রসঙ্গত, ২০১৩ এর ৫ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ছয়টি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে তাকে যাবজ্জীবন, তিনটিতে ১৫ বছর করে কারাদণ্ড এবং একটিতে খালাস দেয়া হয়। এ রায়ের প্রতিবাদে শাহবাগে শুরু হয় আন্দোলন। শুনানিতে অংশ নিয়ে আইনের সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মত দেন সংখ্যাগরিষ্ঠ এমিকাস কিউরি। এমিকাস কিউরিদের মধ্যে ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি মত দেন যে, আইনের সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। অন্যদিকে, সাবেক বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী টি এইচ খান ও এ এফ হাসান আরিফের মত ছিল- সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

উল্লেখ্য ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর ধানমন্ডি ও গুলশানের দুটি শাখাসহ খালেদ হাসান মতিনের প্রতিষ্ঠা করা লেকহেড স্কুলের সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সালমা জাহানের সই করা চিঠিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারের অনুমোদন নেয়নি। এ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধর্মীয় উগ্রবাদ, উগ্রবাদী সংগঠন সৃষ্টি, জঙ্গি কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতাসহ স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যুক্ত বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তীতে জামায়াতপন্থী আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ জঙ্গিবাদের অভিযোগে বন্ধ করে দেওয়া স্কুল খুলে দেওয়ার জন্য হাইকোর্টে রিট করেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপপুলিশ কমিশনার মো. শহিদুল্লাহ চৌধুরী জানিয়েছেন, লেকহেড গ্রামার স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা কারাবন্দি খালেদ হাসান মতিন অনৈতিকভাবে অর্থ আয়ের সঙ্গে জড়িত। অবৈধভাবে অর্জিত টাকা জঙ্গি অর্থায়নে ব্যবহার করা হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। ২০০৬ সালে ধানমন্ডির ৬/এ সড়কে প্রতিষ্ঠিত হওয়া লেকহেড গ্রামার স্কুলের বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতায় ইন্ধন দেয়ার অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন ধরেই। স্কুলের বনানী ও গুলশানে আরো দুটি শাখা রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালীন এই স্কুলের অধ্যক্ষ ছিলেন জেনিফার আহমেদ, যিনি বাংলাদেশে হিযবুত তাহরীর সংগঠিত করার অন্যতম প্রধান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম মাওলার স্ত্রী। এরপর ২০০৯ সালে হিযবুত তাহরীর নিষিদ্ধ হওয়ার পর এই স্কুল প্রথম আলোচনায় আসে। ওই বছরই এই স্কুল পরিচালনার পূর্ণ দায়িত্ব নেন হারুন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের কর্ণধার হারুন অর রশিদ ও তার ছেলে মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গি হিসেবে পরিচিত রেজওয়ান হারুন। হারুন বেশির ভাগ সময় লন্ডনে থাকলেও গত বছরের ১১ মে সকালে যুক্তরাজ্য থেকে আসা এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে ঢুকে আত্মগোপন করেন।

সূত্রমতে, রেজওয়ানের লেকহেড গ্রামার স্কুলে আলোচিত যুক্তরাষ্ট্রগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ উড়িয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া রাজীব করিম, তার ভাই তেহজিম করিম ও তেহজিবের স্ত্রী সিরাত করিম এবং তাদের সহযোগী মাইনুদ্দিন শরীফ শিক্ষক ছিলেন। ২০১০ সালে ইয়মেনে আল-কায়েদাবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তেহজিব করিম। এ ছাড়া পরিবারসহ সিরিয়ায় চলে যাওয়া মাইনুদ্দিনের ভাই রেজওয়ান শরীফও লেকহেডের শিক্ষক ছিলেন। আর বিতর্কিত এই স্কুলের পৃষ্ঠপোষক ও আইনজীবী হিসেবে প্রমাণিত হয় হাসান আরিফের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করা জামায়াতের রাজনীতি করা হাসান আরিফ এবার জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত হয়েছেন। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অতীতে দেশের আদালতকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছিলেন আর এখন নেমেছেন দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তাকে প্রশবিদ্ধ করতে। কিন্তু আগেই ধরা খেয়ে গেলেন কখনো রাজনীতিবিদ কখনো আইনবিদ এই ছদ্মবেশী কুশীলব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *